আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গাজায় সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) গৃহীত এ প্রস্তাবকে ‘বিকৃত তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। ১৩টি ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ ছয়টি দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
প্রস্তাবে ‘দায়মুক্তির অবসানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
এতে ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এই প্রস্তাব জয়যুক্ত হলেও তা মানতে কোনো দেশ বাধ্য নয়। তবে এ ধরনের প্রস্তাব ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ জোরদার করবে বলে ধারণা করা যায়।
জেনেভায় জাতিসংঘে ইসরায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি মিরাভ ইলন শাহার, কাউন্সিলকে ‘দীর্ঘদিন ইসরায়েলি জনগণকে পরিত্যাগ করা এবং হামাসকে দীর্ঘকাল ধরে রক্ষা করার’ অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের তার জনগণকে রক্ষা করার কোনো অধিকার নেই। অন্যদিকে হামাসের নিরপরাধ ইসরায়েলিদের হত্যা ও নির্যাতন করার অধিকার রয়েছে। হ্যাঁ ভোট হল হামাসের পক্ষে ভোট।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেজুলেশনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কারণ এতে ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য হামাসের নিন্দা বা সেই কর্মের সন্ত্রাসী প্রকৃতির কোন উল্লেখ ছিল না। এটি অবশ্য বলেছে যে তার মিত্র ইসরায়েল বেসামরিক লোকদের ক্ষতি কমানোর জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিষদের স্থায়ী প্রতিনিধি মাইকেল টেলর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছে ইসরায়েল যেন বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯১ জন আহত হয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ২৪ হাজারের বেশি। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৯২২টি গণহত্যা চালিয়েছে। আর এর জেরে গাজায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৯ হাজার ৫৬০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন।
মিডিয়া অফিস আরও বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া গাজায় ১৭ হাজার শিশু তাদের পিতামাতা বা উভয়ের যেকোনও একজন ছাড়াই বসবাস করছে।
গাজার অনাহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিডিয়া অফিস বলেছে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ৪৮৪ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, ১৪০ জন সাংবাদিক এবং ৬৫ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মীও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
গুরুতর অসুস্থ এবং বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন এমন আহতদের সংখ্যা ১১ হাজার এবং ১০ হাজার ক্যান্সার রোগী অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী ৩১০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ১২ জন সাংবাদিককে আটক করেছে এবং গাজা উপত্যকায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও ২ লাখ ৯০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে ২৯৭টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও জানিয়েছে মিডিয়া অফিস। এর মধ্যে ২২৯টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তিনটি গির্জায়ও তারা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।