Dhaka সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে কমিশন গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশন ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে তারা।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ এর ক্ষমতাবলে এই কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে এ কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ তদন্ত কমিশন গঠন করা করল সরকার।

কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়, ‘২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা।’

এতে বলা হয়, ‘জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোরর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ করা; জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা; জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয়নির্বাহ করবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতা ও সরকারের সমালোচকদের গুম করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন, যারা তাদেরকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গুম করে কয়েক বছর ধরে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন।

এছাড়া, আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম এক দশকেরও বেশি সময় আগে গুম হলেও, তাদের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রত্যেকটি গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে কমিশন গঠন

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৮:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশন ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে তারা।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ এর ক্ষমতাবলে এই কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে এ কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ তদন্ত কমিশন গঠন করা করল সরকার।

কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়, ‘২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা।’

এতে বলা হয়, ‘জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোরর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ করা; জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা; জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয়নির্বাহ করবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতা ও সরকারের সমালোচকদের গুম করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন, যারা তাদেরকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গুম করে কয়েক বছর ধরে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন।

এছাড়া, আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম এক দশকেরও বেশি সময় আগে গুম হলেও, তাদের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রত্যেকটি গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।