নিজস্ব প্রতিবেদক :
আদৌ অল্প সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া সম্ভব কি না এমন সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমরা লড়ছি। আমাদের লড়াইয়ের মূল বিষয় গণতন্ত্রের সংস্কার। দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা তা এখনও অর্জন করতে পারিনি। অল্প সময়ের মধ্যে আদৌ গণতন্ত্র পুররুদ্ধার সম্ভব কি না তা অনিশ্চিত। প্রতিদিন নতুন নতুন তত্ত্ব হাজির করা হচ্ছে, সময় নেয়া হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশকে ভঙ্গুর অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমরা মনে হয় সংস্কার বিরোধী। অথচ সংস্কার শুরুটাই করেছি আমরা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে সাবেক এটর্নি জেনারেল ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকেই বলেন বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করি। আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই। এ সময় আদৌ অল্প সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া সম্ভব কি না তা অনিশ্চিত।
জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কাজ না করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের আমরাই বসিয়েছি। কিন্তু তারা এমন কিছু কাজ করছেন, যা সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত নয়। আরাকান সীমান্তে করিডরের বিষয়েও জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও মতামত নেওয়া হয়নি।
বিএনপি কেন নির্বাচন চায় এর কারণ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও ৯০ শতাংশ আমলা ফ্যাসিস্টদের দোসর। অনিদিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত অনির্বাচিত সরকার মানুষের জন্য উপকার আসতে পারে? মঙ্গলবার প্রমাণ হয়েছে, খালেদা জিয়া সব চাইতে জনপ্রিয় নেতা। এটাও প্রমাণ হয়েছে বিএনপির হাতে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিরাপদ। এমন সরকার করতে চাই যাতে জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায়। সংস্কার করতে যদি ১০ বছর সময় লাগে। তাহলে কী ১০ বছর পরে নির্বাচন হবে? এই সময় ফ্যাসিস্ট আমলাদের নিয়ে চলতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ একটি অনিশ্চিত অবস্থায় চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভঙ্গুর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। অন্যদিকে আমরা যাদের বসিয়েছি, আশা করেছিলাম, তারা দেশের সংস্কার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবেন। কিন্তু তারা এখনও কোনও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নির্ধারণ করতে পারেননি। সরকারের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে দেশ কতটা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬ সালে প্রশাসন, বিচার ও নির্বাচনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের বিষয়ে আমরাই প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন রেইনবো প্রস্তাব দিয়ে জাতিসত্ত্বাকে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে দলগতভাবে ২৭ দফা এবং পরে যুগপৎ আন্দোলনের শরীক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। অথচ এখন বলা হচ্ছে, আমরা নাকি সংস্কার চাই না। আমরা নাকি ক্ষমতা চাই। হ্যাঁ আমাদের গঠনতন্ত্রের মধ্যেও ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি বলা আছে। তবে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা চাই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
অনিদিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত অনির্বাচিত সরকার মানুষের জন্য উপকার আসতে পারে? প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, মঙ্গলবার প্রমাণ হয়েছে খালেদা জিয়া সবচাইতে জনপ্রিয় নেতা। এটাও প্রমাণ হয়েছে বিএনপির হাতে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিরাপদ। এমন সরকার করতে চাই যাতে জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায়। সংস্কার করতে যদি ১০ বছর সময় লাগে। তাহলে কী ১০ বছর পরে নির্বাচন হবে?’ এই সময় ফ্যাসিস্ট আমলাদের নিয়ে চলতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের অর্থনীতি নিয়েও প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অর্থনীতির জন্য কী করেছে? অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আগামীতে আরো হবে। বিনিয়োগ আসছে না, বিদেশীরা বলছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তারা বিনিয়োগ করবে না। মুদ্রাস্ফীতি কমছে না। যারা এতদিন ব্যবসা করতে পারেনি, তাদের জন্য সরকার কিছু করেনি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য চায়। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যাতে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাউকে না জানিয়ে করিডোর দেয়া হচ্ছে। যেখানে আরাকাম আর্মির কোনো সরকারই নেই। যদি দেয়ার প্রয়োজন হয় দেয়া হবে। আমরা মানবতার পক্ষে। তবে তা রাজনৈতিক দল এবং দেশের জনগণকে নিয়ে দেয়া হবে। দেশ-গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কখনোই বাধা হবো না বরং সামনে এসে দাঁড়াবো।
আইনজীবীদের তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে কথা বলতে হবে। গণতন্ত্র যেন ব্যাহত না হয়, দেশ যেন ভুল পথে পরিচালিত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ ৬০ লাখ মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ১৭শ’ গুম, ২০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে।
প্রয়াত সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি নীতির প্রশ্নে আপোসহীন ছিলেন। যা বলতেন তা করতেন। পেশাদারত্বে ছিলেন দৃঢ়।