Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, ক্ষমতার লোভ করি না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। ক্ষমতার লোভ করি না, জনগণের স্বপ্ন বেচি না।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর কাওলায় আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেও ক্ষমতায় যেতে পারিনি। সে নির্বাচনে খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। আমাকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম-আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। ক্ষমতার লোভ করি না, জনগণের স্বপ্ন বেচি না।

শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষ ভোটচোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না, তাই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগই নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে আবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। এ দেশের মানুষ কখনো ভোটচোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। সেই আন্দোলন আপনারা চালিয়েছেন।

Untitled-1

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ দেশের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। বিএনপি ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিল। সেই ভুয়া ভোটার সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছি। আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি।

খালেদা জিয়া কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। আর আল বদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়াও বসিয়েছিল, খালেদা জিয়াও। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই। তারা সেটা করতেও চায় না। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। দেশের মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না বিএনপি।

শেখ হাসিনা বলেন, অনশনের নামে নাটক করছে বিএনপি। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। (তারা) এই নাটকই করে যাচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা প্রশ্ন বিএনপি নেতাদের কাছে, তার (তারেক রহমান) মা এত অসুস্থ, আপনারা অনশন করেন। ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না? এটা কেমন ছেলে? মা এত অসুস্থ মরে মরে। শুনছি বিএনপির লোকজন বলছে, সে (খালেদা জিয়া) নাকি যখন তখন মরে যাবে, আর তাছাড়া বয়সও তো হয়েছে তার। হ্যাঁ, বয়সও হয়েছে আর অসুস্থও বটে। তা মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলবো- মাকে দেখতে আসুক।

তিনি বলেন, তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা… যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বক্তৃতা দিয়েছে, তারপরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আমি তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

Capture

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানি করেছে। বলেছিল, গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলবে। কি হয়েছে? জয় বাংলা স্লোগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস মুছতে চাইলেই মুছে ফেলা যায় না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আরেক ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) মারা গেল। তার বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা ছিল। সে মালয়েশিয়া মারা যায়। তার লাশ আসে। আমি একজন মা। আমারও সন্তান আছে। আমি খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাতে গিয়েছিলাম। আমার মিলিটারি সেক্রেটারি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সময় ঠিক করে। কিন্তু আমি যখন সেই বাসার সামনে যাই, বাসার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ভেতরে বিএনপি নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওদিকে তালা দেওয়া আমাকে ঢুকতে দেবে না। কত বড় অপমান আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। যে আমি গেছি সহানুভূতি দেখাতে, আর সেখানে আমাকে সে (খালেদা জিয়া) ঢুকতে দেয় না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ভুলে গেছে সেই একাত্তরের পর কতবার ওই ৩২ নাম্বারে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব না থাকলে আর আমার মা সহযোগিতা না করলে ওই বেগম জিয়া হিসেবে নিজের নাম-পরিচয় দিতে পারত না। এটা হলো বাস্তব কথা। তখন কোথায় থাকত? আর সে কিনা- আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তারপরেও আমি তাকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। এখন তারা (বিএনপি) অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়। নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। সে নেবে? সে আশা দুরাশা।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদার কোনো অবদান নেই। বরং তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়, এটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি। গত ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কী করেছে? কিছুই করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগই করেছে।

জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর কাজ করেছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের জন্ম হয়েছে হত্যার মধ্য দিয়ে। জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। ওই অবৈধ দখলদারদের দোসর বিএনপি-জামায়াত আজ বাংলোদেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করে না।

আওয়ামী লীগ অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে একথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে একটা দেশের যে উন্নতি হয়, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের জন্য উন্নতি হয়, আজ আমরা সেটা প্রমাণ করেছি।’

বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী।’

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: ফোকাস বাংলা

বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে পরে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারা যারা বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয়, সেটা আজকে প্রমাণিত।

২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুসলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনও বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাসতো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে।’

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

‘খালেদা জিয়া ক্ষমতা থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক— বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবে না। আল্লার মাইর দুনিয়ার— এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সংগ্রামে আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিল, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ওই ভোট চুরির অপরাধেৃ এদেশের মানুষ ভোট চোরাকে কখনও ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আপনারাই চালিয়েছিলেন। সে জন্য আপনাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।’

শেখ-হাসিনা-02

জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। যে বিএনপি ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিল। সেটি সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালানার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি— যাতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়।

খালেদা জিয়ার আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল দাবি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি তৈরি করেছিলেন। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজে পড়াশোনা করতে পারেনি বলে অন্যরা পড়াশোনা করুক সেটাও চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (বেগম জিয়া) একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। দুইটা বিষয়ে পাস করেছিল। উর্দু আর অংক। সারাদিন পেয়ারে পাকিস্তান বলে জপ করে। সেই জন্য উর্দুতে পাস করেছিল। আর টাকা পয়সার হিসাব করতে হয়, তাই অংকে পাস করেছিল।

সমাবেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক বেশি খরচ করতে হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একইভাবে পানি উৎপাদনেও সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। পানি ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামে গেলাম, সেখানে দেখি সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সবাই ছবি তুলছে। অথচ বিএনপির আমলে কম্পিউটার ছিল না।

সরকার ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না থাকে, অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসে সব ধ্বংস করে দেবে।

তিনি বলেন, ৭৫ এর পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল– জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ খালেদা জিয়া থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কি করেছে? মানুষের জন্য কি করেছে? মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কি করেছে? সেটা একবার চিন্তা করে দেখবেন। অনেকে বড় বড় কথা বলেছে, দেশের মানুষের জন্য তারা কি করেছে?

তারেক কেন তার মাকে দেখতে আসে না: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে সে কানসাটে মানুষকে গুলিকে হত্যা করে। ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের অভাব ছিল। মানুষ বিদ্যুৎ ও পানির জন্য আন্দোলন করেছিল। বিএনপির এক নেতাকে পাবলিক ধাওয়া দিয়েছিল, নামই হয়ে গিয়েছিল দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে সে পালিয়েছিল। খালেদা জিয়া চাহিদা পূরণ করতে পারেনি।

রিজার্ভ গেল কোথায়? অনেকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি। আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় ধনি দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। খালেদা জিয়া আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর আমরা এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। খালি বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ফলে সব মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাদের আন্দোলনে হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। খুনিদের দল জনগণের কল্যাণ কখনো করতে পারে না। করেও না। একই দিনে ৬৪ জেলায় ৫০০ বোমা হামলা করলো। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। নিজেরই তো শিক্ষা নেই, অন্যকে শিক্ষা দেবে কীভাবে? এসএসসিতে ফেল করেছে। পাস করেছে অংকে। কারণ টাকা-পয়সা হিসাব-নিকাশ ভালো জানতো।

বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে? বাসা থেকে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে, গিয়ে কী খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করার তো একটা সীমা থাকে। তারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়, নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। এমন আশা করাও দুরাশা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, ক্ষমতার লোভ করি না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। ক্ষমতার লোভ করি না, জনগণের স্বপ্ন বেচি না।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর কাওলায় আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেও ক্ষমতায় যেতে পারিনি। সে নির্বাচনে খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। আমাকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম-আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। ক্ষমতার লোভ করি না, জনগণের স্বপ্ন বেচি না।

শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষ ভোটচোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না, তাই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগই নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে আবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। এ দেশের মানুষ কখনো ভোটচোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। সেই আন্দোলন আপনারা চালিয়েছেন।

Untitled-1

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ দেশের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। বিএনপি ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিল। সেই ভুয়া ভোটার সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছি। আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি।

খালেদা জিয়া কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। আর আল বদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়াও বসিয়েছিল, খালেদা জিয়াও। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই। তারা সেটা করতেও চায় না। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। দেশের মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না বিএনপি।

শেখ হাসিনা বলেন, অনশনের নামে নাটক করছে বিএনপি। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। (তারা) এই নাটকই করে যাচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা প্রশ্ন বিএনপি নেতাদের কাছে, তার (তারেক রহমান) মা এত অসুস্থ, আপনারা অনশন করেন। ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না? এটা কেমন ছেলে? মা এত অসুস্থ মরে মরে। শুনছি বিএনপির লোকজন বলছে, সে (খালেদা জিয়া) নাকি যখন তখন মরে যাবে, আর তাছাড়া বয়সও তো হয়েছে তার। হ্যাঁ, বয়সও হয়েছে আর অসুস্থও বটে। তা মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলবো- মাকে দেখতে আসুক।

তিনি বলেন, তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা… যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বক্তৃতা দিয়েছে, তারপরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আমি তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

Capture

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানি করেছে। বলেছিল, গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলবে। কি হয়েছে? জয় বাংলা স্লোগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস মুছতে চাইলেই মুছে ফেলা যায় না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আরেক ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) মারা গেল। তার বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা ছিল। সে মালয়েশিয়া মারা যায়। তার লাশ আসে। আমি একজন মা। আমারও সন্তান আছে। আমি খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাতে গিয়েছিলাম। আমার মিলিটারি সেক্রেটারি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সময় ঠিক করে। কিন্তু আমি যখন সেই বাসার সামনে যাই, বাসার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ভেতরে বিএনপি নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওদিকে তালা দেওয়া আমাকে ঢুকতে দেবে না। কত বড় অপমান আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। যে আমি গেছি সহানুভূতি দেখাতে, আর সেখানে আমাকে সে (খালেদা জিয়া) ঢুকতে দেয় না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ভুলে গেছে সেই একাত্তরের পর কতবার ওই ৩২ নাম্বারে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব না থাকলে আর আমার মা সহযোগিতা না করলে ওই বেগম জিয়া হিসেবে নিজের নাম-পরিচয় দিতে পারত না। এটা হলো বাস্তব কথা। তখন কোথায় থাকত? আর সে কিনা- আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তারপরেও আমি তাকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। এখন তারা (বিএনপি) অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়। নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। সে নেবে? সে আশা দুরাশা।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদার কোনো অবদান নেই। বরং তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়, এটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি। গত ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কী করেছে? কিছুই করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগই করেছে।

জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর কাজ করেছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের জন্ম হয়েছে হত্যার মধ্য দিয়ে। জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। ওই অবৈধ দখলদারদের দোসর বিএনপি-জামায়াত আজ বাংলোদেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করে না।

আওয়ামী লীগ অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে একথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে একটা দেশের যে উন্নতি হয়, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের জন্য উন্নতি হয়, আজ আমরা সেটা প্রমাণ করেছি।’

বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী।’

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: ফোকাস বাংলা

বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে পরে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারা যারা বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয়, সেটা আজকে প্রমাণিত।

২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুসলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনও বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাসতো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে।’

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

‘খালেদা জিয়া ক্ষমতা থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক— বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবে না। আল্লার মাইর দুনিয়ার— এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সংগ্রামে আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিল, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ওই ভোট চুরির অপরাধেৃ এদেশের মানুষ ভোট চোরাকে কখনও ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আপনারাই চালিয়েছিলেন। সে জন্য আপনাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।’

শেখ-হাসিনা-02

জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। যে বিএনপি ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিল। সেটি সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালানার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি— যাতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়।

খালেদা জিয়ার আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল দাবি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি তৈরি করেছিলেন। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজে পড়াশোনা করতে পারেনি বলে অন্যরা পড়াশোনা করুক সেটাও চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (বেগম জিয়া) একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। দুইটা বিষয়ে পাস করেছিল। উর্দু আর অংক। সারাদিন পেয়ারে পাকিস্তান বলে জপ করে। সেই জন্য উর্দুতে পাস করেছিল। আর টাকা পয়সার হিসাব করতে হয়, তাই অংকে পাস করেছিল।

সমাবেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক বেশি খরচ করতে হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একইভাবে পানি উৎপাদনেও সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। পানি ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামে গেলাম, সেখানে দেখি সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সবাই ছবি তুলছে। অথচ বিএনপির আমলে কম্পিউটার ছিল না।

সরকার ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না থাকে, অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসে সব ধ্বংস করে দেবে।

তিনি বলেন, ৭৫ এর পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল– জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ খালেদা জিয়া থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কি করেছে? মানুষের জন্য কি করেছে? মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কি করেছে? সেটা একবার চিন্তা করে দেখবেন। অনেকে বড় বড় কথা বলেছে, দেশের মানুষের জন্য তারা কি করেছে?

তারেক কেন তার মাকে দেখতে আসে না: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে সে কানসাটে মানুষকে গুলিকে হত্যা করে। ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের অভাব ছিল। মানুষ বিদ্যুৎ ও পানির জন্য আন্দোলন করেছিল। বিএনপির এক নেতাকে পাবলিক ধাওয়া দিয়েছিল, নামই হয়ে গিয়েছিল দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে সে পালিয়েছিল। খালেদা জিয়া চাহিদা পূরণ করতে পারেনি।

রিজার্ভ গেল কোথায়? অনেকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি। আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় ধনি দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। খালেদা জিয়া আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর আমরা এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। খালি বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ফলে সব মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাদের আন্দোলনে হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। খুনিদের দল জনগণের কল্যাণ কখনো করতে পারে না। করেও না। একই দিনে ৬৪ জেলায় ৫০০ বোমা হামলা করলো। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। নিজেরই তো শিক্ষা নেই, অন্যকে শিক্ষা দেবে কীভাবে? এসএসসিতে ফেল করেছে। পাস করেছে অংকে। কারণ টাকা-পয়সা হিসাব-নিকাশ ভালো জানতো।

বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে? বাসা থেকে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে, গিয়ে কী খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করার তো একটা সীমা থাকে। তারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়, নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। এমন আশা করাও দুরাশা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।