স্পোর্টস ডেস্ক :
শুরুতে উইকেট নিয়ে ছন্দটা ঠিক করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। পরে অবশ্য আফগানিস্তানের রান হয়েছিল লড়াই করার মতোই। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন দাস ও আফিফ হোসেন শুরু করেন দুর্দান্ত। কিন্তু দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ পড়ে যায় বিপদে। শেষ অবধি তাওহীদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
রোববার (১৬ জুলাই) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ১১৬ রান করে আফগানিস্তান। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৯ রান। ৫ বল হাতে রেখেই ওই রান তাড়া করে স্বাগতিকরা। দুই ম্যাচের দুটিই জিতে সিরিজ নিজেদের করে সাকিব আল হাসানের দল।
রনি তালুকদারের পরিবর্তে এদিন একাদশে বড় পরিবর্তন আসে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে। উদ্বোধনী জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গী করে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে পাঠায় বাংলাদেশ। আর পাওয়ার প্লে’তে এই দুই ব্যাটার মিলে দারুণ শুরু এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
১১৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুর দুই বল ডট দেয় বাংলাদেশ। পরের দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাজান লিটন দাস। প্রথম ওভার থেকে আসে ৯ রান। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে আসেন অভিষিক্ত ওফাদার। তার করা প্রথম তিন বলেই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন।
তৃতীয় ওভারে বল হাতে আসেন ভয়ংকর মুজিব উর রহমান। ওই ভোয়ার থেকে মাত্র ৫ রান নিতে পারে বাংলাদেশ। এতেই ৩ ওভার শেষে দাঁড়ায় ৩৩ রানের সংগ্রহ।
৪ রান আসে চতুর্থ ওভার থেকে। ফজল হক ফারুকিকে খেলতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে লিটন দাসকে। তবে মুজিবের করা পরের ওভার থেকে ১৩ রান তুলে পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভার থেকে বিনা উইকেটে ৫০ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লে শেষেও দুই ওপেনার দেখে শুনেই খেলতে থাকেন। রশিদ খানের ওভার থেকে মাত্র ৪ রান নেন এই দুই ব্যাটার। এরপর এই দুই ওপেনার লিটন দাস ও আফিফ হোসেন মিলে উদ্বোধনী জুটিতেই তোলে ৬৭ রান। এরপরেই ছন্দ পতন টাইগারদের। এক ওভারে দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে বাংলাদেশ।
লিটন ও আফিফের উদ্বোধনী জুটি পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভার থেকেই তুলে নেয় ৫০ রান। পাওয়ার প্লে শেষে কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাট করতে থাকে এই দুই ব্যাটার। তবে সঠিক কক্ষপথেই ছিল বাংলাদেশ। তবে ১০ ওভারে এসে পা হড়কাল টাইগাররা। মুজিব উর রহমানের করা ওভারে দুই ওপেনার এবং উইকেটে থিতু ব্যাটার লিটন ও আফিফ উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন।
মুজিবের করা ১০ম ওভারের প্রথম বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে কভারে থাকা রশিদ খান নিজের ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নেন। এতেই ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। লিটন ফেরেন ৩৬ বলে ৬টি চারে ৩৫ রান করে। ৬৭ রানে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায়।
লিটন ফেরার পর আর উইকেটে টিকতে পারেননি আফিফ হোসেনও। ওই ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিডউইকেটে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন আফিফ। তবে সেখানে থাকা করিম জানাতের হাতে ধরা পড়েন আফিফ। বাংলাদেশ মাত্র ১ রানের ব্যবধানে হারায় দুই ওপেনারকে। আফিফ ফেরেন ২০ বলে দুটি ছক্কায় ২৪ রান করে।
তিনে ব্যাট করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে তখন নতুন করে ইনিংসের হাল ধরতে হয়েছে। কিন্তু বেশি সময় উইকেটে টিকতে পারেননি তিনিও। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা ১১তম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনিও। এতেই ৭৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর দলের হাল ধরলেন অধিনায়ক সাকিব এবং তাওহিদ হৃদয়। চতুর্থ উইকেটে সাকিব এবং হৃদয় মিলে গড়েন ৩১ রানের জুটি। এতেই চাপ কাটিয়ে আবারও জয়ের পথে ফেরে টাইগাররা। তাওহিদ হৃদয় ১৫তম ওভারে ওমরজাইকে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির তালুবন্দি হন। ১০৭ রানে ৪র্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর আর পথ হারায়নি টাইগাররা। শামিম হোসেন এবং সাকিব আল হাসান মিলে বাকি কাজটা সারেন। ৫ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা। সাকিব ১১ বলে ১টি চার ও ছয়ে ১৮, শামিম ৭ বলে ১টি চারে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ব্যাটিংয়ে নেমেই তাসকিন আহমেদের তোপের মুখে পড়ে আফগানরা। ১৬ রান তুলতে তারা হারিয়ে বসে ২ উইকেট। দুটি উইকেটই তুলে নেন তাসকিন।
ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিনের প্রথম আঘাত। বাউন্সি ডেলিভারিতে রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৮) পুল করেছিলেন। কিন্তু বল সোজা উঠে যায় আকাশে। নিজেই ক্যাচ নেন তাসকিন। এতে টি-টোয়েন্টিতে ৫০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন টাইগার গতিতারকা।
এক ওভার পর এসে তাসকিন তুলে নেন হজরতউল্লাহ জাজাইকে। এবার তার গতি বুঝতে না পেরে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দেন আফগান ওপেনার (৪)।
৭.২ ওভারে আফগানিস্তান ২ উইকেটে ৩৯ রান তোলার পর বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ করতে হয়। দেড় ঘণ্টা পর মাঠ প্রস্তুত করে ফের শুরু হয় ম্যাচ। তবে বৃষ্টিতে ওভার কেটে নেওয়া হয় তিনটি করে। অর্থাৎ ২০ ওভারের পরিবর্তে এখন ১৭ ওভার করে পাবে দুই দল।
দ্বিতীয়বার খেলা শুরুর পর নবম ওভারে জোড়া জীবন পান মোহাম্মদ নবি। নাসুম আহমেদের চতুর্থ বলে কভারে নিচু ক্যাচ ধরতে পারেননি সাকিব। পরের বল ব্যাটে আলতো ছোঁয়া লেগে উইকেরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে পড়লেও পড়িমড়ি করে তিনি সেই ক্যাচ ফেলে দেন।
যদিও নবি প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। দশম ওভারে মোস্তাফিজ তাকে (২২ বলে ১৬) বানান উইকেটরক্ষকের ক্যাচ। যদিও উইকেট পাওয়া ওই ওভারেও মোস্তাফিজ ছিলেন খরুচে। দেন ১৫ রান।
এরপর দ্বিতীয়বার বল হাতে নিয়ে জোড়া শিকার করেন সাকিব। ওভারের প্রথম বলে উইকেট, আবার শেষ বলেও।
প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরান ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন লংঅন বাউন্ডারিতে আফিফের হাতে। ২৭ বল খেলে ২২ রান করেন আফগান এই ব্যাটার। আর শেষ বলে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (৫) সরাসরি বোল্ড করে দেন সাকিব।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই আজও চালিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। তবে ১৬তম ওভারে দারুণ বল করেন মোস্তাফিজ। ওয়াইড ইয়র্কার আর স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করা ওই ওভারে ওমরজাইকে তুলে নেন ফিজ। ২১ বলে ২৫ করে ডিপ থার্ডম্যানে তিনি ক্যাচ হন। ওয়াইড দিয়ে শুরু ওভারে মাত্র ৩ রান দেন কাটার মাস্টার।
পরের ওভারে তাসকিনও দুর্দান্ত বোলিং করেন। প্রথম দুই বলে ডট দেওয়ার পর তৃতীয় বলে তিনি তুলে নেন ১৫ বলে ২০ করা করিম জানাতকে। লংঅনে শান্তর ক্যাচ হন জানাত।
তাসকিন ৩৩ রানে নেন ৩টি উইকেট। মোস্তাফিজ ৩০ আর নাসুম ১৫ রানে শিকার করেন দুটি করে।