Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : সিইসি

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ১১:২১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • ২০৫ জন দেখেছেন

জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

রবিবার (১৩ জুলাই) বিবিসি বাংলা এই সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তা প্রকাশ করা হলো।

বিবিসি বাংলা: আপনি এমন একটা সময়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছেন যখন কি-না বাংলাদেশ একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আছে। বড় প্রশ্ন এখন, নির্বাচন কবে হবে সেটা কি এখন আপনি বলতে পারবেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন: ‘ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট ফর মি টু রেসপন্ড, বিকজ আই মাইসেলফ ওন্ট নো এক্স্যাক্ট ডেট (সুনির্দিষ্ট তারিখ)। পোলিং ডেটটা জানি না। এপ্রিলে ফার্স্ট হাফে (প্রথমার্ধে) বলা হচ্ছে। দ্যাট কাইন্ড অফ থিং, উইল বি কমিউনিকেট টু আস, উইথ সাম আইডিয়া দ্যাট–– প্লিজ গো এহেড- দিস ইজ দ্য রেঞ্জ।

বিবিসি বাংলা: সরকার আপনাদের জানাবেন যে এই সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে। সেটা কী এখনো জানাননি?

নাসির উদ্দিন: আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি যে আইদার ফেব্রুয়ারি, মানে রমজান মাসের আগে অথবা এপ্রিলে। যেটা সব সময় উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলে আসছেন। সেটাই জানি, যেটা আপনি জানেন- দেশবাসী জানে, ওনার বক্তব্য থেকে। সেটা আমিও জানি।

বিবিসি বাংলা: সরকার থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা প্রস্তুত হতে বলেছেন, সরকার আপনাদের কিছু বলেননি যে কবে নির্বাচন হতে পারে বা কোন সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: না সেরকম বলে নাই। আমরা ধরে নিচ্ছি, ইট ইজ আওয়ার অ্যাসাম্পশন (আমাদের ধারণা) যে বর্তমানে যে টাইম ফ্রেম বলা হচ্ছে, আইদার আর্লি ফেব্রুয়ারি বিফোর রমাদান, অর ইট মে বি সাম টাইম ইন দ্য ফার্স্ট হাফ অব এপ্রিল। হতে পারে, এপ্রিলের প্রথম দিকে হতে পারে। আমরা প্রথম থেকেই ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কারণ তখন তিনি ডিসেম্বর টু জুন বলেছিলেন। এজন্য আমরা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে- ফ্রম ডে ওয়ান উই স্টার্টেড প্রিপেয়ারিং আওয়ারসেলভ।

বিবিসি বাংলা: সেটা কবে থেকে? আপনারা যখন শুরু করলেন তখন থেকে?

বিবিসি বাংলা: আপনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন আপনাকে কোনো টাইমফ্রেম বা সময়সীমা নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে এই সময়ের মধ্যে দেওয়া হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: না দেওয়া হয় নাই। বাট আমি ধরে নিয়েছি যে ইলেকশন তো একটা হবে। আমি প্রথমে আমার অফিসারদের সাথে বসেছি, যে-একটা ইলেকশন করতে গেলে কী কী দরকার, কী কী কাজ আমাদেরকে করতে হবে, কী কী কাজ বাকি আছে। উনারা আমাদের একটা চার্ট করে দেবেন এবং কোন কাজ করতে কতদিন লাগে সেটা দেবেন। তখন তো আমরা জানি না ডিসেম্বর বা অন্য কোনো টাইমলাইন তো তখনও আসে নাই।

বিবিসি বাংলা: ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে আপনার প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করলেন?

নাসির উদ্দিন: যখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন; সম্ভবত গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর উনি যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তখন আমি মৌলভীবাজারে ছিলাম। ওখানে বসেই আমি শুনলাম যে ‘আইদার ইট উইল বি ইন ডিসেম্বর, অর ইন জুন’- এটা শুনলাম উনার বক্তব্যের মধ্যে।

বিবিসি বাংলা: শোনার পর ভাবলেন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: হ্যাঁ, এইটা শোনার পরে প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিলাম আমরা, ডিসেম্বরকে ধরে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে। কারণ ইলেকশনের ডেট থেকে অন্তত দুই মাস আগে আমাদের শিডিউল ঘোষণা করতে হয় আমাদের আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারে।

কারণ তফসিল ঘোষণ থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত যে কর্মকাণ্ডগুলো দরকার, তাতে অন এভারেজ দুই মাস না হলে পারা যায় না। যেমন ধরেন, নমিনেশন ফাইল করার জন্য সময় লাগে।

বিবিসি বাংলা: তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দুই মাস কমপক্ষে লাগবে। আপনাদের কথায় মনে হচ্ছে সরকার থেকে আপনারা এই তথ্যগুলো গণমাধ্যম থেকে পাচ্ছেন। কিন্তু সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা বা কিছু বলছে কি-না?

নাসির উদ্দিন: আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো গাইডেন্সও নাই, পরামর্শও নাই, আদেশও নাই, নির্দেশও নাই, নাথিং। আমরা অ্যাবসোলিউটলি ইন্ডিপেনডেন্টলি এই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: একটা ধারণা দেওয়া যে এই সময়ের মধ্যে হতে পারে, এটা আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে পাননি?

নাসির উদ্দিন: না পাইনি, পাইনি।

বিবিসি বাংলা: কিছুদিন আগে আপনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। একটা একান্ত বৈঠক হয়েছিল, কী কথা হয়েছে?

নাসির উদ্দিন: দেখেন, আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত উনার সাথে ফরমাল কোনো মিটিং হয়নি। দেখা হয়েছে ঈদের দিন বা এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে, ওইটুকুই। আমি মনে করলাম ওনার সাথে ফরমাল একটা দেখা করা দরকার।

এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য আমি যাইনি।

আমি প্রেসে বলেছিলাম, সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্থ এই নয় যে সালাম দিয়ে বসে থাকলাম ৪৫ মিনিট। তারপর আবার চলে আসলাম ওয়ালাইকুম আসসালাম দিয়ে। ইট ডাজ নট মিন দ্যাট।

অভিয়াসলি, উনি হেড অব দ্য গভমেন্ট, উনার জন্য একটা নির্বাচন সামনে আছে, যে নির্বাচনটা আমাকে ডেলিভার করতে হবে, ইসিকে ডেলিভার করতে হবে। অভিয়াসলি, নির্বাচনটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। শুধু উনি জানতে চেয়েছেন যে আমাদের প্রিপারেশনের অবস্থা কী, স্ট্যাটাসটা কী, আমরা কতদূর এগিয়েছি, প্রস্তুত কী রকম।

উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি উনাকে ডিটেইল জানিয়েছি আমি কী কী করেছি, কী কী করতেছি, কী কী বাকি আছে বা আমাদের টাইমলাইনটা কী, কখন আমরা শেষ করতে পারবো। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একটা ব্রিফ (ধারণা) ওনাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমি দিয়েছি। কারণ এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার।

বিবিসি বাংলা: আপনি দেখা করতে চেয়েছিলেন, নাকি উনি দেখা করতে চেয়েছিলেন?

নাসির উদ্দিন: অ্যাকচুয়ালি, উনি কোনো আমাদের ডাকেননি। আমাদের তরফ থেকে যোগাযোগ করে উনার অফিসের সাথে, জাস্ট কার্টেসি কলের জন্য। কারণ, আমরা মনে করতেছিলাম যে এইখানে আরও কারণ আছে। অনেক ধরনের বক্তব্য আসতেছিল, সাংবাদিকরাই জিজ্ঞেস করতেছিল সরকারের সাথে যোগাযোগ নাই? কোনো ধরনের কানেকশন নাই? মনে হচ্ছিল এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

আমি দেখলাম যে অন্তত দেখা করলে এই জিনিসটা অ্যাভয়েড করা যাবে। আমরা চেয়েছিলাম- উনি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টাইম দিয়েছেন। ওইভাবে গেছি আরকি।

বিবিসি বাংলা: আপনি বলছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে উনি জানতে চেয়েছেন, কিন্তু আপনি জানতে চাননি যে নির্বাচন কবে হতে পারে? কারণ সেই ধারণা তো সরকারকে দিতে হবে।

নাসির উদ্দিন: আমি জানতে চাই না। কারণ, আমি তো উনার পজিশন দেখতেছি। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু আর্লি (দ্রুত) চায়, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু পরে চায়। এসব নিয়ে নানা রকম প্রবেলেম আছে।

আমি মনে করলাম উনার কাছ থেকে ডেট নিয়ে আমার কাছে অ্যাডভাইজাবেল হবে না। সে জন্য টাইম নিয়ে কিছু বলি নাই। টাইম নিয়ে তো উনি ওপেনলি, পাবলিকলি বলতেছেন। উনার পাবলিক স্টেটমেন্ট থেকে যেটুকু আপনারা জানেন, সেটুকু আমিও জানি স্পেসিফিক ডেট সম্পর্কে।

কিন্তু দুই মাস আগে, নিশ্চয়ই শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদেরকে জানাবে। কারণ শিডিউল ঘোষণা করবো আমরাই। তখন পোলিং ডেট আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে। এন্টায়ার স্কেজিউল আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে।

বিবিসি বাংলা: সরকারপ্রধানের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত বৈঠক কিছুটা ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। সাধারণত হয় না..।

নাসির উদ্দিন: দেখেন, দিস ইজ স্পেশাল টাইপ অব সিচুয়েশন, স্পেশাল টাইপ অব গভমেন্ট। এটা নিউট্রাল গভমেন্ট। আমিও নিউট্রাল। পলিটিক্যাল গভমেন্ট যখন পাওয়ারে থাকে, তখন হেড অব দ্য গর্ভমেন্টের আন্ডারে একটা দল থাকে। অভিয়াসলি চিফ ইলেকশন কমিশন যখন দেখা করবে, এটা একটা কোয়েশ্চেনাবেল। কারণ উনি তো একটা দলের নেতৃত্বে আছেন। তখন একটা পার্টিকুলার দল বেনিফিট পেতে পারে। এজন্য সাধারণত ডিসকারেজ করা হয়।

কিন্তু এখন বাংলাদেশে যে সিচুয়েশন, তাতে সরকার প্রধানের নিজস্ব কোনো দল নাই। উনি কোনো দলের পক্ষের নয়। সুতরাং এখানে আমিও নির্দলীয়ভাবে কাজ করবো। উনিও নির্দলীয়। আমি মনে করলাম এখানে কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।

বিবিসি বাংলা: তার মানে এটাকে আপনি সমস্যা মনে করেননি?

নাসির উদ্দিন: না না, আমি একদমই সমস্যা মনে করিনি।

‘জনগণ সাথে থাকলে মব বা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা নয়’

বিবিসি বাংলা: দু মাস আগে আপনারা জানলে আপনারা তফসিল ঘোষণা করবেন। তার মানে আপনারা দু’মাস আগেই জানবেন? কারণ সাধারণত যেটা দেখা যায় কারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগে একটা রোডম্যাপ দেওয়া হয়। রোজার আগে নির্বাচনের একটা কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি। সেক্ষেত্রে সময় খুব বেশি নেই। সেই রোডম্যাপের ব্যাপারে আপনারা কিছু ভেবেছেন?

নাসির উদ্দিন: দুই মাস আমার সময় দরকার। যেদিন তফসিল ঘোষণা করবো তার থেকে দুই মাস সময় দরকার, টিল দা পোলিং ডে (ভোটের দিন)) পর্যন্ত।

এটার মানে এই নয় যে- যেদিন ঘোষণা করবো ওইদিন সকাল বেলা আমাকে জানাইলো আর আমি অনএয়ারে চলে গেলাম। বিষয়টা সে রকম না। দুই মাস মিনিমাম দরকার তো। নিশ্চয়ই উনারা আগে জানাবেন।

আমার তো ঘোষণার জন্যও একটা প্রস্তুতি দরকার। এর মধ্যে তো ইলেকশনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবো, ইনশাআল্লাহ।

বিবিসি বাংলা: বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। আপনারা কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?

নাসির উদ্দিন: সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যদি হয় আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রস্তুত। আমরা ওভাবে করতে চাই, উনারা যে তারিখে পোলিং ডেট চান, যেদিন ভোট হয়, সেদিন যাতে আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুতিটা নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখন নেই, এটার বিষয়ে আপনার কী মত?

নাসির উদ্দিন: অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।

বিবিসি বাংলা: তারা আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির কথা বলছেন, মব ভায়োলেন্স বা দলবদ্ধ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেটার কথা বলছেন। এর মাঝে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে?

নাসির উদ্দিন: চ্যালেঞ্জিং হবে। বাট ইট ইজ পসিবল। চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখন তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অগাস্টে যা দেখছিলাম বা গত বছরের আটই অগাস্টে যা দেখছিলাম অনেক ইম্প্রুভ করে গেছে না? অনেক ইম্প্রুভ করছে।

ধরেন নির্বাচন যখন হবে, তখন ওই সময়ের মধ্যে দেখবেন যে সব কিছু শান্ত, অসুবিধা হবে না। বিশেষ করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল ছোট হোক বড় হোক, তারা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে প্রথম থেকেই। কেউ বলে নাই যে আমি আগের মতো নির্বাচন চাই। জনগণ যদি আপনার সাথে থাকে, কোনো রকমের কোনো মব বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপনাকে তো ক্ষতি করতে পারবে না।

বিবিসি বাংলা: জনগণ তো মব চায় না। কিন্তু সেটা তো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখন পর্যন্ত। দেখা যাচ্ছে তো এটা হচ্ছে নিয়মিত।

নাসির উদ্দিন: আমি কনফিডেন্ট যে ইলেকশন যখন হবে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ব্রিফিং দিয়েছেন। শুধু পুলিশকে নয়, উনি তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্মি থেকে আরম্ভ করে, আর্মি কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, বিজিবি কীভাবে হবে ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন করেছেন।

এই চ্যালেঞ্জেসগুলো সামনে রেখে কিন্তু সরকারের যেমন তার নিজস্ব প্রস্তুতি চলছে, আমাদেরও কিন্তু একই রকম প্রস্তুতি চলছে। এই সব চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু আমাদের মাথায়ও আছে। এগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য আমরা প্রস্তুত। সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নেবো।

বিবিসি বাংলা: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আপনারা মনে করছেন না খুব একটা সমস্যা হবে? নির্বাচনের জন্য এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

নাসির উদ্দিন: আমি মনে করি যে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নট বি প্রবলেম, আমি মনে করি।

‘অবশ্যই নিরপেক্ষ, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি’

বিবিসি বাংলা: এর মাঝে কোনো কোনো দল আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যেমন এনসিপি। আপনারা কি নিজেদের নিরপেক্ষ বলবেন?

নাসির উদ্দিন: অবশ্যই নিরপেক্ষ। আমাদের- ইট ইজ অ্যা কমিটমেন্ট গিভেন টু দ্য নেশন।

যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিনই আমি কমিট করেছি, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি। এমনকি আমার অফিসে যারা কাজ করেন, গত দোসরা মার্চ প্রথম রোজায় ভোটার দিবসে সবাইকে হাত তুলে শপথ করিয়েছি যে- আপনারা সবাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, এমন ওয়াদা আমাকে দেন। পহেলা রমজান অধিকাংশ রোজাদার হাত তুলে শপথ করেছে।

সুতরাং ইসি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, ওই রাজনৈতিক বক্তব্য এগেইন দিতে পারে। সময়ের বিবর্তনে যখন দেখবে আমরা কাজ করছি নিরপেক্ষভাবে, আস্তে আস্তে যখন আমাদের কাজকর্ম আরও সম্প্রসারিত হবে, তারা রিঅ্যালাইজ করবে যে না- এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আছে। তাদের আস্থা আমাদের ওপর আসবে।

বিবিসি বাংলা: তাদের একটা অভিযোগ যে আপনারা বিএনপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। বিএনপির সাথে আপনার কি সম্পর্ক আছে?

নাসির উদ্দিন: আমি তো বিএনপির সদস্যও না, কোনো নেতাও না। কারও প্রতি আমাদের যে দুর্বলতা আছে, এটা বলতে পারে পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট তো দিতেই পারে। আপনি তো এটা শুনছেন, অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে। একেকজন একেকটা বলে। এগুলো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। আমি এগুলোকে সেভাবে দেখি। উনারা বলতেই পারে।

উনাদের তো বলার অধিকার আছে, বলবেই। আমাদের কাজকর্ম দেখে উনারা এক পর্যায়ে বুঝে যাবে যে এখান থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়।

আমি ওই চেয়ারটাকে (সিইসির চেয়ার) একটা বিচারকের আসন মনে করি। সুতরাং আমার হাত দিয়ে যেন অবিচার না হয়। আমি সবার জন্য যেন সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারি, বিচারকের মতো করেই আমি এই কাজটা করতে চাই।

বিবিসি বাংলা: একটা উদাহরণের কথা তারা বলেন। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঘটনায় ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট দিলেন। সেটা আপনারা আদালতের নির্দেশে দিয়েছেন, কিন্তু আপনারা সেই গেজেট দেওয়ার আগে আপিলের দিকে কেন গেলেন না?

নাসির উদ্দিন: ওই অর্ডারটা আসছিল নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল থেকে। নির্বাচনি অপরাধ কীভাবে ডিল করবে সেটা আমাদের আইনে বলা আছে। ওটা ছিল লোকাল গভমেন্ট আইনের অধীনে। আপনি যদি চিন্তা করেন আপনার অপনেন্ট আপনার প্রতি ইনজাস্টিস করেছে, কোনো মিস ম্যানেজমেন্ট করেছে বা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জিতে গেছে, তখন আপনার উচিত হবে ট্রাইব্যুনালে যাওয়া। ওখানে ফেল করলে তখন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে যাবেন।

এই ট্রাইব্যুনালগুলো আমরা গঠন করে দেই। আমার গড়া একটা কোর্টে আমি কী একটা পক্ষভুক্ত হইতে পারি? আইনের বিধানও নাই, আর এটা জিজায়রেবলও না। ওইটা- ডাইরেকশন ফ্রম দ্য ট্রাইব্যুনাল।

বিবিসি বাংলা: এই বিষয়টা নিয়ে সরকারের কোনো কোনো জায়গা থেকে কথা বলা হয়েছে, ইশরাক হোসেনের সাথে একটা দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। এটা নিয়ে কি সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে?

নাসির উদ্দিন: আমি মনে করি না। কারণ, উনারা তো আইনি ব্যাখ্যাটা বুঝে গেছেন। এর মধ্যে আমরা প্রায়শ বলেছি, ব্রিফিং দিয়েছি। আসলে উনারা বুঝে গেছে আইনে বিধান নাই। অ্যাটলিস্ট ট্রাইব্যুনাল, অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত।

আমরা কনটেস্ট করতে পারবো হাইকোর্টে যদি কেউ রিট করে, বা অ্যাপিলেট ডিভিশনে কেউ যদি যায়, ওখানে আমাদের যাইতে হবে। নট ইন দ্য ট্রাইব্যুনাল অর অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল।

আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ইসির অবস্থান কী?

বিবিসি বাংলা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে সরকার, তার অর্থ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না তারা?

নাসির উদ্দিন: উনাদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যদি বিচার শেষ হয়, যদি শাস্তি না দেওয়া হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া না হয়; সরকারের যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী তাদের রেজিস্ট্রেশন রাখাই তো মিনিংলেস হয়ে যায়। তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। এ জন্য আমরাও রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দিয়েছি।

বিবিসি বাংলা: আপনার কি মনে হয়, যদি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তখন নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হলো কি-না সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে?

নাসির উদ্দিন: সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো- যারা ভোটারস আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এখন ইনক্লুসিভের ডেফিনিশন তো একেকজনের কাছে একেক রকম।

বিবিসি বাংলা: আপনার কাছে কী?

নাসির উদ্দিন: ওই যে বললাম পার্টিসিপেটরি ইলেকশন টু ইনক্লুড দি ভোটারস অ্যাজ মাচ ইজ পসিবল।

বিবিসি বাংলা: আপনার কী মনে হয় আওয়ামী লীগের যে সমর্থকগোষ্ঠী তারা সবাই ভোটে আসবে, ভোট দেবে?

নাসির উদ্দিন: আমি তো আশা করি তারা আসবে। এদের সমর্থকগোষ্ঠী আছে তো। তারা যে একেবারেই আসবে না এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অফ দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ অ্যা ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ এ ভোটার।

বিবিসি বাংলা: সাবেক দুইজন নির্বাচন কমিশনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে হেনস্তাও করা হয়েছে। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

নাসির উদ্দিন: দেখেন এটা একটা বিচারাধীন বিষয়। এই বিচারাধীন বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমার পক্ষ থেকে এ নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

বিবিসি বাংলা: হেনস্তার বিষয়টা নিয়ে….?

নাসির উদ্দিন: হেনস্তার বিষয়টা তো কেউ পছন্দ করবে না। এটা তো ঠিক আইন অনুযায়ী বিচার হবে, এটাই তো হওয়া উচিত। দেখছি যে যারা হেনস্তা করছে তারা অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে ডিউ লিগ্যাল প্রসেসে এটা আগাবে।

‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট নিয়ে ভাবছি না’

বিবিসি বাংলা: জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথাও বলছেন কেউ কেউ। আপনার কী মনে হয় এটা হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে স্থানীয় সরকারে ৬১ জেলা পরিষদ আছে। ৫৬৫টি টা আছে উপজেলা, পৌরসভা আছে ৩৩০, সিটি করপোরেশন আছে ১২টা, ইউনিয়ন কাউন্সিল আছে ৪৫৯২টা।

এই ইলেকশনগুলোতে খুব সহিংসতা হয়। দেখা যায় যে এক বাড়ি থেকে দুই জন দাঁড়ায়ে গেছে, এজন্য খুব সহিংসতা হয়, খুব খুন খারাপি হয়। এই জন্য এই ভোটগুলো ধাপে ধাপে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবকিছু মবিলাইজ করতে সুবিধা হয়। পাঁচ, ছয় বা সাত ধাপে এগুলো করা হয়।

ধাপে ধাপে করতে গেলে দেখা যায় যে এটা দশ মাস থেকে এক বছর সময় লাগে কমপক্ষে। এখন আমাদের জাতীয় নির্বাচনের আগে তো সেই সময় তো নাই।

বিবিসি বাংলা: আপনার কাছে কি এটা বাস্তবসম্মত মনে হয় না?

নাসির উদ্দিন: আমি তো স্থানীয় নির্বাচন বাস্তবসম্মত না এটা বলি নাই। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এ পর্যন্ত যত বক্তব্য দিয়েছেন সবখানে জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বলেছেন। উনি একটি বারের জন্যও বলেন নাই স্থানীয় নির্বাচন অমুক সময়ে হবে।

আমরা উনার বক্তব্যকে সামনে রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পলিটিক্যাল ডিবেট তো আছেই, কিন্তু আমরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে সামনে রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: তার মানে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আপনারা ভাবছেন না?

নাসির উদ্দিন: আমরা ভাবছি না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই কাজ করছি।

‘শাপলা প্রতীক হিসেবে কেউ পাবে না’

বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল আপনাদের কাছে নিবন্ধন চেয়েছে। প্রায় দেড়শোর মতো। অনেকের সাইনবোর্ডও নাই। ঝড়ে উড়ে গেছে। এই নিবন্ধনের ব্যাপারে আপনারা কী করবেন? নির্বাচনের সময় তো খুব বেশি নেই।

নাসির উদ্দিন: আমাদের তো স্ক্রুটিনি (যাচাই বাছাই) শুরু হয়ে গেছে। আমরা সব আবেদন পর্যালোচনা করছি। যাদের যে ডকুমেন্টস শর্ট আছে, যাদের শর্ট আছে তাদেরকে আমরা ১৫ দিন সময় দেবো। সময় দেওয়ার পর যারা কন্ডিশন ফুলফিল করবে না তাদের তো আমরা রেজিস্ট্রেশন দিতে পারবো না। আইন অনুযায়ী যে শর্ত আছে সেটা পূরণ করলেই তারা নিবন্ধন পাবে।

বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল। এই সময়ের মধ্যে যাচাই বাছাই করা যাবে বলে মনে করেন? কারণ অনেকগুলো দল আবেদন করেছে।

নাসির উদ্দিন: অসুবিধা নাই, আমাদের তো ফিল্ড অফিস আছে অনেক, ওরাই আমাদের রিপ্রেজেন্ট করে। ৫৭০০ লোক কাজ করে আমাদের ফিল্ডে। তাদের মাধ্যমে যাচাই বাছাই অলরেডি শুরু করে দিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসা শুরু করেছে।

বিবিসি বাংলা: এর মধ্যে এনসিপিও আছে। তারা প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্কও আছে যেহেতু জাতীয় ফুলও শাপলা। এ বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

নাসির উদ্দিন: বিষয়টা আমরা খুব সিরিয়াসলি বিবেচনা করেছি আমাদের কমিশনে। আমাদের কমিশনের একটা সিদ্ধান্ত হলো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত কনসেনসাস (ঐকমত্য) ছাড়া নেই না। মেজরিটির মতামত নিয়েই করে থাকি। কারো ওপর চাপিয়ে দেই না কোনো কিছু। পাঁচজন মিলেই এই কমিশন।

আগে মাহবুব তালুকদার সাহেব একদিকে কথা বলতেন, বাকিরা অন্যদিকে বলতেন। আমাদের এখানে শুনেছেন আমরা দলাদলি করেছি কখনো?

এই শাপলা নিয়েও আমরা অনেক ইনভেস্টিগেট করেছি, বিষয়টা এক্সামিন করেছি। কিছু আইনি বিষয় আছে এখানে। ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে একটা আইনই আছে।

আরেকটা বিষয় আছে এখানে এনসিপি চেয়েছে, এর আগে নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। নাগরিক ঐক্য চেয়েছিল, আট দশদিন আগে নাগরিক ঐক্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের মেইন ফোকাস হলো শাপলা। তারা বলেছে আমরা শাপলা চেয়েছি আপনারা দেন নাই। আমরা ওদের আবেদন পেন্ডিং রেখেছি। উনারা বললেন যে দেখেন আমরা কিন্তু অনেক আগেই অ্যাপ্লাই করেছি, এনসিপি করেছে পরে। আমি একটা রেজিস্টার্ড দল। এনসিপি রেজিস্ট্রেশনই পায়নি।

আমাদের আইন অনুযায়ী যারা আগে ক্লেম করবে তাদের দিতে হয়, সুতরাং সুযোগটা সীমিত।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের সিদ্ধান্ত কী তাহলে?

নাসির উদ্দিন: ওই যে বললাম তো, যদি দিতে হয় তাহলে নাগরিক ঐক্যকে দিতে হবে।

বিবিসি বাংলা: যারা আগে চেয়েছে তাদেরকে দেবেন? নাকি শাপলা প্রতীক দেবেন না?

নাসির উদ্দিন: কিছু আইনি ইস্যু আছে তো। এ জন্য কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শাপলাকে আমরা প্রতীক হিসেবে রাখবো না।

বিবিসি বাংলা: কেউ পাচ্ছে না তাহলে?

নাসির উদ্দিন: না কেউ পাচ্ছে না। আমাদের সিদ্ধান্ত তাই-ই।

বিবিসি বাংলা: আপনারা জামায়াতকে পূর্ববর্তী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা আপনারা কোন প্রক্রিয়ায় করেছেন। সেটাও তো আপনাদের প্রতীকের তালিকায় ছিল না, বাদ দেওয়া হয়েছিল।

নাসির উদ্দিন: বাদ দেওয়া হয়েছিল তো কোর্টের একটা রায় ছিল তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য। সম্ভবত ২০১৩ সালে। নিবন্ধন বাতিল প্রতীকসহ হয়েছিল। তখন এটাকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা অ্যাপিলেট ডিভিশনের জাজমেন্ট পেয়েছি।

বিবিসি বাংলা: এটা তো তাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে বলেছে…

নাসির উদ্দিন: আমরা যে অর্ডারে উনাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছি, যখন কোনো পার্টিকে রেজিস্ট্রেশন দেই তখন রেজিস্ট্রেশন প্লাস প্রতীক দিতে হয়। সুতারং ওনাদের যখন সার্টিফিকেট দিতে হয়, তখন ওখানে কিন্তু প্রতীকসহই ছিল এবং স্ট্যাটাস কো যখন হয়েছে তখন প্রতীকসহই স্ট্যাটাস কো হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছেন। আপনি যখন এই পদে থেকে বিদায় নেবেন তখন আসলে কী অর্জন করে যেতে চান? আপনার লিগেসিটা কী হবে? কী করতে চান আপনি?

নাসির উদ্দিন: এখানে আমি বলবো যে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি চিন্তা করেছি যে শেষ বয়সে এসে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে দায়িত্বটা নিয়ে যদি আমি চেষ্টা করি দেশকে কিছু দিয়ে যেতে চাই। সেটাই হচ্ছে আমার মেজর কনসিডারেশন।

আমি হাসিমুখে ঢুকেছি, হাসিমুখে যেতে চাই এবং সেটার জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা নিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে আরম্ভ করে, প্রশাসন থেকে আরম্ভ করে সবার সহযোগিতা নিয়ে আমার হাসির ব্যবস্থাটা হবে ইনশাল্লাহ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : সিইসি

প্রকাশের সময় : ১১:২১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

রবিবার (১৩ জুলাই) বিবিসি বাংলা এই সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তা প্রকাশ করা হলো।

বিবিসি বাংলা: আপনি এমন একটা সময়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছেন যখন কি-না বাংলাদেশ একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আছে। বড় প্রশ্ন এখন, নির্বাচন কবে হবে সেটা কি এখন আপনি বলতে পারবেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন: ‘ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট ফর মি টু রেসপন্ড, বিকজ আই মাইসেলফ ওন্ট নো এক্স্যাক্ট ডেট (সুনির্দিষ্ট তারিখ)। পোলিং ডেটটা জানি না। এপ্রিলে ফার্স্ট হাফে (প্রথমার্ধে) বলা হচ্ছে। দ্যাট কাইন্ড অফ থিং, উইল বি কমিউনিকেট টু আস, উইথ সাম আইডিয়া দ্যাট–– প্লিজ গো এহেড- দিস ইজ দ্য রেঞ্জ।

বিবিসি বাংলা: সরকার আপনাদের জানাবেন যে এই সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে। সেটা কী এখনো জানাননি?

নাসির উদ্দিন: আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি যে আইদার ফেব্রুয়ারি, মানে রমজান মাসের আগে অথবা এপ্রিলে। যেটা সব সময় উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলে আসছেন। সেটাই জানি, যেটা আপনি জানেন- দেশবাসী জানে, ওনার বক্তব্য থেকে। সেটা আমিও জানি।

বিবিসি বাংলা: সরকার থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা প্রস্তুত হতে বলেছেন, সরকার আপনাদের কিছু বলেননি যে কবে নির্বাচন হতে পারে বা কোন সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: না সেরকম বলে নাই। আমরা ধরে নিচ্ছি, ইট ইজ আওয়ার অ্যাসাম্পশন (আমাদের ধারণা) যে বর্তমানে যে টাইম ফ্রেম বলা হচ্ছে, আইদার আর্লি ফেব্রুয়ারি বিফোর রমাদান, অর ইট মে বি সাম টাইম ইন দ্য ফার্স্ট হাফ অব এপ্রিল। হতে পারে, এপ্রিলের প্রথম দিকে হতে পারে। আমরা প্রথম থেকেই ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কারণ তখন তিনি ডিসেম্বর টু জুন বলেছিলেন। এজন্য আমরা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে- ফ্রম ডে ওয়ান উই স্টার্টেড প্রিপেয়ারিং আওয়ারসেলভ।

বিবিসি বাংলা: সেটা কবে থেকে? আপনারা যখন শুরু করলেন তখন থেকে?

বিবিসি বাংলা: আপনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন আপনাকে কোনো টাইমফ্রেম বা সময়সীমা নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে এই সময়ের মধ্যে দেওয়া হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: না দেওয়া হয় নাই। বাট আমি ধরে নিয়েছি যে ইলেকশন তো একটা হবে। আমি প্রথমে আমার অফিসারদের সাথে বসেছি, যে-একটা ইলেকশন করতে গেলে কী কী দরকার, কী কী কাজ আমাদেরকে করতে হবে, কী কী কাজ বাকি আছে। উনারা আমাদের একটা চার্ট করে দেবেন এবং কোন কাজ করতে কতদিন লাগে সেটা দেবেন। তখন তো আমরা জানি না ডিসেম্বর বা অন্য কোনো টাইমলাইন তো তখনও আসে নাই।

বিবিসি বাংলা: ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে আপনার প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করলেন?

নাসির উদ্দিন: যখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন; সম্ভবত গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর উনি যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তখন আমি মৌলভীবাজারে ছিলাম। ওখানে বসেই আমি শুনলাম যে ‘আইদার ইট উইল বি ইন ডিসেম্বর, অর ইন জুন’- এটা শুনলাম উনার বক্তব্যের মধ্যে।

বিবিসি বাংলা: শোনার পর ভাবলেন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: হ্যাঁ, এইটা শোনার পরে প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিলাম আমরা, ডিসেম্বরকে ধরে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে। কারণ ইলেকশনের ডেট থেকে অন্তত দুই মাস আগে আমাদের শিডিউল ঘোষণা করতে হয় আমাদের আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারে।

কারণ তফসিল ঘোষণ থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত যে কর্মকাণ্ডগুলো দরকার, তাতে অন এভারেজ দুই মাস না হলে পারা যায় না। যেমন ধরেন, নমিনেশন ফাইল করার জন্য সময় লাগে।

বিবিসি বাংলা: তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দুই মাস কমপক্ষে লাগবে। আপনাদের কথায় মনে হচ্ছে সরকার থেকে আপনারা এই তথ্যগুলো গণমাধ্যম থেকে পাচ্ছেন। কিন্তু সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা বা কিছু বলছে কি-না?

নাসির উদ্দিন: আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো গাইডেন্সও নাই, পরামর্শও নাই, আদেশও নাই, নির্দেশও নাই, নাথিং। আমরা অ্যাবসোলিউটলি ইন্ডিপেনডেন্টলি এই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: একটা ধারণা দেওয়া যে এই সময়ের মধ্যে হতে পারে, এটা আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে পাননি?

নাসির উদ্দিন: না পাইনি, পাইনি।

বিবিসি বাংলা: কিছুদিন আগে আপনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। একটা একান্ত বৈঠক হয়েছিল, কী কথা হয়েছে?

নাসির উদ্দিন: দেখেন, আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত উনার সাথে ফরমাল কোনো মিটিং হয়নি। দেখা হয়েছে ঈদের দিন বা এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে, ওইটুকুই। আমি মনে করলাম ওনার সাথে ফরমাল একটা দেখা করা দরকার।

এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য আমি যাইনি।

আমি প্রেসে বলেছিলাম, সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্থ এই নয় যে সালাম দিয়ে বসে থাকলাম ৪৫ মিনিট। তারপর আবার চলে আসলাম ওয়ালাইকুম আসসালাম দিয়ে। ইট ডাজ নট মিন দ্যাট।

অভিয়াসলি, উনি হেড অব দ্য গভমেন্ট, উনার জন্য একটা নির্বাচন সামনে আছে, যে নির্বাচনটা আমাকে ডেলিভার করতে হবে, ইসিকে ডেলিভার করতে হবে। অভিয়াসলি, নির্বাচনটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। শুধু উনি জানতে চেয়েছেন যে আমাদের প্রিপারেশনের অবস্থা কী, স্ট্যাটাসটা কী, আমরা কতদূর এগিয়েছি, প্রস্তুত কী রকম।

উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি উনাকে ডিটেইল জানিয়েছি আমি কী কী করেছি, কী কী করতেছি, কী কী বাকি আছে বা আমাদের টাইমলাইনটা কী, কখন আমরা শেষ করতে পারবো। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একটা ব্রিফ (ধারণা) ওনাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমি দিয়েছি। কারণ এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার।

বিবিসি বাংলা: আপনি দেখা করতে চেয়েছিলেন, নাকি উনি দেখা করতে চেয়েছিলেন?

নাসির উদ্দিন: অ্যাকচুয়ালি, উনি কোনো আমাদের ডাকেননি। আমাদের তরফ থেকে যোগাযোগ করে উনার অফিসের সাথে, জাস্ট কার্টেসি কলের জন্য। কারণ, আমরা মনে করতেছিলাম যে এইখানে আরও কারণ আছে। অনেক ধরনের বক্তব্য আসতেছিল, সাংবাদিকরাই জিজ্ঞেস করতেছিল সরকারের সাথে যোগাযোগ নাই? কোনো ধরনের কানেকশন নাই? মনে হচ্ছিল এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

আমি দেখলাম যে অন্তত দেখা করলে এই জিনিসটা অ্যাভয়েড করা যাবে। আমরা চেয়েছিলাম- উনি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টাইম দিয়েছেন। ওইভাবে গেছি আরকি।

বিবিসি বাংলা: আপনি বলছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে উনি জানতে চেয়েছেন, কিন্তু আপনি জানতে চাননি যে নির্বাচন কবে হতে পারে? কারণ সেই ধারণা তো সরকারকে দিতে হবে।

নাসির উদ্দিন: আমি জানতে চাই না। কারণ, আমি তো উনার পজিশন দেখতেছি। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু আর্লি (দ্রুত) চায়, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু পরে চায়। এসব নিয়ে নানা রকম প্রবেলেম আছে।

আমি মনে করলাম উনার কাছ থেকে ডেট নিয়ে আমার কাছে অ্যাডভাইজাবেল হবে না। সে জন্য টাইম নিয়ে কিছু বলি নাই। টাইম নিয়ে তো উনি ওপেনলি, পাবলিকলি বলতেছেন। উনার পাবলিক স্টেটমেন্ট থেকে যেটুকু আপনারা জানেন, সেটুকু আমিও জানি স্পেসিফিক ডেট সম্পর্কে।

কিন্তু দুই মাস আগে, নিশ্চয়ই শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদেরকে জানাবে। কারণ শিডিউল ঘোষণা করবো আমরাই। তখন পোলিং ডেট আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে। এন্টায়ার স্কেজিউল আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে।

বিবিসি বাংলা: সরকারপ্রধানের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত বৈঠক কিছুটা ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। সাধারণত হয় না..।

নাসির উদ্দিন: দেখেন, দিস ইজ স্পেশাল টাইপ অব সিচুয়েশন, স্পেশাল টাইপ অব গভমেন্ট। এটা নিউট্রাল গভমেন্ট। আমিও নিউট্রাল। পলিটিক্যাল গভমেন্ট যখন পাওয়ারে থাকে, তখন হেড অব দ্য গর্ভমেন্টের আন্ডারে একটা দল থাকে। অভিয়াসলি চিফ ইলেকশন কমিশন যখন দেখা করবে, এটা একটা কোয়েশ্চেনাবেল। কারণ উনি তো একটা দলের নেতৃত্বে আছেন। তখন একটা পার্টিকুলার দল বেনিফিট পেতে পারে। এজন্য সাধারণত ডিসকারেজ করা হয়।

কিন্তু এখন বাংলাদেশে যে সিচুয়েশন, তাতে সরকার প্রধানের নিজস্ব কোনো দল নাই। উনি কোনো দলের পক্ষের নয়। সুতরাং এখানে আমিও নির্দলীয়ভাবে কাজ করবো। উনিও নির্দলীয়। আমি মনে করলাম এখানে কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।

বিবিসি বাংলা: তার মানে এটাকে আপনি সমস্যা মনে করেননি?

নাসির উদ্দিন: না না, আমি একদমই সমস্যা মনে করিনি।

‘জনগণ সাথে থাকলে মব বা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা নয়’

বিবিসি বাংলা: দু মাস আগে আপনারা জানলে আপনারা তফসিল ঘোষণা করবেন। তার মানে আপনারা দু’মাস আগেই জানবেন? কারণ সাধারণত যেটা দেখা যায় কারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগে একটা রোডম্যাপ দেওয়া হয়। রোজার আগে নির্বাচনের একটা কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি। সেক্ষেত্রে সময় খুব বেশি নেই। সেই রোডম্যাপের ব্যাপারে আপনারা কিছু ভেবেছেন?

নাসির উদ্দিন: দুই মাস আমার সময় দরকার। যেদিন তফসিল ঘোষণা করবো তার থেকে দুই মাস সময় দরকার, টিল দা পোলিং ডে (ভোটের দিন)) পর্যন্ত।

এটার মানে এই নয় যে- যেদিন ঘোষণা করবো ওইদিন সকাল বেলা আমাকে জানাইলো আর আমি অনএয়ারে চলে গেলাম। বিষয়টা সে রকম না। দুই মাস মিনিমাম দরকার তো। নিশ্চয়ই উনারা আগে জানাবেন।

আমার তো ঘোষণার জন্যও একটা প্রস্তুতি দরকার। এর মধ্যে তো ইলেকশনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবো, ইনশাআল্লাহ।

বিবিসি বাংলা: বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। আপনারা কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?

নাসির উদ্দিন: সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যদি হয় আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রস্তুত। আমরা ওভাবে করতে চাই, উনারা যে তারিখে পোলিং ডেট চান, যেদিন ভোট হয়, সেদিন যাতে আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুতিটা নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখন নেই, এটার বিষয়ে আপনার কী মত?

নাসির উদ্দিন: অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।

বিবিসি বাংলা: তারা আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির কথা বলছেন, মব ভায়োলেন্স বা দলবদ্ধ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেটার কথা বলছেন। এর মাঝে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে?

নাসির উদ্দিন: চ্যালেঞ্জিং হবে। বাট ইট ইজ পসিবল। চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখন তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অগাস্টে যা দেখছিলাম বা গত বছরের আটই অগাস্টে যা দেখছিলাম অনেক ইম্প্রুভ করে গেছে না? অনেক ইম্প্রুভ করছে।

ধরেন নির্বাচন যখন হবে, তখন ওই সময়ের মধ্যে দেখবেন যে সব কিছু শান্ত, অসুবিধা হবে না। বিশেষ করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল ছোট হোক বড় হোক, তারা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে প্রথম থেকেই। কেউ বলে নাই যে আমি আগের মতো নির্বাচন চাই। জনগণ যদি আপনার সাথে থাকে, কোনো রকমের কোনো মব বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপনাকে তো ক্ষতি করতে পারবে না।

বিবিসি বাংলা: জনগণ তো মব চায় না। কিন্তু সেটা তো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখন পর্যন্ত। দেখা যাচ্ছে তো এটা হচ্ছে নিয়মিত।

নাসির উদ্দিন: আমি কনফিডেন্ট যে ইলেকশন যখন হবে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ব্রিফিং দিয়েছেন। শুধু পুলিশকে নয়, উনি তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্মি থেকে আরম্ভ করে, আর্মি কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, বিজিবি কীভাবে হবে ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন করেছেন।

এই চ্যালেঞ্জেসগুলো সামনে রেখে কিন্তু সরকারের যেমন তার নিজস্ব প্রস্তুতি চলছে, আমাদেরও কিন্তু একই রকম প্রস্তুতি চলছে। এই সব চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু আমাদের মাথায়ও আছে। এগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য আমরা প্রস্তুত। সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নেবো।

বিবিসি বাংলা: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আপনারা মনে করছেন না খুব একটা সমস্যা হবে? নির্বাচনের জন্য এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

নাসির উদ্দিন: আমি মনে করি যে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নট বি প্রবলেম, আমি মনে করি।

‘অবশ্যই নিরপেক্ষ, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি’

বিবিসি বাংলা: এর মাঝে কোনো কোনো দল আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যেমন এনসিপি। আপনারা কি নিজেদের নিরপেক্ষ বলবেন?

নাসির উদ্দিন: অবশ্যই নিরপেক্ষ। আমাদের- ইট ইজ অ্যা কমিটমেন্ট গিভেন টু দ্য নেশন।

যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিনই আমি কমিট করেছি, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি। এমনকি আমার অফিসে যারা কাজ করেন, গত দোসরা মার্চ প্রথম রোজায় ভোটার দিবসে সবাইকে হাত তুলে শপথ করিয়েছি যে- আপনারা সবাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, এমন ওয়াদা আমাকে দেন। পহেলা রমজান অধিকাংশ রোজাদার হাত তুলে শপথ করেছে।

সুতরাং ইসি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, ওই রাজনৈতিক বক্তব্য এগেইন দিতে পারে। সময়ের বিবর্তনে যখন দেখবে আমরা কাজ করছি নিরপেক্ষভাবে, আস্তে আস্তে যখন আমাদের কাজকর্ম আরও সম্প্রসারিত হবে, তারা রিঅ্যালাইজ করবে যে না- এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আছে। তাদের আস্থা আমাদের ওপর আসবে।

বিবিসি বাংলা: তাদের একটা অভিযোগ যে আপনারা বিএনপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। বিএনপির সাথে আপনার কি সম্পর্ক আছে?

নাসির উদ্দিন: আমি তো বিএনপির সদস্যও না, কোনো নেতাও না। কারও প্রতি আমাদের যে দুর্বলতা আছে, এটা বলতে পারে পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট তো দিতেই পারে। আপনি তো এটা শুনছেন, অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে। একেকজন একেকটা বলে। এগুলো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। আমি এগুলোকে সেভাবে দেখি। উনারা বলতেই পারে।

উনাদের তো বলার অধিকার আছে, বলবেই। আমাদের কাজকর্ম দেখে উনারা এক পর্যায়ে বুঝে যাবে যে এখান থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়।

আমি ওই চেয়ারটাকে (সিইসির চেয়ার) একটা বিচারকের আসন মনে করি। সুতরাং আমার হাত দিয়ে যেন অবিচার না হয়। আমি সবার জন্য যেন সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারি, বিচারকের মতো করেই আমি এই কাজটা করতে চাই।

বিবিসি বাংলা: একটা উদাহরণের কথা তারা বলেন। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঘটনায় ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট দিলেন। সেটা আপনারা আদালতের নির্দেশে দিয়েছেন, কিন্তু আপনারা সেই গেজেট দেওয়ার আগে আপিলের দিকে কেন গেলেন না?

নাসির উদ্দিন: ওই অর্ডারটা আসছিল নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল থেকে। নির্বাচনি অপরাধ কীভাবে ডিল করবে সেটা আমাদের আইনে বলা আছে। ওটা ছিল লোকাল গভমেন্ট আইনের অধীনে। আপনি যদি চিন্তা করেন আপনার অপনেন্ট আপনার প্রতি ইনজাস্টিস করেছে, কোনো মিস ম্যানেজমেন্ট করেছে বা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জিতে গেছে, তখন আপনার উচিত হবে ট্রাইব্যুনালে যাওয়া। ওখানে ফেল করলে তখন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে যাবেন।

এই ট্রাইব্যুনালগুলো আমরা গঠন করে দেই। আমার গড়া একটা কোর্টে আমি কী একটা পক্ষভুক্ত হইতে পারি? আইনের বিধানও নাই, আর এটা জিজায়রেবলও না। ওইটা- ডাইরেকশন ফ্রম দ্য ট্রাইব্যুনাল।

বিবিসি বাংলা: এই বিষয়টা নিয়ে সরকারের কোনো কোনো জায়গা থেকে কথা বলা হয়েছে, ইশরাক হোসেনের সাথে একটা দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। এটা নিয়ে কি সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে?

নাসির উদ্দিন: আমি মনে করি না। কারণ, উনারা তো আইনি ব্যাখ্যাটা বুঝে গেছেন। এর মধ্যে আমরা প্রায়শ বলেছি, ব্রিফিং দিয়েছি। আসলে উনারা বুঝে গেছে আইনে বিধান নাই। অ্যাটলিস্ট ট্রাইব্যুনাল, অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত।

আমরা কনটেস্ট করতে পারবো হাইকোর্টে যদি কেউ রিট করে, বা অ্যাপিলেট ডিভিশনে কেউ যদি যায়, ওখানে আমাদের যাইতে হবে। নট ইন দ্য ট্রাইব্যুনাল অর অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল।

আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ইসির অবস্থান কী?

বিবিসি বাংলা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে সরকার, তার অর্থ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না তারা?

নাসির উদ্দিন: উনাদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যদি বিচার শেষ হয়, যদি শাস্তি না দেওয়া হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া না হয়; সরকারের যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী তাদের রেজিস্ট্রেশন রাখাই তো মিনিংলেস হয়ে যায়। তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। এ জন্য আমরাও রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দিয়েছি।

বিবিসি বাংলা: আপনার কি মনে হয়, যদি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তখন নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হলো কি-না সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে?

নাসির উদ্দিন: সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো- যারা ভোটারস আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এখন ইনক্লুসিভের ডেফিনিশন তো একেকজনের কাছে একেক রকম।

বিবিসি বাংলা: আপনার কাছে কী?

নাসির উদ্দিন: ওই যে বললাম পার্টিসিপেটরি ইলেকশন টু ইনক্লুড দি ভোটারস অ্যাজ মাচ ইজ পসিবল।

বিবিসি বাংলা: আপনার কী মনে হয় আওয়ামী লীগের যে সমর্থকগোষ্ঠী তারা সবাই ভোটে আসবে, ভোট দেবে?

নাসির উদ্দিন: আমি তো আশা করি তারা আসবে। এদের সমর্থকগোষ্ঠী আছে তো। তারা যে একেবারেই আসবে না এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অফ দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ অ্যা ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ এ ভোটার।

বিবিসি বাংলা: সাবেক দুইজন নির্বাচন কমিশনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে হেনস্তাও করা হয়েছে। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

নাসির উদ্দিন: দেখেন এটা একটা বিচারাধীন বিষয়। এই বিচারাধীন বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমার পক্ষ থেকে এ নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

বিবিসি বাংলা: হেনস্তার বিষয়টা নিয়ে….?

নাসির উদ্দিন: হেনস্তার বিষয়টা তো কেউ পছন্দ করবে না। এটা তো ঠিক আইন অনুযায়ী বিচার হবে, এটাই তো হওয়া উচিত। দেখছি যে যারা হেনস্তা করছে তারা অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে ডিউ লিগ্যাল প্রসেসে এটা আগাবে।

‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট নিয়ে ভাবছি না’

বিবিসি বাংলা: জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথাও বলছেন কেউ কেউ। আপনার কী মনে হয় এটা হতে পারে?

নাসির উদ্দিন: আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে স্থানীয় সরকারে ৬১ জেলা পরিষদ আছে। ৫৬৫টি টা আছে উপজেলা, পৌরসভা আছে ৩৩০, সিটি করপোরেশন আছে ১২টা, ইউনিয়ন কাউন্সিল আছে ৪৫৯২টা।

এই ইলেকশনগুলোতে খুব সহিংসতা হয়। দেখা যায় যে এক বাড়ি থেকে দুই জন দাঁড়ায়ে গেছে, এজন্য খুব সহিংসতা হয়, খুব খুন খারাপি হয়। এই জন্য এই ভোটগুলো ধাপে ধাপে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবকিছু মবিলাইজ করতে সুবিধা হয়। পাঁচ, ছয় বা সাত ধাপে এগুলো করা হয়।

ধাপে ধাপে করতে গেলে দেখা যায় যে এটা দশ মাস থেকে এক বছর সময় লাগে কমপক্ষে। এখন আমাদের জাতীয় নির্বাচনের আগে তো সেই সময় তো নাই।

বিবিসি বাংলা: আপনার কাছে কি এটা বাস্তবসম্মত মনে হয় না?

নাসির উদ্দিন: আমি তো স্থানীয় নির্বাচন বাস্তবসম্মত না এটা বলি নাই। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এ পর্যন্ত যত বক্তব্য দিয়েছেন সবখানে জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বলেছেন। উনি একটি বারের জন্যও বলেন নাই স্থানীয় নির্বাচন অমুক সময়ে হবে।

আমরা উনার বক্তব্যকে সামনে রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পলিটিক্যাল ডিবেট তো আছেই, কিন্তু আমরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে সামনে রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলা: তার মানে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আপনারা ভাবছেন না?

নাসির উদ্দিন: আমরা ভাবছি না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই কাজ করছি।

‘শাপলা প্রতীক হিসেবে কেউ পাবে না’

বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল আপনাদের কাছে নিবন্ধন চেয়েছে। প্রায় দেড়শোর মতো। অনেকের সাইনবোর্ডও নাই। ঝড়ে উড়ে গেছে। এই নিবন্ধনের ব্যাপারে আপনারা কী করবেন? নির্বাচনের সময় তো খুব বেশি নেই।

নাসির উদ্দিন: আমাদের তো স্ক্রুটিনি (যাচাই বাছাই) শুরু হয়ে গেছে। আমরা সব আবেদন পর্যালোচনা করছি। যাদের যে ডকুমেন্টস শর্ট আছে, যাদের শর্ট আছে তাদেরকে আমরা ১৫ দিন সময় দেবো। সময় দেওয়ার পর যারা কন্ডিশন ফুলফিল করবে না তাদের তো আমরা রেজিস্ট্রেশন দিতে পারবো না। আইন অনুযায়ী যে শর্ত আছে সেটা পূরণ করলেই তারা নিবন্ধন পাবে।

বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল। এই সময়ের মধ্যে যাচাই বাছাই করা যাবে বলে মনে করেন? কারণ অনেকগুলো দল আবেদন করেছে।

নাসির উদ্দিন: অসুবিধা নাই, আমাদের তো ফিল্ড অফিস আছে অনেক, ওরাই আমাদের রিপ্রেজেন্ট করে। ৫৭০০ লোক কাজ করে আমাদের ফিল্ডে। তাদের মাধ্যমে যাচাই বাছাই অলরেডি শুরু করে দিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসা শুরু করেছে।

বিবিসি বাংলা: এর মধ্যে এনসিপিও আছে। তারা প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্কও আছে যেহেতু জাতীয় ফুলও শাপলা। এ বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

নাসির উদ্দিন: বিষয়টা আমরা খুব সিরিয়াসলি বিবেচনা করেছি আমাদের কমিশনে। আমাদের কমিশনের একটা সিদ্ধান্ত হলো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত কনসেনসাস (ঐকমত্য) ছাড়া নেই না। মেজরিটির মতামত নিয়েই করে থাকি। কারো ওপর চাপিয়ে দেই না কোনো কিছু। পাঁচজন মিলেই এই কমিশন।

আগে মাহবুব তালুকদার সাহেব একদিকে কথা বলতেন, বাকিরা অন্যদিকে বলতেন। আমাদের এখানে শুনেছেন আমরা দলাদলি করেছি কখনো?

এই শাপলা নিয়েও আমরা অনেক ইনভেস্টিগেট করেছি, বিষয়টা এক্সামিন করেছি। কিছু আইনি বিষয় আছে এখানে। ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে একটা আইনই আছে।

আরেকটা বিষয় আছে এখানে এনসিপি চেয়েছে, এর আগে নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। নাগরিক ঐক্য চেয়েছিল, আট দশদিন আগে নাগরিক ঐক্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের মেইন ফোকাস হলো শাপলা। তারা বলেছে আমরা শাপলা চেয়েছি আপনারা দেন নাই। আমরা ওদের আবেদন পেন্ডিং রেখেছি। উনারা বললেন যে দেখেন আমরা কিন্তু অনেক আগেই অ্যাপ্লাই করেছি, এনসিপি করেছে পরে। আমি একটা রেজিস্টার্ড দল। এনসিপি রেজিস্ট্রেশনই পায়নি।

আমাদের আইন অনুযায়ী যারা আগে ক্লেম করবে তাদের দিতে হয়, সুতরাং সুযোগটা সীমিত।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের সিদ্ধান্ত কী তাহলে?

নাসির উদ্দিন: ওই যে বললাম তো, যদি দিতে হয় তাহলে নাগরিক ঐক্যকে দিতে হবে।

বিবিসি বাংলা: যারা আগে চেয়েছে তাদেরকে দেবেন? নাকি শাপলা প্রতীক দেবেন না?

নাসির উদ্দিন: কিছু আইনি ইস্যু আছে তো। এ জন্য কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শাপলাকে আমরা প্রতীক হিসেবে রাখবো না।

বিবিসি বাংলা: কেউ পাচ্ছে না তাহলে?

নাসির উদ্দিন: না কেউ পাচ্ছে না। আমাদের সিদ্ধান্ত তাই-ই।

বিবিসি বাংলা: আপনারা জামায়াতকে পূর্ববর্তী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা আপনারা কোন প্রক্রিয়ায় করেছেন। সেটাও তো আপনাদের প্রতীকের তালিকায় ছিল না, বাদ দেওয়া হয়েছিল।

নাসির উদ্দিন: বাদ দেওয়া হয়েছিল তো কোর্টের একটা রায় ছিল তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য। সম্ভবত ২০১৩ সালে। নিবন্ধন বাতিল প্রতীকসহ হয়েছিল। তখন এটাকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা অ্যাপিলেট ডিভিশনের জাজমেন্ট পেয়েছি।

বিবিসি বাংলা: এটা তো তাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে বলেছে…

নাসির উদ্দিন: আমরা যে অর্ডারে উনাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছি, যখন কোনো পার্টিকে রেজিস্ট্রেশন দেই তখন রেজিস্ট্রেশন প্লাস প্রতীক দিতে হয়। সুতারং ওনাদের যখন সার্টিফিকেট দিতে হয়, তখন ওখানে কিন্তু প্রতীকসহই ছিল এবং স্ট্যাটাস কো যখন হয়েছে তখন প্রতীকসহই স্ট্যাটাস কো হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছেন। আপনি যখন এই পদে থেকে বিদায় নেবেন তখন আসলে কী অর্জন করে যেতে চান? আপনার লিগেসিটা কী হবে? কী করতে চান আপনি?

নাসির উদ্দিন: এখানে আমি বলবো যে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি চিন্তা করেছি যে শেষ বয়সে এসে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে দায়িত্বটা নিয়ে যদি আমি চেষ্টা করি দেশকে কিছু দিয়ে যেতে চাই। সেটাই হচ্ছে আমার মেজর কনসিডারেশন।

আমি হাসিমুখে ঢুকেছি, হাসিমুখে যেতে চাই এবং সেটার জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা নিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে আরম্ভ করে, প্রশাসন থেকে আরম্ভ করে সবার সহযোগিতা নিয়ে আমার হাসির ব্যবস্থাটা হবে ইনশাল্লাহ।