পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :
অন্যায় অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক জেলা উপজেলার মানুষকে নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে অসহায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, অন্যায় অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক জেলা উপজেলার মানুষকে নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা হবে। কেউ অন্যায় অনিয়ম করলে এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে সেটি আমানত মনে করি। এই আমানত রেখে মানুষের কল্যাণে যা কিছু করা যায় আমরা করবো।
বিগত ১৬ বছরে পঞ্চগড়সহ পুরো রংপুর বিভাগ অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে কয়েকটি রাস্তা ছাড়া কিছুই হয়নি। একটা শিল্পকারখানা নাই, একটা বড় কোনো ইন্ডাস্ট্রি, মানে কোনো কিছুই নাই। যেটুকু পঞ্চগড়ের মানুষের পাওনা, হক এইটুকু কীভাবে আদায় করতে হয়, এটার জন্য আমরা আমাদের জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করব।
সারজিস আলম বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের এখন যে সুযোগ দিয়েছেন, সেটি আমাদের কাছে আমানত। আমরা কখনো কল্পনাও করি নাই যে আমাদের জীবদ্দশায় এই সুযোগ আমাদের দেবে। আমরা এই আমানতটাকে রেখে মানুষের জন্য যা কিছু করা যায়, লিগ্যালি, লজিক্যালি আমরা সেগুলো করার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমাকে নেতা ভাবার কোনো দরকার নাই। আমি আপনাদেরই কারও ছেলে, কারও ভাই। অনেক কিছু ইচ্ছা আছে, অনেক কিছু স্বপ্ন আছে পঞ্চগড় নিয়ে।
সারজিস আলম বলেন, মানুষের ক্ষমতা আজ আছে, কাল নাই। টাকাও আজ আছে, কাল নাই। কিন্তু কেউ যদি কিছু একটা করে যায়, সেটা ১০০ বছর পর্যন্ত থেকে যাবে। আর টাকা দিয়ে কিন্তু মানসম্মান কোনো দিন কেনা যায় না। এই যে আপনাদের স্নেহ, ভালোবাসা এটা তো সবাই পায় না। আপনারা শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থানটি সফল হয়েছে এবং আমরা যারা এই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি তার সামগ্রিক একটি রূপরেখা এই জায়গায় দেখতে পাবো।
এতো রক্ত, এতো জীবনের বিনিময়ে জণগনের চাওয়া কেবল একটি নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সারজিস বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হয়ে জনগণের যারা প্রতিনিধি হবে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতা যাবে এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে নতুন একটি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করা, বিচার ব্যবস্থাকে ঠিক করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা প্রায় অবাস্তব ও অসম্ভব।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের জায়গা থেকে বলেছিল, ২০২৬ সালের মাঝামাঝির আগেই নির্বাচন দেবে। অর্থাৎ, অভ্যুত্থানের দুই বছরও হচ্ছে না। তারা যদি মনে করেন, আরো ২-৪ মাস আগেই নির্বাচন দেবেন, তাও যৌক্তিক হতে পারে। আমরা এমনটাও শুনেছিলাম, ২৫ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্ভব।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আমরা মানুষের চাওয়া নিয়েই কাজ করেছি। সব কর্মসূচি ছিলো মানুষের পালস বুঝেই। মানুষ এখন চায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক। পঞ্চগড়ের মানুষ যদি মনে করে আমি কিংবা তরুণ অন্য কেউ সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তাহলে আমি মনে করি তার এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
কম্বল বিতরণ নিয়ে সারজিস বলেন, অনেক বিত্তবান ভালো মানুষ আছেন, অনেক পোশাক কারখানার মালিক আছেন। তাঁদের সঙ্গে কেবল যোগাযোগ করারও সদিচ্ছা থাকা দরকার। তাঁরা যেসব শীতবস্ত্র পেয়েছেন সেগুলো পঞ্চগড়ের প্রতিটি ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদম সুফী, আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) আব্দুল বারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান, গরিনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপু উপস্থিত ছিলেন।