নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেখ হাসিনার অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর জানেন? তাদের এক দফা জানেন? এক দফা হলো, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর আমাদের দফা একটা। তা হলো শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়।
বুধবার (বিকেলে) বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন শেখ হাসিনার আমলেই হবে। শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের জনগণ যাকে ভালোবাসে, বাংলাদেশের জনগণ যে নেত্রীর সততাকে, উন্নয়নকে পছন্দকে করে, যিনি সারারাত জেগে মানুষের কথা ভাবেন। রাত ২টায় ফোন করেও যাকে পাওয়া যায়। আমাদের এমন নেতা আমরা হারাতে পারি না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কারও কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। কারও কর্মসূচিতে বাধা হবো না। আমাদের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিতে আসলে প্রতিহত করবো। বাংলাদেশ কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করবে না। যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে আপস বা সংলাপ নয়।
তিনি বলেন, যারা আমাদের চার নেতা, তার আগে ১৫ আগস্ট সব খুনের রক্ত যাদের রঞ্জিত, তাদের সঙ্গে আমরা আপস করতে পারি না। আমরা ৭১ এর চেতনার সঙ্গে আপস করতে পারি না, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের সঙ্গে, জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে, ৭ মার্চের চেতনার সঙ্গে আপস করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারি না। আমাদের নেত্রী অনেক দয়া দেখিয়েছেন, অনেক মহানুভবতা দেখিয়েছেন। ২১ আগস্ট তাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এর পরও কোকোর মৃত্যুর পর তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। ঘরের দরজা বন্ধ, বাইরের গেট বন্ধ, শেখ হাসিনাকে যারা ঢুকতে দেয়নি এই অপশক্তি, গণতন্ত্রের শত্রুদের সঙ্গে আপস আওয়ামী লীগের হতে পারে না। আমরা আপস করতে পারি না। সবাই ঐক্যবব্ধ থাকবেন।
তিনি বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করে এসেছেন। দূর থেকে আমরা আনতে পারিনি, আমাদের হাতে সময় ছিল না। আমাদের নেতাকর্মীরা মূলত ২৪ ঘণ্টার নোটিশে এখানে এসেছেন। আর উপস্থিতি দেখেন, এরই নাম আওয়ামী লীগ। খেলা হবে, আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে তখন কোনো অপশক্তি সামনে দাঁড়াতে পারবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা পদ্মা সেতু চায়নি, মেট্রোরেল চায়নি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চায়নি, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল চায়নি, একদিনে একশ’ সেতুর উদ্বোধন চায়নি। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প তাদের পছন্দ নয়। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রাস্তঘাট উন্নয়ন যাদের পছন্দ নয় তারা শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে না। তার অপরাধ তিনি উন্নয়ন করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেই নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সততাকে পছন্দ করে। তিনি সারারাত জেগে জেগে জনগণের কথা ভাবেন। আমরা এমন নেত্রীকে হারাতে চাই না। তারা (বিএনপি) শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হবে, ভেসে যাবে, এজন্য তারা শেখ হাসিনাকে চা না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছে। ডিসেম্বরের স্বপ্ন গোপীবাগে গরুর হাটের গিয়ে মারা গেছে। আরেকটা স্বপ্ন দেখেছে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নয়াপল্টনে কাদা পানিতে আটকে গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের এক দফা- সংবিধান সম্মত নির্বাচন। কোনো বাধা দেব না। কাউকে আক্রমণ করতে যাব না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে, কোনো অপশক্তি সামনে দাঁড়াতে পারবে না। সেজন্য নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
খেলা হবে খেলা হবে স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। মোকাবিলা হবে; মাঠে আছেন, মাঠে থাকবেন।’
নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ‘মাঠে আছেন, থাকবেন। বিএনপির এক দফা। আমাদেরও এক দফা- সংবিধান সম্মত নির্বাচন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, দূরদূরান্ত থেকে আমরা নেতাকর্মী আনতে পারিনি। আমাদের হাতে সময় ছিল না। মূলত ২৪ ঘণ্টার নোটিশে সবাই এসেছেন। উপস্থিতি দেখেছেন? এরই নাম আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে জানিয়ে সব সংগঠনকে সমাবেশ করার নির্দেশ দেন তিনি। কাদের বলেন, একেক মাসে একেক রকম কর্মসূচি আসতে পারে। শোকের মাসে শোক। শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু পরিবার শেখ রেহানা ছাড়া অন্য কারও ছবি দিয়ে প্রচার করবেন না। শৃঙ্খলা শিখতে হবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের (বিএনপি) শেখ হাসিনাকে ভালো লাগে না। শেখ হাসিনার গুনগান তাদের ভালো লাগে না। কারণ শেখ হাসিনা মানে উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় যারা বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, আপনারা চান- ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের লক্ষ্য-ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের সেই নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে আমরা তাদের প্রতিহত করব। খেলা চলবে নির্বাচন পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এ রকম মঞ্চ দেখতে চাই না, শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এত নেতা আমার দরকার নেই। একটা মিটিংয়ে এত বক্তাও আমার দরকার নেই। নিয়ম করে নেবেন এই মিটিংয়ে এরা বলবে, ওই মিটিংয়ে ওরা বলবে। সব নেতাকে বক্তৃতা দিতে হবে, আর সামনের লোক ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে চলে যাবে এটা হয় না।
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, একটা নিয়ম করে নেবেন, এ মিটিংয়ে এরা বক্তব্য দেবেন এবং এ মিটিংয়ে ওরা কথা বলবেন। সব নেতাকে সমাবেশে বক্তব্য দিতে হবে, আর সামনের লোক বিরক্ত হয়ে চলে যাবে, এটা হতে পারে না।
শোকের মাস আগস্টে পোস্টারে ছবি প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সব নেতাকর্মীকে বলবো, সামনে আগস্ট মাস। শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা ছাড়া অন্য কারও ছবি দিয়ে নিজের ছবি প্রচার করবেন না। অনেকেই দেখা যায় ১০-১২টা ছবি দিয়ে নিজের ছবির প্রচারণা চালান। সবাইকে শৃঙ্খলার সঙ্গে চলতে হবে।
সমাবেশের সময় ৩টায় থাকলেও দুপুর ২টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হন। রাজধানীর আশপাশের উপজেলাগুলো থেকেও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে আসেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, কয়েক লাখ নেতাকর্মী শান্তি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস কামাল হোসেন, আহমেদ হোসেন; দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা এবং ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকমীরা উপস্থিত ছিলেন।