নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে বলে জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এক দফা আন্দোলন অগ্নিসন্ত্রাস। শুক্রবার (২৮ জুলাই) তারা তাণ্ডব করতে চেয়েছিল, তবে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা কিছু করতে পারেনি। কিন্তু পরের দিন তারা জ্বালাও-পোড়াও সেই আগের চেহারায় হাজির হয়েছে।
শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস আবার শুরু হয়ে গেছে। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের পুনরাবৃত্তি শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চুপ থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি চুপ থাকতে পারে না। বিএনপি বলে তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে, ঢাকা শহরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেবে। এটা কি তারেক রহমানের বাপের সম্পত্তি।
বিএনপি পরিকল্পিতভাবেই আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে এমন মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, তারা ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ বন্ধ করে দেবে। তারা অতিরিক্ত জামাকাপড় ও চাদর নিয়ে আসতে বলেছিল। শেখ হাসিনাকে না নামিয়ে ফিরে যাবে না, এটা সিদ্ধান্ত অর্থপাচারকারী, আর রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে পাড়ি দেওয়া তারেকের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক জিয়া প্রতিনিয়ত আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছে। প্রতিনিয়ত আদালত অবমাননা করছে। সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্টকে গালিগালাজ করছে। কালকে (শুক্রবার) তো তারেক এমনো বলেছে- একটা লাশ পরলে দশটা লাশ পড়বে! লাশ ছাড়া সে কথা বলে না! টাকা ছাড়া সে কথা বলে না! প্রকাশ্যে বলে- আন্দোলন করো, টাকার অভাব হবে না! তারেক কি আইনের ঊর্ধ্বে? তাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা আইন মানে না। আইন নিয়ে কটাক্ষ করে।
ওবায়দুল কাদেও আরো বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই- বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস আবার শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সৈনিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী চুপ করে থাকতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করব। নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধ করব।
তিনি বলেন, ভিডিও নির্দেশেনা দিয়েছে, আদালতের আদেশ প্রতিনিয়ত তারেক রহমান লঙ্ঘন করে চলেছে। আদালতের আদেশ ছিল তার কোনো বক্তব্য কোনো ফর্মে চালানো যাবে। আদালতকে সে গালিগালাজ করে চলেছে। বক্তব্য, স্টেটমেন্ট কিছু দিতে পারবে না, এটা লঙ্ঘন করে চলেছে। সে বলেছে আন্দোলন কর টাকার অভাব হবে না। সে তার বাবার মতোই বলছে। জিয়াউর রহমানও বলেছিলেন, মানি ইস নো প্রবলেম।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সফল করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ গতকাল রেকর্ড উপস্থিতিতে চেতনার অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, নবজাগরণের সৃষ্টি করেছে। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, আমাদের নেত্রীও শুক্রবার (২৮ জুলাই) এ নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের তারুণ্যের যে শক্তি আছে, সেটাতে আমাদের নেতারাও খুশি হয়েছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) বলে তাদের কর্মসূচি দেখে আমরা কর্মসূচি দেই। এবার তো তাদের কর্মসূচি হয়নি, কিন্তু আমাদের হয়েছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা মাতুয়াইলে চারটি পরিবহনে আগুন দিয়েছে। ইশা পরিবহন, স্বদেশ পরিবহন পুড়িয়ে দিয়েছে, পুলিশ ভ্যানেও হামলা করেছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে হামলা করেছে। ওয়েলকাম পরিবহনে শুধু হামলায় করেনি, অগ্নিসংযোগ করেছে। সদরঘাটেও ভিক্টর পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। রাজধানীতে তারা মোট সাতটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করেছে। ধোলাইখাল মোড়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাহিদকে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওসি গোলাম মোস্তফাকে মারধর করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের আওয়ামী লীগ কর্মী মুহিবুর রহমান নয়নের ওপর হামলা করে কবজি কেটে নিয়েছে।
এর আগে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এ জরুরি সভা শুরু হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছেন।
জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনিবাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, মারুফা আক্তার পপি, তারানা হালিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।
এছাড়া শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ উপস্থিত রয়েছেন।
জরুরি সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামশ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।