স্পোর্টস ডেস্ক :
ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা পোশাকের মতোই রঙিন। বিপরীতে টেস্টে সেটি ধূসর সাদা! এর আগে কিউইদের সঙ্গে ১৭ টেস্টে টাইগাররা মাত্র একটিতে জিতেছিল। তাও আবার সেটি তাদের মাঠ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে একাধিকবার ওয়ানডেতে ধবলধোলাইয়ের অভিজ্ঞতা ছিল বাংলাদেশের। টেস্টেও তেমনটা আশা করা কঠিন, শান্ত-তাইজুলরা অন্তত খরা ঘুচিয়ে ঘরের মাঠে ইতিহাসের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে সিলেটের লাক্কাতুরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসতে খুব বেশি সময় লাগলো না। প্রথমে বড় বাধা হয়ে থাকা ড্যারিল মিচেলকে ফেরালেন নাইম হাসান। এরপর টিম সাউদিকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূরণ করেন তাইজুল ইসলাম। শেষ উইকেট হিসেবে ইশ সোধিকে ফিরিয়ে দিয়ে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের ব্যবধানে হারানোর ঐতিহাসিক ক্ষণের জন্ম দিলো বাংলাদেশ। এদিকে এই জয়ে ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রের পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে টেস্টে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর বড় দলকে হারানোর অভিজ্ঞতা হয়েছিলো গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। ঘরের মাঠে ২০১৭ সালের পর এই প্রথম বড় কোনো দলের বিপক্ষে টেস্টে জয় পেলো বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংস শেষে নিউজিল্যান্ডকে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। স্পিনারদের তোপের মু্খে খেই হারিয়ে ১৮১ রানেই গুটিয়ে গেছে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস। তাইজুল ইসলাম শিকার করেছেন ৬ উইকেট। ফলে ১৫০ রানের জয় পেয়েছে টাইগাররা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করেছিল বাংলাদেশ। ওই ইনিংসে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। অধিনায়ক নাজমুুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হক করেন ৩৭ রান করে। শেষ দিকে উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান খেলেছেন ২৯ রানের ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ থেকে ৭ রান এগিয়ে ৩১৭ রানে গিয়ে থামে সফরকারীদের প্রথম ইনিংস। ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন কেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেল করেছেন ৪১ রান। গ্লেন ফিলিপস খেলেছেন ৪২ রানের ইনিংস। শেষদিকে নেমে কিউইদের স্কোরবোর্ডে ৩৫ রান যোগ করেন টিম সাউদি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ। শান্ত করেছেন ১৯৮ বলে ১০৫ রান। মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ হাঁকিয়েছেন ফিফটি। ১১৬ বলে ৬৭ রান করেছেন মুশফিক। ৫০ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। এছাড়া অভিজ্ঞ মুমিনুল হক খেলেছেন ৪০ রানের ইনিংস।
৩৩২ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় খেলতে নেমে ১৮১ রানের অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। কিউইদের হয়ে একমাত্র ফিফটি হাঁকান ড্যারিল মিচেল। ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন এই কিউই ব্যাটার। শেষ দিকে ৩৪ রান করেন টিম সাউদি। ডেভন কনওয়ে ও ইশ সোধি করেছেন ২২ রান করে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট রান হয়েছে ৬৪৮ রান। অপরদিকে দুই ইনিংসে কিউইরা করেছে ৪৯৮ রান। ফলে ১৫০ রানে জয় পায় টাইগাররা।
বাংলাদেশের হয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট (৪+৬) শিকার করেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক তুলে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট পাননি। মিরাজ মোট পেয়েছেন ২ উইকেট (১+১)। নাইম হাসান মোট ৩ উইকেট (১+২) ও শরিফুল মোট ২ উইকেট (১+১) পেয়েছেন।
কিউইদের হয়ে অ্যাজাজ প্যাটেল ৬ উইকেট (২+৪) শিকার করেছেন। গ্লেন ফিলিপস ৫ উইকেট (৪+১), ইশ সোধি মোট ৩ (২+১), টিম সাউদি মোট ২ (১+১) ও কাইল জেমিসন মোট ২ (২+০) উইকেট শিকার করেছেন।
২০২৩-২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে রয়েছে পাকিস্তান। যেখানে দ্বিতীয় থাকা বাংলাদেশের পয়েন্ট ১২। আর এ দুই দল এখন পর্যন্ত শতভাগ পয়েন্ট রয়েছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রের এ পর্যন্ত দুইটি ম্যাচ খেলেছে ম্যান ইন গ্রিনরা যার দুইটিতে জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচ খেলে একটিতেই জয় তুলে নিয়েছেন। যেখানে পয়েন্ট টেবিল অবশ্য সাজানো হয় পয়েন্ট অর্জনের শতকরা হিসেবে। সেখানে শান্তদের ও বাবরদের নামের পাশেই জ্বলজ্বল করছে শতভাগ।
এই টেবিলে আসর শুরু করা বাকি সব দলই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে, যারা পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের নিচে। দুইবারের ফাইনালিস্ট ভারত তৃতীয়, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে। এছাড়া ইংল্যান্ড ৬ষ্ঠ ও শ্রীলঙ্কা আছে ৭ম স্থানে। এখন পর্যন্ত পয়েন্টশূন্য নিউজিল্যান্ড ৮ম স্থানে রয়েছে আর ৯ম স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও তৃতীয় চক্র শুরু করেনি।
এদিকে ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে এ নিয়ে ৭ম টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। যেখানে ৩ হার ও ৩ ড্রয়ের পর নিউজিল্যান্ডদের বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। আর তাতে দারুণ অবদান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। কিউইদের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০ উইকেট নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। ২০১৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো তাইজুল ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই সিলেটেই!