নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে ফ্যাসিবাদ থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি মিলবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে যুদ্ধ ও লড়াই শুরু হয়েছে। অনেকেই অনেক কথা বলছেন, সেদিকে কান দেবেন না। এ লড়াইয়ে কাজ করে যেতে হবে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সমাবেশে’ তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ একটা ভালো খবর আছে কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। ট্যারিফ কী জানেন? আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করব তার ওপর ৩৫ ভাগ ট্যাক্স নিয়ে নেবে। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ৫০ টাকা ওটার সঙ্গে আরও ৩৫ টাকার যোগ হবেৃ তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না।
ফখরুল বলেন, ওটাকে (যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ) আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং উপদেষ্টারা আলোচনা করে কমিয়ে ২০% পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারকেৃ অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক ভুল-ত্রুটি আছে, অভিজ্ঞতা নাই বেশি। আমি আশা করেছিলাম যে, এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে প্রকৃত তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য তারা পুরোটা করতে পারেননি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছেন।
গতকালই (বৃহস্পতিবার) সংস্কার কমিশনের বৈঠক শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কথা দিয়েছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেৃ। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে চায়।
তিনি বলেন, আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলো, আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাই তো? আছে? তাহলে আমি যাব কার কাছে। আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? লোক নাই। এজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা বিরাট ভয়ংকর একটা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদেরকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না। তাদেরকে আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং তাদেরকে কোনো মতেই সামনে আসতে দেব না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ওপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ একইভাবে আজ তারা তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তিনি দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন তিনি অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই কামনা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি বলছেন যে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, ভোট দিতে পারবে, সাধারণ গরিব মানুষ সে গরিব থাকবে না, আস্তে আস্তে সে উন্নতির দিকে যাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আগামীতে তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছেন তার কথাও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
এক বছর আগে এই দিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিলে উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদী পতনের আন্দোলনের শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের শহীদদের পরিবারের বেদনা-কষ্টের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।