স্পোর্টস ডেস্ক :
এবার আর অঘটন ঘটাতে পারলো না আফগানিস্তান। বল হাতে একটা সময় কিউইদের চাপে রেখেছিলেন রশিদ-ফারুকিরা। তবে সেই চাপ সামলে ঠিকই বড় পুঁজি গড়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের সামনে দাঁড়ায় ২৮৯ রানের লক্ষ্য। একশর আগে (৯৭ রানে) ৪ আর ১০৭ রানের মধ্যে ৫ হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আফগানরা। সেখান থেকে আর লড়াইয়ে ফিরতে পারেনি। ৩৪.৪ ওভারে ১৩৯ রানে অলআউট হয় হাসমতউল্লাহর দল। আফগানিস্তানকে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে নিউজিল্যান্ড। টানা চার ম্যাচ জিতেছে তারা।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৮৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আফগানিস্তান। রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানের ওপেনিং জুটি ভাঙে দলীয় ২৭ রানেই। ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ১১ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় গুরবাজকে। পরের ওভারেই আরেক ওপেনার জাদরানকেও মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচে পরিণত করে আউট করেন ট্রেন্ট বোল্ট।
পর পর দুই ওভারে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়া আফগানিস্তান এরপর উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। জুটি গড়ে এদিন দলের হাল ধরতে পারেননি আর কেউই। ৮ রান করে অধিনায়ক হাসমত উল্লাহ শহীদি সাজঘরে ফেরার পর আজমত উল্লাহ ওমরজাইকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার দিকেই যাচ্ছিলেন রহমত শাহ। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছিলেন ৫৪ রান। তবে এ জুটি ভাঙে বোল্টের আঘাতে। উইকেট রক্ষক ল্যাথামের গ্লাভসবন্দী হয়ে ২৭ রান করেই ফিরতে হয় ওমরজাইকে।
দলীয় ৯৭ রানে ওমরজাই ফেরার পর রহমত শাহও সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ৩৬ রানেই। এরপর তাসের ঘরের মতই ভেঙ্গে পড়ে আফগানদের প্রতিরোধ। দলীয় ১২৫ রানে মোহাম্মদ নবী স্যান্টানারের বলে বোল্ড আউট হওয়ার পর স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ১৪ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। ফলে সাক্ষী হতে হয় ১৪৯ রানের বড় এক পরাজয়ের। আফগানদের হয়ে আজ ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন রহমত শাহ। কিউইদের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন স্যান্টনার এবং লকি ফার্গুসন।
আফগানদের সামনে টার্গেট ছিল ২৮৯ রান। বোলিং পিচে রান তোলা বেশ কষ্টের। তাই হয়েছে। পাওারপ্লের প্রথম দশ ওভারে রান উঠেছে ওভারপ্রতি তিন করে। তবে সাবধানী শুরু করেও রক্ষা হয়নি তাদের। ব্যাটিং অর্ডারের দুই ভরসা রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান দুজনেই ফিরে গিয়েছেন পাওয়ারপ্লের আগে। হেনরির শিকার গুরবাজ আর জাদরানকে ফিরিয়েছেন বোল্ট।
অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিও বড় করতে পারেননি ইনিংস। দলীয় ৪৩ রানে ফিরে যান তিনি। রহমত শাহ এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস মেরামতের। দুজন মিলে করেছেন ৫৪ রানের জুটি। তাদের বিচ্ছিন্ন করেন বোল্ট। ৯৭ রানে ফিরে যান ওমরজাই।
এতেই যেন শেষ হয়ে যায় আফগানদের শেষ প্রতিরোধ। বাকি ব্যাটাররা ছিলেন কেবল আসা যাওয়ার মিছিলে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন রহমত শাহ। আফগান ইনিংসের শেষ ৫ জনের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। ইনিংসটাও গুটিয়ে যায় ১৩৯ রানে।
এর আগে টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। বোলিং পিচের সুবিধা নিয়ে কিউইদের আটকে ফেলাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তবে সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি আফগানরা। দারুণ বল করলেও বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসারত দিতে হয়েছে তাদের।
শুরুটা নিউজিল্যান্ড করেছিল ধীরলয়ে। ষষ্ঠ ওভারে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ডেভন কনওয়েকে সাজঘরে ফেরত পাঠান মুজিব উর রহমান। কিউইদের রান উঠছিল তখন ওভারপ্রতি ৫ করে। এরপর অবশ্য লম্বা সময় ক্রিজে রাজত্ব করেছিলেন উইল ইয়াং এবং রাচিন রবীন্দ্র। দুজন মিলে যোগ করেছেন ৭৯ রান। এই জুটি আরও আগেই ভাঙ্গতে পারতো, যদি রাচিনের ক্যাচটা ঠিকভাবে লুফে নিতে পারতেন হাশমতউল্লাহ শহিদি।
এরপর আচমকাই ম্যাচের দৃশ্যপট নিজেদের করে নেন আফগান বোলাররা। আজমতউল্লাহ ওমরজাই এর জোড়া আঘাতে ফিরে যান দুই সেট ব্যাটার। আর ড্যারেল মিচেলকে ফেরান রশিদ খান। ১ রান তুলতেই নিউজিল্যান্ডরা হারায় তিন উইকেট। ১০৯ রানে ১ উইকেট থেকে ১১০ রানেই হয়ে যায় ৩ উইকেট।
এখান থেকেই প্রতিরোধের শুরু করেন টম ল্যাথাম এবং গ্লেন ফিলিপস। সাবধানী ইনিংসে দলের ইনিংস মেরামতে মনোযোগ দেন দুজনেই। অবশ্য তাতে আফগান ফিল্ডারদের কৃতিত্বও আছে। মুজিব-উর রহমান এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি দুজনেই ক্যাচ ছেড়েছেন।
শেষদিকে ব্যাটে ঝড় তুলতে চেয়েও পারেননি ল্যাথাম এবং ফিলিপস। নাভিন উল হকের ওভারে মারতে গিয়ে দুজনেই আউট হয়েছেন। তবে তাতে রানতোলায় ভাটা পড়েনি। মার্ক চ্যাপম্যানের ক্যামিওতে ভর করে ঠিকই ২৮৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আফগানিস্তানের পক্ষে দুইটি করে উইকেট নেন ওমরজাই এবং নাভিন।