Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্থিরতার কারণে চলতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হবে : রয়টার্সকে নাহিদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার কারণে এই বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন কঠিন হতে পারে, বলে মনে করেন নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেন, গত সাত মাসে, আমরা সবাই আশা করেছিলাম রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইন ও শাসন স্বল্পকালীন সংস্কারের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এটি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বর্তমান আইন-শাসনের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিবেচনায়, আমি মনে করি না এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।

গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান। এরপর শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, তবে দেশজুড়ে এখনো অস্থিরতা চলছে।

২৬ বছর বয়সী নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, তিনি বলেন, আমরা যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা ও পুলিশিং ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন যুব-ভিত্তিক এনসিপি বাংলাদেশে দুই পুরোনো প্রধান রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দুই দলের দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। উভয় দলই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দাবি করেছে, যেন গণতান্ত্রিক সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে।

কিন্তু বর্তমান অস্থিরতা সেই পথকে কঠিন করে তুলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের প্রতীকে হামলা, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ, এবং সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বলছে, এই হামলার মাত্রা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই সনদ তৈরি করতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

তিনি বলেন, যদি আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা এই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা দ্রুত নির্বাচনের ডাক দিতে পারবো। তবে, যদি আরও সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এই ঘোষণাপত্রে ২০২৩ সালের গণ-আন্দোলনে নিহত প্রায় ১ হাজার মানুষের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে বলে দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নাহিদ ইসলাম আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি এনসিপিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। শিগগিরই দলটি নতুন অফিস তৈরির জন্য ক্রাউডফান্ডিং ও নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য একটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অস্থিরতার কারণে চলতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হবে : রয়টার্সকে নাহিদ

প্রকাশের সময় : ০৯:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার কারণে এই বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন কঠিন হতে পারে, বলে মনে করেন নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেন, গত সাত মাসে, আমরা সবাই আশা করেছিলাম রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইন ও শাসন স্বল্পকালীন সংস্কারের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এটি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বর্তমান আইন-শাসনের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিবেচনায়, আমি মনে করি না এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।

গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান। এরপর শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, তবে দেশজুড়ে এখনো অস্থিরতা চলছে।

২৬ বছর বয়সী নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, তিনি বলেন, আমরা যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা ও পুলিশিং ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন যুব-ভিত্তিক এনসিপি বাংলাদেশে দুই পুরোনো প্রধান রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দুই দলের দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। উভয় দলই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দাবি করেছে, যেন গণতান্ত্রিক সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে।

কিন্তু বর্তমান অস্থিরতা সেই পথকে কঠিন করে তুলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের প্রতীকে হামলা, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ, এবং সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বলছে, এই হামলার মাত্রা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই সনদ তৈরি করতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

তিনি বলেন, যদি আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা এই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা দ্রুত নির্বাচনের ডাক দিতে পারবো। তবে, যদি আরও সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এই ঘোষণাপত্রে ২০২৩ সালের গণ-আন্দোলনে নিহত প্রায় ১ হাজার মানুষের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে বলে দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নাহিদ ইসলাম আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি এনসিপিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। শিগগিরই দলটি নতুন অফিস তৈরির জন্য ক্রাউডফান্ডিং ও নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য একটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে।