ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। কারও কাছে মাথা নত করি না, মাথা নত করব না। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে। আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ষড়যন্ত্র করে আমাকে আসতে দেয়নি।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে তিনি মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনও থেমে যায়নি। আর যেহেতু তারা জানে আমরা কারো কাছে মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরও বেশি।
দেশের উন্নয়নে সরকারের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, স্যাটেলাইট, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আপনারা জানেন, বিশ্ব ব্যাংক একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল দুর্নীতির। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি। নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি বাংলার মানুষের ভাগ্য গড়তে। অথচ, বিশ্বব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে ঋণ দেওয়া স্থগিত করে দেয়। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি।
বাধা উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যখন অভিযোগ এনেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি বলেছিলাম, আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি কখনও ভুলে যাই না, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গিয়েছিলেন। এই জাতি কখনও কারও কাছে মাথা নত করবে না। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে দিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, নৌকা মার্কা যদি ভোট পাই, তাহলেই এসে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। এদেশের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। তারা জানে আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না। তাই তাদের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। সব মোকাবিলা করতে হবে। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আর আ.লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দেশ গড়তে নামি আমি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। আর এই বিএনপি বড় বড় কথা বলে, লম্পঝম্প করে, তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। যে কারণে তারা ২০১৪ তে নির্বাচন করেনি। ২০১৮ তে নির্বাচনে প্রার্থী বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে সরে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়ে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ৮ হাজারের ওপরে ডিজিটাল সেন্টার আজকে আমাদের দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়েছি। ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনো থেমে যায় নাই। যেহেতু তারা জানে আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরও বেশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানো, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছে। মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়। তারা মনে করে টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে। খুব ভালো কথা টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে তা তো জনগণের হাতে যাবে। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারে নাই, পারবে না।
নৌকায় ভোট দিলেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানিয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে? তিনি বলেন, শুধু নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারবো আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখায় দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। যারা বাকি আছে তাদের ঘর করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৩৩টি জেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সমাজের কোনো স্তরের মানুষ বাদ নেই যাদের জন্য আমরা কাজ করিনি।
কোনো জায়গা অনাবাদি না রাখতে আবারও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বলেন, আমি নিজে শুরু করেছি। গণভবন এখন ছোটখাটো একটা খামারবাড়ি। সেখানে আমরা সবই করি। পুকুরে মাছও ছেড়েছি। মাঝে মাঝে মাছও ধরি। টুঙ্গিপাড়ায় দাদাবাড়ির জমি পরিষ্কার করে সেখানে আবাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
গত ১৫ বছরে দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, অর্থনীতি, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, রাস্তাঘাট ব্রিজসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রায় ৫ কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ড দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের আগামী প্রজন্ম হবে শিক্ষায় ও জ্ঞানে স্মার্ট। সমাজ, সরকার ও জনগণ হবে স্মার্ট।
নিজের সরকারি বাসভবনে চাষাবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানাব এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। আমাদের নিজেদের ফসল দিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করব। প্রয়োজনে আমাদের উৎপাদিত খাদ্য বিদেশে সরবারহ করব।
টাকা দিয়ে ফরিদপুরের মানুষকে কেনা যাবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সরকারে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছি। এতে অনেকে টাকাওয়ালা হয়েছে। এখন তারা টাকা ছড়ায়। মনে করে টাকা দিয়েই কেনা যাবে। তবে একটা কথা বলতে চাই, টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেনা যায় না। ফরিদপুরের মাটি বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি। ফরিদপুরের মানুষ সব সময় নৌকার পক্ষে ছিল, আছে, থাকবে।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত সাকিব আল হাসানকেও পরিচয় করিয়ে দেন দলীয় প্রধান। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের একটা রত্ন আছে। এই রত্নটা ক্রিকেট রত্ন। মাগুরা-১ আসনে আমরা এবার নমিনেশন দিয়েছি সাকিব আল হাসানকে। সে বলেছে বক্তৃতা দিতে পারে না। আমি বলেছি বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নাই। তুমি শুধু বলবা তুমি ছক্কা মারতে পারো, আর বল করে উইকেট ফেলে দিতে পারো, তাহলেই হবে। এইবারও ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিও।
জনসভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে যাবে না। আরও কাজ বাকি। আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এই দেশ গড়ে তুলতে হলে কাকে দরকার আপনারা বলেন। কে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কা, এই নৌকা মার্কা আপনারা জানেন, নূহ নবীর নৌকা মার্কা, মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল এই নৌকা। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে এই নৌকা মার্কা।
তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। ওই অস্ত্র হাতে নিয়ে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারীরা ক্ষমতায় এলে দেশের কোনো উন্নতি হয় নাই। উন্নতি হয়েছে একমাত্র যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাকিব আল হাসান, ফরিদপুর-২ আসনের প্রার্থী শাহদাব আকবর, ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক, ফরিদপুর-১ আসনের আবদুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, মাসুদুল হক, সাইফুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।