Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ স্বাগত জানাব না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বা কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপকে আমরা কখনোই স্বাগত জানাব না।

রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করে কথা বলছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন কেন, যে কোনো বিষয়ে আমাদের কাঠামো, সংবিধান, আমাদের নির্বাচন কমিশন বা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কমেন্টস করতে পৃথিবীর কোনো বন্ধু রাষ্ট্রকেই আমরা বলিনি বা স্বাগত জানাব না। আমরা কখনোই এ ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহ দেব না।

তিনি বলেন, যে কয়েকজন করেন, আমরা অতীতেও বলেছি আমাদের অবস্থান। তারপরও যারা এটা করেন বা করে যান, আমরা কখনই এটাকে স্বাগত জানাব না। তবে কেউ যদি পর্যবেক্ষক পাঠাতে চান, পাঠাতে পারেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমনকি বন্ধুরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পছন্দ করবে না সরকার। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর কোনও বন্ধুরাষ্ট্রকে বলিনি এবং এটি আমরা চাইও না যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ধরনের বক্তব্য কেউ করুক। যারা এটি করে, তাদের আমরা অতীতেও বলেছি আমাদের অবস্থানের কথা। তারপরও অনেকে এটি করে যান এবং এটি দুঃখজনক। আমরা এটি পছন্দ করি না এবং কখনও করবো না।’

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে মন্তব্য বা নাক গলানো আমরা চাই না বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে অবশ্যই ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, ভারতের প্রশ্ন এলে আওয়ামী লীগ সরকারকে, নেতৃত্বকে বা প্রধানমন্ত্রীকে—আমরা সঠিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছি না, বা অনেক ছাড় দিচ্ছি। এ ধরনের নানান দোষে সাব্যস্ত করা হয় বা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিষয়, যা আমাদের বিপক্ষে কাজ করেছে, সেটি হচ্ছে, আমরা ভারতকে গ্যাস দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছি মার্কিন চাপের মুখে। কই তখন তো কেউ বলেন না শেখ হাসিনা কেন ভারতকে গ্যাস দিলো না।

প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি দেশ ছাড়া অন্য কোনও দেশ নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি দেয়নি। একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখবো।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি এখানেও আপনারা উন্নতি দেখবেন। আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং আমরা কাজ করছি।

‘র‌্যাব প্রশ্নে পরিষ্কারভাবে ওই দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে গত দুই বছরে বেশ উন্নতি হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে এর ফলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়া উচিত। আমরা এটি আদায় করে ছাড়বো।’ আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পেরেছি বলে শাহরিয়ার আলম জানান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নতির পরেও যদি এটি প্রত্যাহার না হয়, তাহলে একদিন আমাদের বুঝতে হবে—এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণ আছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পর একটি দেশ ৬ মাসের মধ্যে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিল। তখন এটিকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছিল সরকার। ওই সময়েও সরকার চাপে ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৪ সালে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তার তিন দিন পর একটি ডিপ্লোমেটিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করি। ওই ব্রিফিংয়ে (বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা) সাধারণভাবে নেতিবাচক কিছু বলেননি। কিন্তু একজন তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন—তারা বর্ষার আগে নতুন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। আমি এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলাম এবং এ জন্য আমার কোনও নোটও প্রস্তুত ছিল না। তারপরেও আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলাম যে এটি একটি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বিষয়। ২০১৪ থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি আইন প্রণয়ন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ক্যাবিনেটে এবং সেটি অত্যন্ত গতিশীল একটি সরকার ছিল।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে যদি আমরা চাপ অনুভব না করি, বর্তমান সময়ে কোনও কিছুতে আমরা চাপ অনুভব করবো না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের ম্যান্ডেট যতদিন আছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাবে। কাজ করে যাবে দ্ব্যর্থহীনভাবে। যে সময়ে নির্বাচন কমিশন তাদের তফসিল ঘোষণা করবে, যেদিন থেকে বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত হয়ে যাবে, সেদিন সরকার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এখানে থমকে যাওয়া, ফিরে দেখা বা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ভীতি তো অনেক দূরের কথা, আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যার ডিকশনারিতে ভীতি শব্দটি নেই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে দুটো চিঠির ড্রাফট আছে। বিএনপির লোকজন টাকা নিয়ে চিঠির ড্রাফট হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদের কাছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী পুলিশ বাহিনী বা সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত শান্তিরক্ষী বাহিনী যেটা গোটা পৃথিবীতে একটি উদাহরণ। অব্যাহতভাবে টানা প্রায় ১০ বছর ধরে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে প্রায় ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এই যে অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন বা এ অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন; তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, তারা শত্রু।

তিনি বলেন, যারা এটা করেছেন, তারা কংগ্রেসম্যান, সিনেটর, প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টার, ফরেন মিনিস্টার যেই হোক না কেন, তারা আমাদের শত্রু। তাদের যারা প্রমোট করেছেন পয়সা দিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সময় এসেছে তাদের চিনে নেওয়ার। তবে এটা নিয়ে আমাদের রিয়েক্ট করার কোনো কারণ নেই। কারণ এটা আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত যাদের ওপর দায়িত্ব আছে পৃথিবীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার, তারা কোনো এক অদ্ভুত কারণে ধারাবাহিকভাবে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও চিঠি আসার ইঙ্গিত দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে নিশ্চিত থাকবেন এ ধরনের চিঠির সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।

ইউরোপীয় ছয় সংসদ সদস্যের চিঠির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের পার্লামেন্টের সদস্য যারা কোনো দিন বাংলাদেশে আসেননি, আমার সত্যিই সন্দেহ হয় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় সেটাও তারা জানেন কি না। অথচ তারা স্টেটমেন্ট দিয়ে দিচ্ছেন।

বিদেশে সরকারের লবিস্ট পিআর ফার্ম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম জানান, আমাদের একটি পিআর ফার্ম আছে। নেলসন মুলিনস। যাদের মাসিক ফি ২০ বা ২৫ হাজার ডলার। আমরা বিজিআর নামে আরেকজনকে এনগেজ করেছিলাম লেখালেখির জন্য, নিউজ পেপার আর্টিকেলের জন্য। তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট আমরা রিনিউ করনি।

তিনি বলেন, যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তারা বা তাদের পরিবার, তাদের ব্যবসায়ীক অংশীদার শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতায় উপকারভোগী। তারপরও যারা এ কাজগুলো করছেন, এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমি মনে করি। তার জবাব জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণ দেবে।

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য দেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ স্বাগত জানাব না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বা কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপকে আমরা কখনোই স্বাগত জানাব না।

রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করে কথা বলছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন কেন, যে কোনো বিষয়ে আমাদের কাঠামো, সংবিধান, আমাদের নির্বাচন কমিশন বা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কমেন্টস করতে পৃথিবীর কোনো বন্ধু রাষ্ট্রকেই আমরা বলিনি বা স্বাগত জানাব না। আমরা কখনোই এ ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহ দেব না।

তিনি বলেন, যে কয়েকজন করেন, আমরা অতীতেও বলেছি আমাদের অবস্থান। তারপরও যারা এটা করেন বা করে যান, আমরা কখনই এটাকে স্বাগত জানাব না। তবে কেউ যদি পর্যবেক্ষক পাঠাতে চান, পাঠাতে পারেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমনকি বন্ধুরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পছন্দ করবে না সরকার। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর কোনও বন্ধুরাষ্ট্রকে বলিনি এবং এটি আমরা চাইও না যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ধরনের বক্তব্য কেউ করুক। যারা এটি করে, তাদের আমরা অতীতেও বলেছি আমাদের অবস্থানের কথা। তারপরও অনেকে এটি করে যান এবং এটি দুঃখজনক। আমরা এটি পছন্দ করি না এবং কখনও করবো না।’

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে মন্তব্য বা নাক গলানো আমরা চাই না বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে অবশ্যই ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, ভারতের প্রশ্ন এলে আওয়ামী লীগ সরকারকে, নেতৃত্বকে বা প্রধানমন্ত্রীকে—আমরা সঠিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছি না, বা অনেক ছাড় দিচ্ছি। এ ধরনের নানান দোষে সাব্যস্ত করা হয় বা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিষয়, যা আমাদের বিপক্ষে কাজ করেছে, সেটি হচ্ছে, আমরা ভারতকে গ্যাস দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছি মার্কিন চাপের মুখে। কই তখন তো কেউ বলেন না শেখ হাসিনা কেন ভারতকে গ্যাস দিলো না।

প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি দেশ ছাড়া অন্য কোনও দেশ নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি দেয়নি। একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখবো।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি এখানেও আপনারা উন্নতি দেখবেন। আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং আমরা কাজ করছি।

‘র‌্যাব প্রশ্নে পরিষ্কারভাবে ওই দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে গত দুই বছরে বেশ উন্নতি হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে এর ফলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়া উচিত। আমরা এটি আদায় করে ছাড়বো।’ আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পেরেছি বলে শাহরিয়ার আলম জানান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নতির পরেও যদি এটি প্রত্যাহার না হয়, তাহলে একদিন আমাদের বুঝতে হবে—এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণ আছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পর একটি দেশ ৬ মাসের মধ্যে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিল। তখন এটিকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছিল সরকার। ওই সময়েও সরকার চাপে ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৪ সালে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তার তিন দিন পর একটি ডিপ্লোমেটিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করি। ওই ব্রিফিংয়ে (বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা) সাধারণভাবে নেতিবাচক কিছু বলেননি। কিন্তু একজন তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন—তারা বর্ষার আগে নতুন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। আমি এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলাম এবং এ জন্য আমার কোনও নোটও প্রস্তুত ছিল না। তারপরেও আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলাম যে এটি একটি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বিষয়। ২০১৪ থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি আইন প্রণয়ন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ক্যাবিনেটে এবং সেটি অত্যন্ত গতিশীল একটি সরকার ছিল।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে যদি আমরা চাপ অনুভব না করি, বর্তমান সময়ে কোনও কিছুতে আমরা চাপ অনুভব করবো না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের ম্যান্ডেট যতদিন আছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাবে। কাজ করে যাবে দ্ব্যর্থহীনভাবে। যে সময়ে নির্বাচন কমিশন তাদের তফসিল ঘোষণা করবে, যেদিন থেকে বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত হয়ে যাবে, সেদিন সরকার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এখানে থমকে যাওয়া, ফিরে দেখা বা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ভীতি তো অনেক দূরের কথা, আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যার ডিকশনারিতে ভীতি শব্দটি নেই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে দুটো চিঠির ড্রাফট আছে। বিএনপির লোকজন টাকা নিয়ে চিঠির ড্রাফট হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদের কাছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী পুলিশ বাহিনী বা সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত শান্তিরক্ষী বাহিনী যেটা গোটা পৃথিবীতে একটি উদাহরণ। অব্যাহতভাবে টানা প্রায় ১০ বছর ধরে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে প্রায় ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এই যে অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন বা এ অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন; তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, তারা শত্রু।

তিনি বলেন, যারা এটা করেছেন, তারা কংগ্রেসম্যান, সিনেটর, প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টার, ফরেন মিনিস্টার যেই হোক না কেন, তারা আমাদের শত্রু। তাদের যারা প্রমোট করেছেন পয়সা দিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সময় এসেছে তাদের চিনে নেওয়ার। তবে এটা নিয়ে আমাদের রিয়েক্ট করার কোনো কারণ নেই। কারণ এটা আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত যাদের ওপর দায়িত্ব আছে পৃথিবীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার, তারা কোনো এক অদ্ভুত কারণে ধারাবাহিকভাবে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও চিঠি আসার ইঙ্গিত দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে নিশ্চিত থাকবেন এ ধরনের চিঠির সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।

ইউরোপীয় ছয় সংসদ সদস্যের চিঠির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের পার্লামেন্টের সদস্য যারা কোনো দিন বাংলাদেশে আসেননি, আমার সত্যিই সন্দেহ হয় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় সেটাও তারা জানেন কি না। অথচ তারা স্টেটমেন্ট দিয়ে দিচ্ছেন।

বিদেশে সরকারের লবিস্ট পিআর ফার্ম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম জানান, আমাদের একটি পিআর ফার্ম আছে। নেলসন মুলিনস। যাদের মাসিক ফি ২০ বা ২৫ হাজার ডলার। আমরা বিজিআর নামে আরেকজনকে এনগেজ করেছিলাম লেখালেখির জন্য, নিউজ পেপার আর্টিকেলের জন্য। তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট আমরা রিনিউ করনি।

তিনি বলেন, যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তারা বা তাদের পরিবার, তাদের ব্যবসায়ীক অংশীদার শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতায় উপকারভোগী। তারপরও যারা এ কাজগুলো করছেন, এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমি মনে করি। তার জবাব জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণ দেবে।

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য দেন।