স্পোর্টস ডেস্ক :
২০১০ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠেই বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেনের পুরুষ ফুটবল দল। ১৩ বছর পর প্রথমবার ফাইনাল খেলেই বিশ্বকাপ জিতল স্পেনের নারী ফুটবল দল। তবে স্পেনের ছেলেদের দল ফাইনালে উঠেছিল ১৩ তম চেষ্টায়, আর তাঁদের মেয়েরা জিতে গেল তৃতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই। পার্থক্য তো আরও আছে। ২০১০ সালে স্প্যানিশরা বিশ্বকাপ না জিতলেই সবাই অবাক হতেন। আর এবার মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাব্যদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতে ছিল না স্পেনের নাম।
প্রতিশোধের জন্য বোধকরি এর চেয়ে ভালো মঞ্চ ছিল না স্পেনের জন্য। এক বছর আগে এই ‘লা রোহা’দের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় করেছিল ইংল্যান্ড। এবার বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেন তার শোধ নিল স্পেনের মেয়েরা। দুই দলের প্রথমবারের ফাইনালে জয় পেয়েছে ‘লা রোহা’রা। সেরিনা ওয়েগম্যানের শিষ্যদের তারা হারিয়েছে ১-০ গোলে। আর এতে নারী বিশ্বকাপ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।
এক মাসের লম্বা টুর্নামেন্টের পর আজ অল-ইউরোপিয়ান ফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হয় বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা উপহার দিলেও ফাইনালে এসে যেন বোতলবন্দি হয়ে ছিল এলা টনি আর লরেন হ্যাম্পরা। বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল দিয়ে পূর্ণ সুবিধা আদায় করে নিয়েছে স্পেন।
গেল বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ঘরে তোলা ইংল্যান্ডকেই ফাইনালে ফেভারিট মনে করা হচ্ছিল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশরা ম্যাচের ১৬ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারতো। ১৫ গজ দূর থেকে ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড লরেন হেম্পের শট ক্রসবারে লাগে। তবে ভাগ্য সহায় থাকায় বেঁচে যায় স্প্যানিশরা।
অধিনায়ক ওলগা কারমোনার ২৯ মিনিটের গোলটা নতুন চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে স্পেনকে। বাম প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠে আসেন বার্সেলোনা তারকা মারিওনা কালদেন্তি। ডি-বক্সের ঠিক আগেই পাস দিয়েছেন লেফটব্যাক থেকে ওভারল্যাপ করে আসা অধিনায়ক ওলগাকে। বাম পায়ের কোণাকুনি শটে ইংলিশ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ফুটবলার (১-০)।
গোল দেওয়ার পর আরও বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিতে শুরু করে স্পেন। বল পজিশন ধরে রেখে আরও একাধিকবার আক্রমণে ওঠে তারা। যদিও ফিনিশিং দুর্বলতায় প্রথমার্ধে আর গোল পাওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জার্মানি ও জাপানের পর পঞ্চম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতল স্পেন। কারমোনার গোলের আগে প্রাধান্য ছিল ইংল্যান্ডের। ইংলিশ ফরোয়ার্ড লরেন হেম্পকে পঞ্চম মিনিটে স্প্যানিশ গোলরক্ষক কাতা কোলের ও ১৬ মিনিটে ক্রসবারের বাধায় গোল পাননি।
এর ১৩ মিনিট পর কারমোনার ওই গোল। পাল্টা এক আক্রমণ থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে বাঁ দিতে আগুয়ান লেফট ব্যাক কারমোনাকে ক্রস দেন ফরোয়ার্ড মারিওনা কালদেন্তি। কিছুটা এগিয়ে ইংল্যান্ডের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের নিচু শটে ইংলিশ গোলরক্ষকে বাঁ পাশ দিয়ে বলটাকে জালে পাঠান সেমিফাইনালেও গোল পাওয়া কারমোনা।
এরপর একবার পেনাল্টি পেয়েও ব্যবধানটাকে দ্বিগুণ করতে পারেনি স্পেন। হেনি হেরমোসোর দুর্বল শট ধরে ফেলেন ইংলিশ গোলরক্ষক মেরি ইয়ার্পস।
কিন্তু ম্যাচ শেষে এবারের বিশ্বকাপে হেরমোসোর দ্বিতীয় পেনাল্টি মিস কে মনে রাখতে গেছে। গ্রুপ পর্বে যে জাপানের আছে ৪-০ গোলে হেরেছিল স্প্যানিশরা সেটিই বা কে মনে করবে ভবিষ্যতে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা হলো অতিরিক্ত আরও ১৩ মিনিট। তবে সেই ১৩ মিনিটেও শেষ বাঁশি বাজেনি। খেলা চলেছে মোট ১৫ মিনিট। আর শেষ বাঁশি যখন বাজল স্পেনের অপেক্ষার অবসান ঘটল তখন। ডাগআউট থেকে মাঠে ছুটে গেলেন বেঞ্চের খেলোয়াড়রা। সতীর্থদের সঙ্গে তারা মেতে উঠলেন আনন্দ উৎসবে। স্বপ্নের পথচলায় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতল স্পেন।