স্পোর্টস ডেস্ক :
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর তোপের মুখে ছিল ভারত। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার সামনে তারা লড়াই করতে পারবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা ছিল প্রচুর। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে ২৯৫ রানের বিশাল জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শুরু করল জাসপ্রিত বুমরাহর দল।
রানের হিসেবে বিদেশের মাটিতে এটি ভারতের তৃতীয় বড় জয়। এমনকি প্রথম ইনিংসে ১৫০ বা এর নিচে অলআউট হয়ে এর চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের ঘটনা কেবল একবারই ঘটেছে। সেটারও ভুক্তোভুগী অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯১ সালে প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রান করেও তাদের ৩৪৩ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্রিকেটের দুই পরাশক্তির টেস্ট দ্বৈরথ। বাইশগজের লড়াইয়ের আগেই কথার উত্তাপ চরমে পৌঁছেছিল। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানটা ভারতের জন্য স্বস্তির থাকলেও ঘরের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে লজ্জার হোয়াইটওয়াশের পর তাদের পক্ষে বাজি ধরারও খুব বেশি লোক পাওয়া যাবে না।
এর মধ্যে প্রথম টেস্টে ভারত পায়নি নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ছিলেন না তারকা ব্যাটার শুভমান গিল। ডেডলাইন এসে গিয়েছিল কোচ গৌতম গম্ভীরের। জয়ে ফেরার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের সমীকরণ বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের প্রথম টেস্টের নেতৃত্বের গুরুদায়িত্বটা পান জসপ্রীত বুমরাহ। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েএনে দিলেন অনেক প্রশ্নের উত্তরের এক জয়।
পার্থ টেস্টে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। এত অল্প পুঁজির পরেও বোলারদের কল্যাণে ৪৬ রানের লিড পেয়ে যায় জসপ্রীত বুমরাহর দল। দ্বিতীয় ইনিংসে মুদ্রার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র নিয়ে হাজির হয় ভারত।
যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল—দুজন মিলে গড়েন ২০১ রানের ম্যারাথন ওপেনিং জুটি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ২৯৭ বলে ১৬৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন জয়সওয়াল। দেড় বছরেরও বেশি সময় পর সেঞ্চুরির অপেক্ষা ফুরোয় কোহলিরও। দুই সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৮৭ রান করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিল ভারত। তাদের লিড দাঁড়ায় ৫৩৩ রানে।
টার্গেটটা ৫৩৪। টেস্ট ক্রিকেটের দেড় শ’ বছরের ইতিহাসে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে কোনো দল ৪৩৩ রানও কখনো তাড়া করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা অতি বড় সমর্থকও দেখছিলেন না। এর মধ্যে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট নিয়ে জয় কার্যত নিশ্চিত করে রেখেছিল ভারত।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য সাত উইকেটের অপেক্ষা ছিল সফরকারীদের। অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দিতে তিন সেশনও লাগল না ভারতের। চতুর্থ দিন দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজ স্পষ্ট করে দিলেন যে খেলার ভাগ্য কী হতে চলেছে। উসমান খাজাকে আউট করলেন তিনি। স্টিভ স্মিথ লড়াইয়ের চেষ্টা চালালেন। শেষমেশ তিনিও ফিরলেন সিরাজের বলে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একমাত্র লড়াইটা চালাতে পারলেন ট্রাভিস হেড। ভারতীয় সমর্থকদের কাছে দুঃস্বপ্নের নাম এই হেড। ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও সে বছরই একদিনের বিশ্বকাপ। দু’টি ম্যাচের ফাইনালেই হেডের ব্যাটে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। এই ম্যাচেও তিনি খেললেন। ৮৯ রান করলেন। মিচেল মার্শের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন। কিন্তু এবার পারলেন না।
ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত বল করা বুমরাহই জমে ওঠা জুটিটা ভাঙলেন। অস্ট্রেলিয়ার শেষ দিকের ব্যাটাররা ম্যাচটার দৈর্ঘ্য বাড়াতে চেষ্টার কমতি রাখেননি। কিন্তু হার অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেটাই হলো। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন বুমরাহ।