স্পোর্টস ডেস্ক :
এশিয়া কাপের ষোড়শ আসরে প্রথম ম্যাচ শ্রীলংকার কাছে লজ্জার হারের পর সুপার ফোরে যাওয়ার সমীকরণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে জয় ছাড়া আর কিছু ভাবার উপায় ছিল না টাইগারদের। তবে সেই ম্যাচে কি দারুণ খেলাই না উপহার দিল সাকিব বাহিনী।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট-বলে আফগানদের কোনো পাত্তা না দিয়ে উঠে গেছে গ্রুপের শীর্ষে। তাই শেষ ম্যাচে ফলাফল যা-ই হোক, তাতে সুপার ফোর আটকাবে না বাংলাদেশের।
এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট হেরে যাওয়া ম্যাচের একাদশে আসে তিন পরিবর্তন। বদলে যায় উদ্বোধনী জুটিও। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম ছিলেন না একাদশেই, নাঈম শেখ নামেন মিরাজকে নিয়ে। ফজল হক ফারুকী এতদিন বাংলাদেশের টপ-অর্ডারদের জন্য বিভীষিকা হয়ে থাকলেও এ ম্যাচে শুরু থেকেই স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাননি তিনি।
ফারুকীর করা প্রথম ওভারেই আসে ১৪ রান। রানের গতি পাওয়ার প্লে জুড়েই ছিল ওভার প্রতি ছয়ের ঘরে। দশম ওভারের শেষ বলে এসে নাঈম শেখ বোল্ড হন মুজিব উর রহমানের বলে, তখন বাংলাদেশের রান ৬০। ৫ চারে ৩২ বলে ২৮ রান করেন নাঈম। ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসে এরপরও।
তিনে খেলতে পাঠানো হয় তাওহীদ হৃদয়কে, এ জায়গায় থিতু হওয়া শান্তর বদলে। হৃদয় অবশ্য ফেরেন নিজের দ্বিতীয় বলেই, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ইব্রাহিম জাদরানের হাতে। হুট করে দুই উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর রানের গতিটাও কিছুটা কমে আসে। পাওয়ার প্লের পরের দশ ওভারে আসে কেবল ৪৮ রান। মিরাজ বেশিই ডট বল খেলছিলেন। এক সময় ৪৬ বলে তার রান ছিল ২৮। কিন্তু এই ব্যাটার ছিলেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সময়ের সঙ্গে হাত খুলেছেন তিনি। মাঝে ফজল হক ফারুকীর ৩৩তম ওভারে ১৭ রান নেন শান্ত।
ক্রমেই বড় হতে থাকে মিরাজের সঙ্গে তার জুটি। দুজন হাঁটেন সেঞ্চুরির দিকেও। ৪৪তম ওভারের চতুর্থ বলে গুলবাদিন নাঈবের বলে সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ, ১১৫তম বলে এসে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়ার পর ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটে গিয়ে নিজের জার্সি নম্বর দেখিয়ে উদযাপন করেন।
মিরাজ অবশ্য সাজঘরে ফেরেন আউট না হয়েই। ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে মুজিব উর রহমানকে ছক্কা মারেন তিনি, তখনই ব্যথা পান হাতে। তার জায়গায় উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। নট আউট থেকে ক্রিজ ছাড়া মিরাজ ১১৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ১১২ রান করেন। শান্তর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৯০ বলে ১৯৪ রানের।
মিরাজ উঠে যাওয়ার দুই বল পরই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্তও। ওয়ানডেতে পঞ্চমবারের মতো একই মাচে জোড়া সেঞ্চুরি দেখে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি তোলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার তিন অঙ্কের মাইফলক স্পর্শ করেন। ২০২০ সালে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস একই ম্যাচে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি।
মিরাজের মতো শান্তও তার সেঞ্চুরি ছুয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হওয়ার আগে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৪ রান করেন তিনি। তবে দুই সেঞ্চুরিয়ানের বিদায়ের পরও দারুণভাবে ইনিংস টানে বাংলাদেশ। ১ চার ও ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রান করে মুশফিকুর রহিম রান আউট হলেও ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ বলে ৩২ রান করেন সাকিব।
অভিষিক্ত শামীম হোসেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই হাঁকান ছক্কা। ৬ বলে ১১ রান করা এই ব্যাটারও হন রান আউট। তবে বাংলাদেশের রান তিনশ ছাড়িয়েও যায় অনেক দূর। ৬ ওভার করা ফারুকী ৫৩ রান ও রশিদ খান ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে থাকেন অপরাজিত। আফগানদের পক্ষে দুটি উইকেট নেন মুজিব ও গুলবাদিন নাঈব।
৩৩৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ৭ বলে ১ রান করা রহমতুল্লাহ গুরবাজকে আউট করেন তিনি।
এরপর শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে এগিয়ে নিতে আরেক ওপেনার জাদরানের সঙ্গী হন রহমত শাহ। এই দুজন মিলে শুরুর চাপ সামলে সচল রাখেন রানের চাকা। দেখেশুনে খেলে জুটি গড়ে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৭৮ রান। এমন সময়ে টাইগারদের জন্য বেশ প্রয়োজনীয় হয়েছিল একটি ব্রেক থ্রু। আর ইনিংসে নিজের করা পঞ্চম ওভারেই তা এনে দেন তাসকিন। টাইগার স্পিডস্টারের বলে বোল্ড হয়ে ৫৭ বলে ৫ চারে ৩৩ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
এদিকে রহমত ফেরার পর মাঠে নামেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। জাদরানের সঙ্গে ভালো একটি জুটি গড়ে ওঠে তারও। এ দুজন মিলে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৫২ রান। তবে দলীয় ১৩১ রানে হাসানের বলে জাদরানের ব্যাটের কোণায় বল লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। আর দুর্দান্ত এক ক্যাচে লাফিয়ে পড়ে তা লুফে নেন মুশফিকুর রহিম। ফলে ১০ চার এবং ১ ছয়ে ৭৪ বলে ৭৫ রান করেই ফিরতে হয় তাকে।
চতুর্থ উইকেটে হাশমতউল্লাহ শহীদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানরা। তবে দলীয় ১৯৩ রানে নাজিবুল্লাহ আউট হলে ভাঙে ৬২ রানের জুটি। ১৭ রান করেন তিনি। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকেননি হাশমতউল্লাহও দলীয় ১৯৬ রানে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ব্যাটার। ফলে দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো আফগান ব্যাটার বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি। আশা যাওয়ার মিছিলে শেষ পর্যন্ত রানে গুটিয়ে যায় রশিদ খানরা। টাইগারদের হয়ে তিনটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ নেন চারটি।