Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এ দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এ দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোয়া তোলে আর প্রতিদিন আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ-নিরপক্ষে নির্বাচন চায় না। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাওয়া রেলস্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাঙালির ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশ আমাদের। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভোট চুরি করা ছাড়া কোনোদিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট ৩০০ সিটে পেয়েছিল মাত্র ২৯টি। তারপর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট আর মানুষের জীবন নিয়ে খেলার ধ্বংসযজ্ঞে মেতে আছে।

আগের সরকারগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল কেউ ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে রেল যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক ভদ্রলোক হ্যাঁ বিশ্বজুড়ে নাম জুড়িয়েছে তার, কিন্তু সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার কারণে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তার পক্ষে। সেইদিন বলেছিলাম, নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা তা করে দেখিয়েছি। ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে সবকিছু স্মার্ট হবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। মাঝে মাঝে দুঃসময় আসে। বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ে আমাদের কাছেও আসে। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজের উৎপাদনে নিজেরা চলবো। জাতির পিতার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। এ জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আর বিএনপি ধ্বংস নিয়েই আছে। তারা রেল উপড়ে ফেলা, বাসে আগুন, মানুষের জানমাল ধ্বংস করেছে। তারা এই ধ্বংসের মধ্যেই থাকবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।

দেশের সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। রেলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি। আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমরা ডুয়েল গেজ ও ব্রড গেজ এই ধরনের রেললাইন আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে করে আমাদের রেল গতিশীল হয়, যাতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে আরও সক্ষমতা অর্জন করে। ভবিষ্যতে আরও ৪৬টি নতুন ব্রড গেজ, লোকোমোটিভ ৪৬০টি, নতুন ব্রড গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ২০০টি, মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ১ হাজার ৩১০টি সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি, তিন-চার বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে রেলের যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ভূমি ও গৃহ দিয়েছি। মডেল মসজিদ করে দিয়েছি সব জেলা উপজেলায়।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আড়াই কোটি শিক্ষার্থী বৃত্তি-উপবৃত্তি পাচ্ছে। যাতে দেশটা এগিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ল্যাব করে দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা দিচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ লক্ষ্য ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষিত করছি। তারা ইউনিয়নে বসে দেশ বিদেশের কাজ করে উপার্জন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রেলের সার্বিক উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা সাড়ে ১৪ বছরে ৮৭৩ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ করেছি। ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৩৯১ কিলোমিটার লাইন পুনর্র্নিমাণ করা হয়েছে। এক হাজার ৩৭টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ ও ৭৯৪টি রেল সেতু পুনর্র্নিমাণ করেছি। ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ২৩৭টি স্টেশন ভবন পুনর্র্নিমাণ করেছি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়েছি। আশা করি, ৩ থেকে ৪ বছরেরর মধ্যে বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। তখন থেকেই জনগণের সেবা শুরু করি। এর আগের ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কেনো মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি? আসলে তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। তারা চায় না, স্বাধীন দেশটি এগিয়ে যাক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। আজকে যারা নির্বাচনের ধোয়া তোলে তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বপ্ন পূরণের দিন। এই শুভদিনে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

তিনি বলেন, আজ যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হলো, আসলে এই রেল লাইন ভাঙ্গা পর্যন্ত এখন আমরা করেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোরে সংযোগ হবে। আর যশোর থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযোগ হচ্ছে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। আরেকটি প্রকল্প আমাদের মাথায় আছে, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে এটা ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে, এটা করা খুব কঠিন, কারণ আমাদের মাটি নরম, সক্ষমতা একটু কম। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আমাদের লক্ষ্য ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা।

শেখ হাসিনা বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ সাল থেকে ৯৬, আর ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন পারেনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে। আসলে তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেনি, এদেশের মানুষের দিকে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরাই প্রথম এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কর্মসূচি নি তার সুফল আজ দেশবাসী পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের আহ্বান করছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। আপনারা প্রতিটি জমিতে আবাদ করুন।

এ সময় কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের আহ্বান করছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। আপনারা প্রতিটি জমিতে চাষাবাদ করুন।

তিনি আরও বলেন, সারের দাম আমরা কমিয়েছি। ভর্তুকি দিয়েছি। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কারও কোনো সমস্যা হলে আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পাশে দাঁড়ান। এভাবে আমরা মানুষের উন্নয়ন করছি।

এই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার নেতা, নিহত মুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫ এর পনেরো আগেস্ট নিহত শহীদদের।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবিএম ফজলে নূর করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এ দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এ দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোয়া তোলে আর প্রতিদিন আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ-নিরপক্ষে নির্বাচন চায় না। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাওয়া রেলস্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাঙালির ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশ আমাদের। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভোট চুরি করা ছাড়া কোনোদিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট ৩০০ সিটে পেয়েছিল মাত্র ২৯টি। তারপর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট আর মানুষের জীবন নিয়ে খেলার ধ্বংসযজ্ঞে মেতে আছে।

আগের সরকারগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল কেউ ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে রেল যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক ভদ্রলোক হ্যাঁ বিশ্বজুড়ে নাম জুড়িয়েছে তার, কিন্তু সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার কারণে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তার পক্ষে। সেইদিন বলেছিলাম, নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা তা করে দেখিয়েছি। ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে সবকিছু স্মার্ট হবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। মাঝে মাঝে দুঃসময় আসে। বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ে আমাদের কাছেও আসে। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজের উৎপাদনে নিজেরা চলবো। জাতির পিতার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। এ জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আর বিএনপি ধ্বংস নিয়েই আছে। তারা রেল উপড়ে ফেলা, বাসে আগুন, মানুষের জানমাল ধ্বংস করেছে। তারা এই ধ্বংসের মধ্যেই থাকবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।

দেশের সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। রেলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি। আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমরা ডুয়েল গেজ ও ব্রড গেজ এই ধরনের রেললাইন আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে করে আমাদের রেল গতিশীল হয়, যাতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে আরও সক্ষমতা অর্জন করে। ভবিষ্যতে আরও ৪৬টি নতুন ব্রড গেজ, লোকোমোটিভ ৪৬০টি, নতুন ব্রড গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ২০০টি, মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ১ হাজার ৩১০টি সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি, তিন-চার বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে রেলের যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ভূমি ও গৃহ দিয়েছি। মডেল মসজিদ করে দিয়েছি সব জেলা উপজেলায়।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আড়াই কোটি শিক্ষার্থী বৃত্তি-উপবৃত্তি পাচ্ছে। যাতে দেশটা এগিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ল্যাব করে দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা দিচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ লক্ষ্য ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষিত করছি। তারা ইউনিয়নে বসে দেশ বিদেশের কাজ করে উপার্জন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রেলের সার্বিক উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা সাড়ে ১৪ বছরে ৮৭৩ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ করেছি। ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৩৯১ কিলোমিটার লাইন পুনর্র্নিমাণ করা হয়েছে। এক হাজার ৩৭টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ ও ৭৯৪টি রেল সেতু পুনর্র্নিমাণ করেছি। ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ২৩৭টি স্টেশন ভবন পুনর্র্নিমাণ করেছি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়েছি। আশা করি, ৩ থেকে ৪ বছরেরর মধ্যে বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। তখন থেকেই জনগণের সেবা শুরু করি। এর আগের ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কেনো মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি? আসলে তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। তারা চায় না, স্বাধীন দেশটি এগিয়ে যাক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। আজকে যারা নির্বাচনের ধোয়া তোলে তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বপ্ন পূরণের দিন। এই শুভদিনে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

তিনি বলেন, আজ যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হলো, আসলে এই রেল লাইন ভাঙ্গা পর্যন্ত এখন আমরা করেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোরে সংযোগ হবে। আর যশোর থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযোগ হচ্ছে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। আরেকটি প্রকল্প আমাদের মাথায় আছে, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে এটা ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে, এটা করা খুব কঠিন, কারণ আমাদের মাটি নরম, সক্ষমতা একটু কম। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আমাদের লক্ষ্য ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা।

শেখ হাসিনা বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ সাল থেকে ৯৬, আর ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন পারেনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে। আসলে তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেনি, এদেশের মানুষের দিকে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরাই প্রথম এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কর্মসূচি নি তার সুফল আজ দেশবাসী পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের আহ্বান করছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। আপনারা প্রতিটি জমিতে আবাদ করুন।

এ সময় কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের আহ্বান করছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। আপনারা প্রতিটি জমিতে চাষাবাদ করুন।

তিনি আরও বলেন, সারের দাম আমরা কমিয়েছি। ভর্তুকি দিয়েছি। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কারও কোনো সমস্যা হলে আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পাশে দাঁড়ান। এভাবে আমরা মানুষের উন্নয়ন করছি।

এই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার নেতা, নিহত মুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫ এর পনেরো আগেস্ট নিহত শহীদদের।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবিএম ফজলে নূর করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ।