নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা দুটি হেলিকপ্টার কিনেছি। পুরো বর্ডারে সেন্সর লাগাচ্ছি। এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে সমস্যা সামনে আসছে, সেটা মাথায় নিয়েই সমাধানের চেষ্টা করছি। আপনারা দেখেছেন আমাদের একজন সৈনিককেও তারা হত্যা করেছে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নটরডেম কলেজে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, মিয়ানমারের বিছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠী যারা রয়েছে, তারাই মাঝে মাঝে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঢুকছে এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সীমান্তে যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা বর্ডার ফোর্সকে আরও শক্তিশালী করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার সম্পর্কে আপনারা জানেন, সেখানে শুধু আরাকান আর্মিদের বিছিন্নতাবাদী নেই, বরং সেখানে কুকি চিনসহ প্রায় ৩০টি গোষ্ঠী সবসময় সংঘর্ষে লিপ্ত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সেখান থেকেই আসছে। সেখান থেকে আসার কারণে হয়তো এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) তাদের দু-চারজন অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যেই সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে। এখানে কে নেতৃত্ব দেবে, সেটা নিয়েই সংঘর্ষ হচ্ছে। আজকের ঘটনাটি আমাদের আরও বিস্তারিত জানতে হবে। ঘটনাটি ঘটেছে এটা সত্য। এর তদন্ত প্রতিবেদন আমরা দ্রুত জানাবো।
নিরাপত্তা জোরোদারের পরেও কীভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কিছু সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত রয়েছে। যেসব এলাকায় কোনো যাতায়াত নেই। নাফ নদীর এমন কয়েকটি চরের মতো জায়গাও রয়েছে, যেখানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের নো-ম্যানস ল্যান্ড রয়েছে। সেখানে তারা অভায়রণ্য তৈরি করেছে। সেখানে তারা অহরহ যাতায়াতও করছে। আমরা সেই জায়গাগুলোর জন্য নিরাপত্তা বাড়াচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এখানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের একটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে পারে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বিশ্ব ফোরামকে আহ্বান জানাতে চাই। তাদের যত তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফেরানো যায়, ততই মঙ্গল।
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পরদিনই পাঁচ রোহিঙ্গা হত্যার কথা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যত তাড়াতাড়ি তাদের দেশে ফেরত যাবে, ততই তাদের দেশের জন্য এবং আমাদের দেশের জন্য মঙ্গলজনক।’
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনারা দেশের সম্পদ। কারণ আপনারা বিদ্রোহ করতে জানেন, ঘুরে দাঁড়াতে জানেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জানেন। যেটা এ উপমহাদেশে সবাই বিশ্বাস করি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ছয়টি ঋতুর মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা একসঙ্গে বসবাস করছি। সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় যোদ্ধারা কখনো ইংরেজদের বন্ধুক বা গুলির ভয় করেনি। আমাদের এই বঙ্গে অনেক আন্দোলন হয়েছে। ইলা মিত্রও তেভাগা আন্দোলন করেছিলেন। তখন ইংরেজদের বর্বরতা ছিল নির্মম। আপনারা ১৬৮ বছর আগের সেই বিদ্রোহ আর বীরত্বের ইতিহাস যেভাবে ধরে রেখেছেন, আগামীতেও এর ধারাবাহিক রক্ষা করতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ বঙ্গভূমিতে হাজার বছর ধরে আমরা বাস করি। অনেক সম্প্রদায়ের লোক আমরা এ বঙ্গতে বসবাস করছি। বঙ্গবন্ধু বলে ছিলেন এ দেশ সবার। স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা সবাই একত্রে বসবাস করতে পারছি। সাঁওতাল জনগোষ্ঠী সবসময় বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন করেছিল।
তিনি বলেন, সব দাবি প্রধানমন্ত্রী জানেন এবং সেগুলো পূরণে কাজ করছেন। প্রাথমিক শিক্ষা যার যার বর্ণমালা ও ভাষায় নেবে সরকার, সেই সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে নেওয়া হয়েছে। ভূমির প্রকৃত মালিকরাই ভূমির মালিকানায় থাকবে সেই ভূমিনীতিই আমরা করছি।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার আলোতে আপনারা যারা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছেন আরও এগিয়ে যেতে হবে। এখানে পিছিয়ে গেলে হবে না। আমরা সবাই মিলেই এগিয়ে যাবো।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা বীরের জাতি। অতীতে আমরা কোনো অন্যায় বা অপকর্ম মেনে নেইনি। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা বার বার ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের গারো, হাজং ও মারমাসহ সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এ দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সাঁওতাল কিংবা এ সমতল ভূমির সবার। আমরা তার এ ডাকে সবাই সাড়া দিয়েছিলাম। স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ঘাতকরা তাকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তর হচ্ছি। এ যাত্রায় সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সবাই বাঙালি। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সাঁওতালদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
আইসিসির প্রধান কৌশলী করিম খান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পরদিনই পাঁচ রোহিঙ্গা হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যত তাড়াতাড়ি তাদের দেশে ফেরত যায় ততই তাদের দেশের জন্য এবং আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল। রোহিঙ্গারা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এখানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের একটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে পারে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বিশ্ব ফোরামকে আহ্বান জানাতে চাই। এদের যত তাড়াতাড়ি তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায় ততই মঙ্গল।
এর আগে সার্বজনীন প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খ্রিস্টান ধর্মযাজক কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও। এসময় উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম এর সহ-সভাপতি মি. বদন মুরমু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।