Dhaka শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আপসহীন বিপ্লবী ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

লাখো জনতার অংশগ্রহণে জুলাই আপসহীন বিপ্লবী ও আধিপত্যবাদবিরোধী ‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (২০ ডসেম্বর) বেলা আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবণের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।
নামাজের ইমামতি করেন শহীদ ওসমান হাদির বড় ভাই ডা. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বরিশাল বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়া জামে মসজিদের খতিব।

মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ৭/৮ দিন হয়ে গেলো, খুনি দিবালোকের মধ্যে গুলি করে যদি পার পেয়ে যায় এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। যদি বর্ডার ক্রস হয়ে যায়, ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে তারা কেমন করে গেলো? এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার ভাই শহীদ হয়েছে, তার শহীদি তামান্না ছিল। হয়তো আল্লাহ তার শহীদি মৃত্যু নসিব করেছেন।

তিনি বলেন, কিন্তু আপনাদের কাছে আমি এই ঋণ কখনো ছাড়বো না, আমার ভাই শরীফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে দেখতে পারি। ৭/৮দিন হয়ে গেলো, এখনও পর্যন্ত আমরা কিচ্ছু করতে পারলাম না। এই দুঃখে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।

ড. আবু বকর বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছোট ভাই শহীদ শরিফ উসমান হাদি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি মেসেজ দিয়েছিলেন। কীভাবে এটি রক্ষা করতে হয়।

তিনি বলেন, তার সন্তানের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। আমার মা প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছেন, জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট শরিফ ওসমান হাদি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। তৌহিদের দ্বীপ বাংলাদেশকে যেন রক্ষা করতে পারি।

জানাজা শুরু হওয়ার অনেক আগেই আশপাশের সড়ক, মাঠ ও খোলা জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন শেষ বিদায় জানাতে। বয়স্ক, তরুণ, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী—সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে দাঁড়িয়ে, অনেকে বসে, আবার অনেকে রাস্তার ওপর সারিবদ্ধ হয়ে জানাজায় শরিক হন।

মুসল্লীদের মতে, এই বিশাল উপস্থিতি শুধু একটি জানাজা নয়—এটি ছিল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের এক সম্মিলিত প্রকাশ। কারও চোখে অশ্রু, কারও কণ্ঠে দোয়া—সমবেত মানুষের হৃদয়ে একই অনুভূতি, একই প্রার্থনা।

স্থানীয়রা জানান, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও জানাজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। শেষ দোয়ায় গোটা প্রাঙ্গণ যেন একসাথে নিঃশ্বাস ধরে রাখে।

এই জানাজা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা—এটি শুধু সংখ্যার দিক থেকে বড় ছিল না, ছিল আবেগ, সম্মান আর স্মৃতির দিক থেকেও ঐতিহাসিক। অনেকের বিশ্বাস, এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে।

এই জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন। স্মরণকালের সব চেয়ে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হল শহীদ ওসমান হাদির।

অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।
এছাড়াও ছিলেন শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সদস্য এবং তার সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দরোগ ইনস্টিটিউট থেকে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে মিছিলসহ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে আসেন।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই বিপ্লবী শহিদ ওসমান হাদির জানাজার নামাজে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অনংশ নেন।

এর আগে বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও পরিবারের পক্ষ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আপসহীন বিপ্লবী ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন

প্রকাশের সময় : ০২:৪২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

লাখো জনতার অংশগ্রহণে জুলাই আপসহীন বিপ্লবী ও আধিপত্যবাদবিরোধী ‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (২০ ডসেম্বর) বেলা আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবণের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।
নামাজের ইমামতি করেন শহীদ ওসমান হাদির বড় ভাই ডা. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বরিশাল বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়া জামে মসজিদের খতিব।

মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ৭/৮ দিন হয়ে গেলো, খুনি দিবালোকের মধ্যে গুলি করে যদি পার পেয়ে যায় এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। যদি বর্ডার ক্রস হয়ে যায়, ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে তারা কেমন করে গেলো? এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার ভাই শহীদ হয়েছে, তার শহীদি তামান্না ছিল। হয়তো আল্লাহ তার শহীদি মৃত্যু নসিব করেছেন।

তিনি বলেন, কিন্তু আপনাদের কাছে আমি এই ঋণ কখনো ছাড়বো না, আমার ভাই শরীফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে দেখতে পারি। ৭/৮দিন হয়ে গেলো, এখনও পর্যন্ত আমরা কিচ্ছু করতে পারলাম না। এই দুঃখে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।

ড. আবু বকর বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছোট ভাই শহীদ শরিফ উসমান হাদি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি মেসেজ দিয়েছিলেন। কীভাবে এটি রক্ষা করতে হয়।

তিনি বলেন, তার সন্তানের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। আমার মা প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছেন, জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট শরিফ ওসমান হাদি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। তৌহিদের দ্বীপ বাংলাদেশকে যেন রক্ষা করতে পারি।

জানাজা শুরু হওয়ার অনেক আগেই আশপাশের সড়ক, মাঠ ও খোলা জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন শেষ বিদায় জানাতে। বয়স্ক, তরুণ, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী—সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে দাঁড়িয়ে, অনেকে বসে, আবার অনেকে রাস্তার ওপর সারিবদ্ধ হয়ে জানাজায় শরিক হন।

মুসল্লীদের মতে, এই বিশাল উপস্থিতি শুধু একটি জানাজা নয়—এটি ছিল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের এক সম্মিলিত প্রকাশ। কারও চোখে অশ্রু, কারও কণ্ঠে দোয়া—সমবেত মানুষের হৃদয়ে একই অনুভূতি, একই প্রার্থনা।

স্থানীয়রা জানান, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও জানাজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। শেষ দোয়ায় গোটা প্রাঙ্গণ যেন একসাথে নিঃশ্বাস ধরে রাখে।

এই জানাজা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা—এটি শুধু সংখ্যার দিক থেকে বড় ছিল না, ছিল আবেগ, সম্মান আর স্মৃতির দিক থেকেও ঐতিহাসিক। অনেকের বিশ্বাস, এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে।

এই জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন। স্মরণকালের সব চেয়ে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হল শহীদ ওসমান হাদির।

অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।
এছাড়াও ছিলেন শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সদস্য এবং তার সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দরোগ ইনস্টিটিউট থেকে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে মিছিলসহ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে আসেন।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই বিপ্লবী শহিদ ওসমান হাদির জানাজার নামাজে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অনংশ নেন।

এর আগে বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও পরিবারের পক্ষ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।