স্পোর্টস ডেস্ক :
শুরু থেকে শেষ অবধি এই ম্যাচে ছিল বাংলাদেশের একচেটিয়া দাপট। মিরপুরে পরিকল্পনা মতো জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্টে স্বাগতিকদের ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্যের পর আফগানদের প্রতিরোধ দ্রুত ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আগের দিন দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর চতুর্থ দিন সকালে প্রথম ঘণ্টাতেই ৩ উইকেট নিয়ে জয় তরান্বিত করেছেন এবাদত, শরিফুল। শরিফুল জোড়া আঘাতে আফগানদের চেপে ধরেন। তাসকিনও উইকেট উৎসবে যোগ দিলে প্রথম সেশনে ১১৫ রানেই শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস। শেষ উইকেটে জহির রিটায়ার্ড হলে আফগানদের ইনিংস সমাপ্ত হয়েছে সেখানেই। তাতে ৫৪৬ রানের রেকর্ড গড়া জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এটি রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়। শুধু কি তাই? ৮৯ বছরের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটেও এটি সব চেয়ে বড় জয়। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসেবে এর চেয়ে বড় জয় আছে দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭৫ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭৫ রানে জেতে ইংল্যান্ড। ছয় বছর পর ইংল্যান্ডকে ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়াও ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়েছে। এরপর রানের ব্যবধানে তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় জয় এটি। বাংলাদেশেরও রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। অবশ্য ৩৩ ওভারে তিনি পাঁচ উইকেটও পেতে পারতেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না তার। তাছাড়া ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। একটি করে নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও এবাদত হোসেন। অবশ্য পেসাররা মিলে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন। পুরো ম্যাচে পেসারদের শিকার ছিল ১৪ উইকেট। এক ম্যাচে বাংলাদেশি পেসারদের যা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের নজির। সর্বশেষ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর পেসাররা মিলে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন।
লাঞ্চ বিরতির আগে ম্যাচটা শেষ করার জন্য প্রথম সেশনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট বেশি খেলানো হলো। সে অনুসারে ম্যাচটাও প্রায় শেষ করে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। ৩৩তম ওভারে তার করা চতুর্থ বলটি ফুলটস ছিল। সেই বল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয় আফগান ব্যাটার জহির খানের।
কিন্তু বলটি যখন ব্যাটারকে অতিক্রম করছিলো, তখন সেটি ছিল ব্যাটারের কোমরের ওপরে। যে কারণে আম্পায়ার বলটিকে নো ডাকেন। বেঁচে যান জহির খান। বাংলাদেশের বিজয়ও বিলম্বিত হলো। ওই ওভার শেষেই লাঞ্চ বিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আফগানিস্তান জানিয়ে দেয়, তাদের ব্যাটার জহির খান আহত। আর ব্যাট করতে নামতে পারবেন না। অর্থ্যাৎ ১১৫ রানেই শেষ আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংস এবং বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
তবে লসটা হলো তাসকিনের। তার নামের পাশে ফাইফার শোভা পেতো; কিন্তু নো বলের কারণে সেটা আর হলো না। আবার আফগান ব্যাটার জহির খান আউট হওয়ায় ৫ম উইকেট নেয়ারও আর সুযোগ পেলেন না তিনি।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪৬ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ৩৮২ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। ২৩৬ রান এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে।
নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাক টু ব্যাক এবং অভিজ্ঞ মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। ৬৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন, শরিফুলের আগুনে বোলিংয়ের সামনে মাত্র ১১৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় আফগানরা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারলো মাত্র ২৬১ রান।
তৃতীয় দিন শেষে আফগানিস্তানের সামনে ৬৬১ রানের লিড নেয়ার পরই পরিস্কার হয়ে যায় ম্যাচের ফল কী হতে যাচ্ছে। শুধু অপেক্ষা ছিল, আফগানরা দ্বিতীয় ইনিংসে কত রান করে এবং কত ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ।
তৃতীয়দিন শেষ বিকেলে জয়ের জন্য ৬৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই উইকেট হারায় আফগানরা। তবুও তৃতীয় দিন শেষে আফগান কোচ আশা প্রকাশ করেন, পরের দুদিন টানা ব্যাট করতে চান তারা।
কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হলেন আফগান ব্যাটাররা। একের পর এক উইকেট হারিয়েছেন তারা।
দিনের তৃতীয় ওভারেই এবাদত হোসেনের অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে লেন্থ বলটি ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বসেন ব্যাটার নাসির জামাল। উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে সেই ক্যাচ ধরতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি।
৪৮ রানে পড়ে আফগানদের তৃতীয় উইকেট। এর আগে তৃতীয়দিন শেষ বিকেলে রানের খাতা খোলার আগেই ইবরাহিম জাদরান, ৭ রানের মাথায় আবদুল মালিক আউট হন। ২৬ রানের মাথায় মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি। আজ তার কনকাশন হিসেবে একাদশে নেয়া হয়েছে বাহির শাহকে। তিনিই নামেন ব্যাট করতে।
এবাদত হোসেনের পর আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। মিডল অর্ডার আফসার জাজাই মাঠে নেমে থিতু হওয়ার আগেই শরিফুলের বলে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। ৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।
হাশমত উল্লাহ শহিদির পরিবর্তে কনকাসন হিসেবে নামা বাহির শাহ ব্যাট করতে নামেন এরপর। কিন্তু তিনিও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ১৩ বলে ৭ রান করে স্লিপে তাইজুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। ৭৮ রানের মাথায় পড়লো ৫ম উইকেট।
এরপর ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারান রহমত শাহ (৩০), করিম জানাত (১৮), আমির হামজা (৫), ইয়ামিন আহমদজাই (১) এবং জহির খান (৪)। রহমত শাহই বাংলাদেশের বোলারদের সামনে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়ান। কিন্তু ৭৩ বল খেলে ৩০ রান করার পর তাসকিনের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন করিম জানাত। তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। আফগানদের মিডল অর্ডার এবং লেট অর্ডারে বড় আঘাতটি হানেন তাসকিনই। ৯ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন দিনি। শরিফুল নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং এবাদত হোসেন।
উদযাপনে কমতি হলেও বাংলাদেশের এই ম্যাচের প্রাপ্তিতে সেটি ছিল না একদমই। দুই ইনিংস পর নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২৬ ইনিংস পর মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি অথবা দুই ইনিংসে যথাক্রমে এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদের চার উইকেট। এই টেস্টটি হয়তো মনে থাকবে লিটন দাসের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচ অথবা সাদা পোশাকে একটু সম্ভাবনার উঁকি দেওয়ার জন্যও।