স্পোর্টস ডেস্ক :
বল হাতে জ্বলে উঠেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, উইকেট পান নাসিম শাহও। বেশ ভালো উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশোর ভেতর আটকে রাখে পাকিস্তান। রান তাড়ায় দুই অভিজ্ঞ বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের মাঝারি ইনিংসের পর ঝলক দেখান ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হাসান নেওয়াজ। যাতে জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে পাকিস্তান।
রান তাড়ায় ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত জুটিতে নাওয়াজের সঙ্গী হুসাইন তালাত। তার জন্যও ম্যাচটি ছিল অভিষেকের মতোই। একটি ওয়ানডে আগে খেলেছেন বটে, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচটি ছিল সাড়ে ছয় বছরের বেশি আগে। দুই নবীন মিলেই পরাজয়ের চোখরাঙানির মধ্যে শতরানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জিতিয়ে দেন দলকে।
ত্রিনিদাদে দিন-রাতের ম্যাচে এভিন লুইস, শেই হোপ ও রোস্টন চেইসের ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ২৮০ রান। পাকিস্তানের পেস আক্রমণের মূল দুই অস্ত্র শাহিন শাহ আফ্রিদি শিকার করেন চার উইকেট, নাসিম শাহ তিনটি।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে পাকিস্তান জিতে যায় সাত বল বাকি রেখে। অধিনায়ক মোহাম্মাদ রিজওয়ান ফিফটি করেও আউট হয়ে যান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। পরে ৫৪ বলে ৬৩ বলে অপরাজিত থাকেন নাওয়াজ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কার যে দক্ষতা তিনি দেখিয়ে চলেছেন, সেই প্রদর্শনী ছিল ওয়ানডে অভিষেকেও। ৫ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৩৭ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তালাত। দুজনের জুটিতে ১০৪ রান আসে কেবল ৭০ বলেই।
নাওয়াজ আগে আরেকটি সুযোগ দিয়েছিলেন ১৮ রানেও, যা নিতে পারেননি হোপ। ক্যাচ ছাড়ার খেসারত তো দিতেই হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, শিশিরের কারণে তাদের বোলারদের কাজটাও হয়ে পড়ে কঠিন।
ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে আবহাওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়ে শুরু হয়। সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরেছে প্রচুর। ম্যাচ শুরুর সময়ও আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। আবহাওয়ার কারণেই টস জিতে বোলিং নেন পাকিস্তান অধিনায়ক রিজওয়ান। প্রথম ওভারেই ব্র্যান্ডন কিংকে ফেরান আফ্রিদি।
দ্বিতীয় উইকেটে লুইস ও কেসি কার্টি যোগ করেন ৮২ বলে ৭৭ রান। এই দুজনকে ফিরিয়ে মাঝের সময়টায় ক্যারিবিয়ানদের চেপে ধরেন পাকিস্তানি স্পিনাররা। ৩০ রান করা কার্টিকে ফেরান সুফিয়ান মুকিম। বিপজ্জনক লুইসকে (৬২ বলে ৬০) থামান সাইম আইয়ুব। শেরফেন রাদারফোর্ডকে জ্বলে উঠতে দেননি সালমান আলি আগা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩৬।
সেখান থেকে ৬৪ রানের জুটি গড়েন শেই হোপ ও রোস্টন চেইস। দুজনেই ফিফটির দেখা পান, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। আফ্রিদি আক্রমণে ফিরে হোপকে (৭৭ বলে ৫৫) বিদায় করার পর রোমারিও শেফার্ডকেও (৪) দ্রুত ফিরিয়ে জোড়া ধাক্কা দেন ক্যারিবিয়ানদের। ৫৪ বলে ৫৩ করা চেইসকে ফেরান নাসিম।
শেষ দিকে মোটির ১৮ বলে ৩১ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮০ রানে নিয়ে যায়। টানা দুটি ইয়র্কারে মোটি ও জেডিয়াহ ব্লেডসকে বোল্ড করে ইনিংস শেষ করেন নাসিম।
পাকিস্তান রান তাড়ায় ওপেনার সাইম আইয়ুবকে (৫) হারায় দ্রুত। আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শাফিক (২৯) বিদায় নেন থিতু হওয়া পর।
তিনে নেমে বাবর আজম শুরুতে রান সেভাবে বের করতে পারছিলেন না। রিজওয়ানের শুরুটাও ছিল অস্বস্তিময়। জেডেন সিলস ও শামার জোসেফের সামনে ততটা সুবিধা করতে পারছিলেন না তারা। এক পর্যায়ে টানা ১৬ বলে রান নিতে পারেনি এই জুটি।
তবে উইকেট ধরে রেখে পরে রানের চাকা সচল করেন দুজনই। জুটিতে আসে ৫৫ রান। বাবর ৪৭ রানে (৬৪ বলে) স্টাম্পড হন মোটির বলে।
প্রথম বলে জীবন পেয়ে সালমান আলি আগা দলকে একটু এগিয়ে নেন রিজওয়ানের সঙ্গে। তবে এই দুজনও শেষ করতে পারেননি কাজ। ২৩ রানে ফেরেন সালমান। ৬৯ বলে ৫৩ করে রিজওয়ান যখন আউট হন, ১২.৪ ওভারে তখন ১০১ রান লাগে পাকিস্তানের। সম্ভাবনায় বেশ এগিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে নাওয়াজ ও তালাত সেই কঠিন পথ পাড়ি দেন দারুণ ব্যাটিংয়ে। শুরুতে অবশ্য ধুঁকছিলেন নাওয়াজ। প্রথম ১৫ বলে তার রান ছিল ৫। পরে চেইসের বলে ছক্কার পর আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান। তালাতও দারুণ সঙ্গ দেন তাকে।
এই দুজনের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে নিজেদের দায় মিলিয়ে ম্যাচে ফিরতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। শেষ দিকে নাওয়াজ ওই জীবন পাওয়ার পর ৩ ওভারে ২৭ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। জেডিয়ান ব্লেডসকে তখন টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন তালাত। পরের ওভারে শামার জোসেফকে ছক্কা ও চারে ম্যাচ শেষ করে দেন নাওয়াজ। ওয়ানডে অভিষেকে ম্যাচ-সেরা হওয়া পাকিস্তানের একাদশ ক্রিকেটার তিনি। সিরিজের পরের ম্যাচ একই মাঠে রোববার।