নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) শুনানি নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রুকনুজ্জামান।
এদিন সাত দিনের রিমান্ড শেষে কবিরকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে আবারও সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। আদালত পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ফয়সাল দেশে কিংবা বিদেশে থাকতে পারেন—দুটো বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর বিকালে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থেকে কবিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তার সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ হয়।
রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে আরও সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ।
শুনানিতে ফয়সাল আদালতকে বলেন, ফয়সালের সাথে এ আসামি একাধিকবার হাদির অফিসে যায়। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক কবির। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আরও তথ্য বাকি আছে। কিছু তথ্য এড়িয়ে গেছে।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি বলেন, এ আসামি ফয়সালের সাথে কয়েকবার হাদির কালচারাল সেন্টারে যায়। আর যে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা তার নামে কেনা। ফয়সালের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আছে। দুইটি বিষয় সামনে রেখে হাদি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি প্রধান আসামি ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে কি না। হয়তো আসামি দেশেই আছে; অনেক সময় আসল ঘটনা পাশ করানোর জন্য নতুন ঘটনার সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং তার বাইরে থাকা বা ভেতরে থাকা—দুটো বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, শুধু দেশ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের মনে এ হত্যার ঘটনা দাগ কেটে গেছে। সরকারের দায়িত্ব আসল খুনি বের করা। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত তার কোনো বক্তব্যও শোনেননি। পরে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন, যা হাদির মৃত্যুর পর হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির, মা মোসা. হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে কথিত সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।
তাদের মধ্যে হুমায়ুন ও হাসি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ড শেষে নুরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিরা রিমান্ডে রয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যু হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















