নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ মোড় অবরোধ করার ঘোষণা দেন। তার পরপরই আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
শুক্রবার (৯ মে) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সমাবেশ থেকে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরপর হাজার হাজার জনতা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন। এরপর থেকে শাহবাগ মোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আন্দোলনকারীরা ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়’, ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ, ‘লীগ ধর জেলে ভর’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ চাই’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই’ এসব বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠছে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এবং সরকারের মনোভাব হলো, আইন করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা। এর মধ্যেই গতকাল খবর আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শ্যালক ও ছেলেসহ মধ্যরাতে দেশ ছেড়েছেন। এরপর থেকে ছাত্র-জনতার নতুন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। রাতভর সেখানে তারা আন্দোলন করেন। শুক্রবার বিকেলে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে এনসিপি ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকার) কানে আমাদের আওয়াজ পৌঁছায় নাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবো।
হাসনাত বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এই ভূখণ্ড থেকে নির্ধারিত হবে। বিদেশি কারো ইশারায় হবে না।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আওয়ামী লীগের মতো ভাইরাস নিয়ে আর একদিনও বাংলাদেশে থাকতে চাই না আমরা।
তিনি বলেন, ১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কোন কারণে রাজনৈতিক দল বলা হয়? আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওমী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এনসিপির এ নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কোনোভাবে রাজনৈতিক দল নয়।১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল তৈরি করে এ দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষের কারণে ১৫ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের হাতে এ দেশের মানুষের রক্ত লেগে আছে। আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যা করেছিল।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমি শুনলাম, প্রধান উপদেষ্টা নাকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন। সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসলে রাজনীতি করতে পারবে কি না এসব ব্যাপারে মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ জুলাই আন্দোলনের সব আহত-নিহতের পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পৌনে ৩টায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সবাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।