নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই বিপ্লবী শহিদ ওসমান হাদি।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সাড়ে তিনটার দিকে তাকে শায়িত করা হয়।
এ সময় তার সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। শপথ নেন হাদির স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তারা বলেন, লাখো মানুষের ভালোবাসা প্রমাণ করে জীবিত হাদির চেয়ে শহিদ হাদি অনেক শক্তিশালী।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “আজকে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাদির জানাজা পড়েছি। আমাকে আজকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন, আমি যাইনি। আল্লাহ হাদিকে শাহাদাতের জজবা হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তৃতীয় শহীদ হিসেবে আল্লাহ কবুল করেছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। দেশের জন্য তার যে ত্যাগ আল্লাহ তা কবুল করুক।”
তিনি বলেন, “তার পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত পরিবারের অংশ। আমরা তার চূড়ান্তভাবে সম্মান জানাতে আমাদের এ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে কবরস্থ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সন্তানকে বুকে নিয়েছে। মা তার ছেলেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, শরীফ ওসমান হাদি হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আমাদের এ সংগ্রাম জারি থাকবে সব সময়।
ঢাবি ভিসি বলেন, শরিফ ওসমান হাদি একটি আদর্শের নাম। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত টিকে থাকবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওয়াতায় আনার জোর দাবি জানাই। আমরা চাই চূড়ান্ত সমাধান ও রায় হোক। এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়।
বক্তব্য শেষে দোয়া পরিচালনা করেন হাদির বড় ভাই।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাসহ লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত আসেন তার অনুসারীরা।
এদিকে ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে নজরুল ইসলাম সমাধি কমপ্লেক্সের আশপাশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা কড়া নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এবং কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির মূল ফটকের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় মসজিদের ফটকগুলোও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এর আগে দুপুর আড়াটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী এবং পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো শোকাহত মানুষ জানাজায় শরিক হন।
দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা শেষ হওয়ার পর মরদেহ দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে নেওয়া হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানুষের ঢল নামে। সকাল ১০টার দিকে মানিক মিয়া এভিনিউতে অপেক্ষমাণ ছাত্র-জনতাকে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। চীন থেকে আনা আটটি আর্চওয়ে গেট দিয়ে সারিবদ্ধভাবে হাজারো মানুষ প্লাজায় প্রবেশ করেন। দুপুর ২টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শরিফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মরদেহের সঙ্গে ছিলেন হাদির স্বজন, সহযোদ্ধা ও সহকর্মীরা।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















