Dhaka রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবেগে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলাম: বাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আবেগপ্রবণ হয়ে মানসিক জোর বাড়াতে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে, আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, হাত-পা ভেঙে দেবেন- এটা আমার আবেগ থেকে বলা। যদি আবেগ কাজ না করত, তাহলে এ কথা আমি বলতাম না।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি-জামায়াতের কোনো কর্মীকে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করার অভিযোগে বাহারকে ১৯ ডিসেম্বর পৃথক শোকজ করা হয়।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয় প্রকাশ্যে এমন কথা বলার পর আপনাকে নির্বাচন কমিশন থেকে শোকজ করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের হাত-পা গুঁড়া করে দেব বলেছেন। একজন প্রার্থী হিসেবে আপনি এমন কথা বলতে পারেন কি না জানতে চাইলে বাহার বলেন, যেদিন আমি বক্তৃতা করি, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা গেছেন। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুই দিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন।

আপনি কি এমন কথা বলতে পারেন প্রশ্নে বাহার বলেন, এটা আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল। নির্বাচনের আচরণের ভেতরে যদি না পড়তাম, তাহলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছে কিসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না। আমি তো মুক্তিযোদ্ধা। আমি একটি থানা দখল করেছিলাম। ৫২টি মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তখনই উপলব্ধি করতাম, কখন দেশ স্বাধীন হবে, আর আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তা পাবে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের মেয়েরা নিরাপদ না। ট্রেনে উঠলে সেই ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, শিশুসহ মারা যায়।

একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে আপনাকে। বারবার কেন আচরণবিধি কেন লঙ্ঘন কেন করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটার জন্য আমি এসেছি, আমি আচরণবিধিটা পড়লাম ওনার কাছ থেকে, জেনে নিলাম। আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আমাকে যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আচরণবিধিতে পড়লে আমাকে কী সাজা দেওয়া হবে, সেটা জানতে এসেছিলাম ওনার কাছ থেকে।

বাহার বলেন, ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা ৪০০ থেকে ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল, যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছি।

আপনার আসনে একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে—এ বিষয়ে বাহার বলেন, ৭১ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি নিরপেক্ষ না থেকে আমার বিপক্ষে খণ্ডিত নিউজ দিচ্ছেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, দয়া করে আমার নিউজ দেওয়া লাগবে না আপনার। এটা কি বলা অপরাধ হয়ে গেছে? খণ্ডিত নিউজ দিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, এটা বলার অধিকার আমার নেই? এটা বলেই আমি আমার গাড়িতে উঠে গেছি।

আপনি এতদিন ধরে নির্বাচন করছেন আচরণবিধি জানেন না বলছেন- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই সংসদ সদস্য বলেন, না, আচরণ বিধি জানতে হবে আমার? ভঙ্গ না করলে আচরণবিধির জানার দরকার কি?

এতদিন যা বলেছেন, তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না, প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই একটা জায়গায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে। আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, ভেঙে দেবেন। এটা আমার আবেগ থেকে বলা।

বিএনপির-জামাত আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছে, এটা আপনি নিশ্চিত হলেন কীভাবে- এ বিষয়ে বাহার বলেন, ‘আপনার কি মনে হয়- নির্বাচনটা রেখে আমরা স্লিপার খুলে দেবো। এটা আপনার মনে হয়?’

আপনারা যে মানের নির্বাচন করছেন, এটাকে কি নির্বাচন বলা যায়। বিএনপির জামায়াত যদি এ ধরনের নির্বাচন করত, তবে আপনারা কী বলতেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে কি এমন নির্বাচন হয় না? যে আমেরিকা পরীক্ষা নিতে আসছে, তারা কি এমন নির্বাচন করে না? আমেরিকার অনেক জায়গায় তাদের দ্বিতীয় প্রার্থী নেই, ডিক্লারেশন দেয় না? দুর্ভাগ্য তাদের কাছে আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়।’

১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ওই উঠান বৈঠকে এমপি বাহার বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট। বিএনপি নির্বাচনে হেরে যাবে বলে নির্বাচনে আসেনি। কোনো বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তার হাত-ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবেন আপনারা। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। কোনো ভয়ের কারণ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে কুমিল্লার মানুষ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আবেগে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলাম: বাহার

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৪:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আবেগপ্রবণ হয়ে মানসিক জোর বাড়াতে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে, আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, হাত-পা ভেঙে দেবেন- এটা আমার আবেগ থেকে বলা। যদি আবেগ কাজ না করত, তাহলে এ কথা আমি বলতাম না।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি-জামায়াতের কোনো কর্মীকে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করার অভিযোগে বাহারকে ১৯ ডিসেম্বর পৃথক শোকজ করা হয়।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয় প্রকাশ্যে এমন কথা বলার পর আপনাকে নির্বাচন কমিশন থেকে শোকজ করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের হাত-পা গুঁড়া করে দেব বলেছেন। একজন প্রার্থী হিসেবে আপনি এমন কথা বলতে পারেন কি না জানতে চাইলে বাহার বলেন, যেদিন আমি বক্তৃতা করি, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা গেছেন। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুই দিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন।

আপনি কি এমন কথা বলতে পারেন প্রশ্নে বাহার বলেন, এটা আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল। নির্বাচনের আচরণের ভেতরে যদি না পড়তাম, তাহলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছে কিসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না। আমি তো মুক্তিযোদ্ধা। আমি একটি থানা দখল করেছিলাম। ৫২টি মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তখনই উপলব্ধি করতাম, কখন দেশ স্বাধীন হবে, আর আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তা পাবে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের মেয়েরা নিরাপদ না। ট্রেনে উঠলে সেই ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, শিশুসহ মারা যায়।

একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে আপনাকে। বারবার কেন আচরণবিধি কেন লঙ্ঘন কেন করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটার জন্য আমি এসেছি, আমি আচরণবিধিটা পড়লাম ওনার কাছ থেকে, জেনে নিলাম। আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আমাকে যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আচরণবিধিতে পড়লে আমাকে কী সাজা দেওয়া হবে, সেটা জানতে এসেছিলাম ওনার কাছ থেকে।

বাহার বলেন, ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা ৪০০ থেকে ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল, যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছি।

আপনার আসনে একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে—এ বিষয়ে বাহার বলেন, ৭১ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি নিরপেক্ষ না থেকে আমার বিপক্ষে খণ্ডিত নিউজ দিচ্ছেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, দয়া করে আমার নিউজ দেওয়া লাগবে না আপনার। এটা কি বলা অপরাধ হয়ে গেছে? খণ্ডিত নিউজ দিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, এটা বলার অধিকার আমার নেই? এটা বলেই আমি আমার গাড়িতে উঠে গেছি।

আপনি এতদিন ধরে নির্বাচন করছেন আচরণবিধি জানেন না বলছেন- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই সংসদ সদস্য বলেন, না, আচরণ বিধি জানতে হবে আমার? ভঙ্গ না করলে আচরণবিধির জানার দরকার কি?

এতদিন যা বলেছেন, তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না, প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই একটা জায়গায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে। আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, ভেঙে দেবেন। এটা আমার আবেগ থেকে বলা।

বিএনপির-জামাত আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছে, এটা আপনি নিশ্চিত হলেন কীভাবে- এ বিষয়ে বাহার বলেন, ‘আপনার কি মনে হয়- নির্বাচনটা রেখে আমরা স্লিপার খুলে দেবো। এটা আপনার মনে হয়?’

আপনারা যে মানের নির্বাচন করছেন, এটাকে কি নির্বাচন বলা যায়। বিএনপির জামায়াত যদি এ ধরনের নির্বাচন করত, তবে আপনারা কী বলতেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে কি এমন নির্বাচন হয় না? যে আমেরিকা পরীক্ষা নিতে আসছে, তারা কি এমন নির্বাচন করে না? আমেরিকার অনেক জায়গায় তাদের দ্বিতীয় প্রার্থী নেই, ডিক্লারেশন দেয় না? দুর্ভাগ্য তাদের কাছে আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়।’

১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ওই উঠান বৈঠকে এমপি বাহার বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট। বিএনপি নির্বাচনে হেরে যাবে বলে নির্বাচনে আসেনি। কোনো বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তার হাত-ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবেন আপনারা। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। কোনো ভয়ের কারণ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে কুমিল্লার মানুষ।