নিজস্ব প্রতিবেদক :
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিবরণ দিতে গিয়ে নিজের মামলার সংখ্যা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রায় সবাই মামলার হাজিরা দিতে নিম্ন আদালতে যাই। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। আমার বিরুদ্ধেও ৯৮টা মামলা আছে। আর দুটো মামলা বাকি আছে সেঞ্চুরি করতে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘কারেন্ট স্ট্যাইট অব জুডিশিয়ারি : এ টুল টু অপরেস দ্য অপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দমনে এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার আদালতকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনি যদি ঢাকা লোয়ার কোর্টে যান, দেখবেন গিজগিজ করছে মানুষ, সব মানুষ বিএনপির। আমাদের রাজনৈতিক কর্মী, একজনও বাদ নেই। সকালে তাঁরা মামলার হাজিরার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসতে পারেন না। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচারব্যবস্থা যেটা আছে, সেটা এখন পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে।
বিচারব্যবস্থা দলীয়করণ হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পুলিশ কর্মকর্তা রাজনীতিবিদের মতো কথা বলেন। বিচারব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে। এমনিভাবে সমস্ত জায়গায় জবরদখল প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। লক্ষ্য একটাই, ভিন্ন কায়দায় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা।
জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যেটা আছে, সেই বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
মিজা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। এজন্য করেন না কারণ, ১৯৭৫ সালে তারাই কিন্তু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে দাবি করে তিনি বলেন, কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব? আজকে বিচার ব্যবস্থা যদি পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে যায়, মানুষ কোথায় যাবে? এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজ যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিশিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি আমরা।
আইনজীবীদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, আজকে সবাইকে জোটবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে সোচ্চার হয়ে বলতে হবে যে, ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছো। এখন তুমি দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি করো।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হয়েছে। যা আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে ছিল। যেটার ওপরে আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষেরা, সাংবাদিকরা, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তারাও বলেছেন যে, এ আইনের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। কোনো পরিবর্তন না করে, শুধু নাম পরিবর্তন করে গতকাল তারা সংসদে এ আইন পাস করেছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজয় সুনিশ্চিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন। সঞ্চালনা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব ও ইসমাইল জবিউল্লাহসহ অনেকে।