নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফরিদপুর শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে কুমার নদ। এর ওপর ছিল আলিমুজ্জামান সেতু। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তা ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর সেটি সংস্কার করে বানানো হয় আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজ। যান চলাচল বন্ধ করে খুলে দেওয়া হয় হাঁটাপথ হিসেবে। সেই থেকে দাবি ছিল সেতুটি যেন পুননির্মাণ করা হয়। কিন্তু তা আর হয়নি। বরং, দুই দফায় এটি মেরামত করে জন চলাচলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। আরও একবার ব্রিজটি মেরামত করা হচ্ছে। তা-ও আবার রমজানের শুরুতে। এ কারণে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী। যাতায়াত করতে হচ্ছে আধা কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে।
মুজিব সড়কে স্থাপিত আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজের এক প্রান্তে ফরিদপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অন্য প্রান্তে নিউ মার্কেট ও তিতুমীর বাজার। কিন্তু সড়কটি দিয়ে চলার উপায় নেই পণ্যবাহী কোনো যানের। ঘুরে যাতায়াত করতে হয় ডান ও বামের আধা কিলোমিটার দূর দিয়ে। এতে সময় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে সদা। পোহাতে হয় নিত্য যানজটের নিদারুণ দুর্ভোগ। এরপরও সড়কটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সেতু নির্মাণ না করে সংস্কার করা হচ্ছে বেইলি ব্রিজটি। এ অবস্থায় শহরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি একটি সেতু কবে হবে সেই প্রশ্ন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জনগণের স্বার্থেই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আরও কয়েকদিন চলবে এ কাজ। ফলে এই কয়েকদিন শহরবাসীকে যাতায়াতে একটু সমস্যা পোহাতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরবাসীর নিত্যদিনের যাতায়াতের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এই ব্রিজটি ১৯৩৫ সালে নির্মিত হয়। তৎকালীন জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান চৌধুরী কুমার নদের ওপর প্রথম এই সেতু নির্মাণ করেন। লোহার পিলারের ওপর পাথরের ঢালাইয়ের এই সেতুটি ১৯৮৮ সালের বন্যায় ধসে যায়।
কুমার নদের ওপরে মুজিব সড়কে স্থাপিত ব্রিজটির এক প্রান্তে ফরিদপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অন্য প্রান্তে নিউমার্কেট ও তিতুমীর বাজার এলাকা। শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত কুমার নদের এই ব্রিজ দিয়ে একসময় যান ও মানুষ চলাচল করলেও ৮৮ এর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। এরপর শুধু পায়ে হেঁটেই চলাচল হচ্ছে ব্রিজটি দিয়ে। সেখানে আবার একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পর ২০১২ সালে তা দুর্ঘটনায় ধসে যায়।
এরপর ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমার নদের ওপর ৯১ মিটার দৈর্ঘ্যের আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজ সংস্কার করে মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করে। শহরের মানুষ প্রয়োজনে এই পথে চলাচল করে।
সাধারণ বাসিন্দাদের দাবি, বেইলি ব্রিজটি অপসারণ করে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমার নদের এই বেইলি ব্রিজে চলাচল বন্ধ করে সেখানে মেরামত কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বুধবার থেকে শুরু হয় মেরামত কাজ। কাজ শেষ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ব্রিজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে বিকল্প হিসেবে নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে। আবার কেউবা ঝুঁকি মাথায় রেখে হেঁটে পাড় হচ্ছেন ব্রিজটি। শহরের মানুষ সাধারণত হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে যেতে আলীপুর-গোয়ালচামট পথে আলীমুজ্জামান বড় ব্রিজ কিংবা পূর্ব খাবাসপুর-রথখোলা পথের জোড়া ব্রিজ ব্যবহার করেন।
শহরের ঝিলটুলীর বাসিন্দা মোজাম্মেল হক মিঠু বলেন, ব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় বাজারে যেতে আমাদের অনেক পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। আর শহরের মধ্যে একমাত্র মাছ বাজারটি হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারেই।
শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা শামীম হোসেন ও মুন্সিবাজারের সোহেল আহমেদ বলেন, ফরিদপুরের এই বেইলি ব্রিজ তুলে সেখানে স্থায়ীভাবে পাকা ব্রিজ করা হলে শুধু চলাচলেরই সুবিধা হবে না, বরং হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে প্রবেশমুখ হতে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ভাঙা রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কে যানজট নিরসন হবে।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, বেইল ব্রিজটি সরিয়ে সেখানে বড় ব্রিজ করে ওয়ানওয়ে করে দেওয়া উচিত। এতে করে র্যাফেলস ইন মোড় থেকে জনতা ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত হবে এবং মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, ব্রিজটির প্যানেলে জং পড়ে গেছে। এ ছাড়া আরও কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। মেরামত শেষ হতে চার থেকে পাঁচদিন লাগতে পারে। তবে এ সড়কে সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আরও আগেই বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রিজ বানানো যাচ্ছে না।