Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমি বাংলায় গান গাই’ শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০২:১৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২২২ জন দেখেছেন

বিনোদন ডেস্ক : 

‘আমি বাংলায় গান গাই’ খ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে দিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতুল মারা যান বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’।

কদিন আগে অপারেশনের পর হার্ট অ্যাটাক হয় গায়কের। দ্রুত অবনতি হতে থাকে শারীরিক অবস্থার। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের ফলে পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হয়ে ওঠে। ছিলেন নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত। চিকিৎসকদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু সব বিফল করলেন ইহলোক ত্যাগ।

অসুস্থ প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত খোঁজ নিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন গায়কের খবর নিতে।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে অসুস্থ সংগীতশিল্পীকে দেখতে যান মমতা। হাসপাতালে গিয়ে সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিলেন তিনি। তার গলায় আমি ‘বাংলার গান গাই’ গানটিও শোনেন মুখ্যমন্ত্রী।

সপ্তাহ দেড়েক আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে প্রতুলের। পরে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তড়িঘড়ি কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। সেখানেই ধরা পড়ে, ফুসফুসেও প্রবল সংক্রমণ রয়েছে। একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন গায়ক। আর সুস্থ হয়ে ওঠা হলো না।

চেতনা হারালে গত মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালের আইটিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি গানে গানে মানুষের কথা বলে যাওয়া এই শিল্পীকে।

গেল বছর থেকেই অসুস্থ ছিলেন প্রতুল মুর্খাজি। মাসখানেক আগেও তার হাসপাতালবাসের খবর এসেছিল।

এই শিল্পীর বহু গানের মধ্যে ‘চার্লি চ্যাপলিন’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও আলু বেচো’ শিরোনামের গানদুটো অন্যতম। ২০১৬ সালে সিঙ্গুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে যখন ১৪ হাজার কৃষককে তাদের জমি ফেরত দেওয়া হয়, তখন প্রতুলের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি।

এছাড়া বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতুলের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সাালের মার্চে। অ্যালবামটির নাম ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এই গানেই প্রতুল বেশি মিশে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। তার বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রতুল চলে যান ওপার বাংলায়; তখন তাদের বসবাস শুরু হয় চুঁচুড়ায়।

১৯৫২ সালে তার স্কুলে যাওয়া শুরু। স্কুলের মঞ্চেই অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তিনি। ‘গায়ক অভিনেতা’ হিসেবে একটি স্কুলের নাটকের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেন প্রতুল।

১৯৬২ সালে তিনি প্রথম গান লেখেন। এর আগে বিভিন্ন কবির কবিতায় সুর দিতেন তিনি। তারপর এক দশক ধরে বেশ কয়েকটি গণসংগীত রচনা করেছেন। নকশালদের মধ্যে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘সেজদা কমরেড’ নামে।

ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে।

‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন প্রতুল। তার অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’, ‘যেতে হবে’, ‘ওঠো হে’, ‘কুট্টুস কাট্টুস’, ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখেছিলাম’, ‘স্বপনপুরে’, ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’, ‘হযবরল’, ‘দুই কানুর উপাখ্যান’, ‘আঁধার নামে’।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

‘আমি বাংলায় গান গাই’ শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন

প্রকাশের সময় : ০২:১৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিনোদন ডেস্ক : 

‘আমি বাংলায় গান গাই’ খ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে দিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতুল মারা যান বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’।

কদিন আগে অপারেশনের পর হার্ট অ্যাটাক হয় গায়কের। দ্রুত অবনতি হতে থাকে শারীরিক অবস্থার। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের ফলে পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হয়ে ওঠে। ছিলেন নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত। চিকিৎসকদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু সব বিফল করলেন ইহলোক ত্যাগ।

অসুস্থ প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত খোঁজ নিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন গায়কের খবর নিতে।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে অসুস্থ সংগীতশিল্পীকে দেখতে যান মমতা। হাসপাতালে গিয়ে সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিলেন তিনি। তার গলায় আমি ‘বাংলার গান গাই’ গানটিও শোনেন মুখ্যমন্ত্রী।

সপ্তাহ দেড়েক আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে প্রতুলের। পরে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তড়িঘড়ি কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। সেখানেই ধরা পড়ে, ফুসফুসেও প্রবল সংক্রমণ রয়েছে। একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন গায়ক। আর সুস্থ হয়ে ওঠা হলো না।

চেতনা হারালে গত মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালের আইটিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি গানে গানে মানুষের কথা বলে যাওয়া এই শিল্পীকে।

গেল বছর থেকেই অসুস্থ ছিলেন প্রতুল মুর্খাজি। মাসখানেক আগেও তার হাসপাতালবাসের খবর এসেছিল।

এই শিল্পীর বহু গানের মধ্যে ‘চার্লি চ্যাপলিন’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও আলু বেচো’ শিরোনামের গানদুটো অন্যতম। ২০১৬ সালে সিঙ্গুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে যখন ১৪ হাজার কৃষককে তাদের জমি ফেরত দেওয়া হয়, তখন প্রতুলের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি।

এছাড়া বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতুলের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সাালের মার্চে। অ্যালবামটির নাম ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এই গানেই প্রতুল বেশি মিশে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। তার বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রতুল চলে যান ওপার বাংলায়; তখন তাদের বসবাস শুরু হয় চুঁচুড়ায়।

১৯৫২ সালে তার স্কুলে যাওয়া শুরু। স্কুলের মঞ্চেই অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তিনি। ‘গায়ক অভিনেতা’ হিসেবে একটি স্কুলের নাটকের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেন প্রতুল।

১৯৬২ সালে তিনি প্রথম গান লেখেন। এর আগে বিভিন্ন কবির কবিতায় সুর দিতেন তিনি। তারপর এক দশক ধরে বেশ কয়েকটি গণসংগীত রচনা করেছেন। নকশালদের মধ্যে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘সেজদা কমরেড’ নামে।

ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে।

‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন প্রতুল। তার অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’, ‘যেতে হবে’, ‘ওঠো হে’, ‘কুট্টুস কাট্টুস’, ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখেছিলাম’, ‘স্বপনপুরে’, ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’, ‘হযবরল’, ‘দুই কানুর উপাখ্যান’, ‘আঁধার নামে’।