Dhaka বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি ফেলে নতুন রাজনীতি শুরু করতে চাই : জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীতের বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে চেপে রেখে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চাই। আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল, আমরা সেদিকে আর ফিরে যেতে চাই না।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। মাত্র সাড়ে চার বছরের দুঃশাসন মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছিল। এরপর তাদের কার্যক্রমের পরিণতি হিসেবে দুনিয়া থেকে তারা বিদায় নিয়েছিলেন। কে সেদিন তাদের হত্যা করেছিল। যারা ৭১ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেই সৈনিকরা কেন সেদিন ক্ষেপে গিয়েছিল। এর উত্তর আওয়ামী লীগকে খুঁজতে হবে, জাতিকে নয়। কিন্তু অতীতের বস্তাপচা সব রাজনীতিকে আমরা পায়ের নিচে চেপে সমাপ্তি টানতে চাই। নতুন বাংলাদেশের নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী ও একটি দলকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা দেশকে ‘শ্মশান বাংলায়’ পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কোনো দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয়ের দ্বার খুলে দেবে। অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি বাংলাদেশকে সামনে নয়, পেছনে টেনেছে। এই রাজনীতি স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা সেই রাজনীতির সমাপ্তি টানতে চাই। নতুন বাংলাদেশের নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চাই– যে রাজনীতি হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তখন দেশের মানুষ একাট্টা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর একটি দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলে। বাকি মানুষকে বানানো হয় দাস। বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়, মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

তিনি রক্ষী বাহিনীর কথা উল্লেখ করে বলেন, রক্ষী বাহিনীর নামে জল্লাদ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। দেশজুড়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর ফল ছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ— যেখানে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ঢাকায় লাশ দাফন করেছিল। এটাই ছিল তথাকথিত সোনার বাংলার বাস্তব চিত্র।

আওয়ামী লীগের বারবার ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, তিন দফা ক্ষমতায় এসে তারা দেশকে দিয়েছে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু চেয়ারে বসেই ফিরেছিল পুরনো চেহারায়। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের নৃশংসতা– এসবই সেই ধারাবাহিকতার অংশ।

তিনি সুবর্ণচরের ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, একটি প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে একজন নারীর ওপর বর্বরতা চালানো হয়েছে। খুন, ধর্ষণ আর আয়নাঘরের রাজনীতি চালানোর কারণেই তাদের পালাতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে গিয়েও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ওসমান হাদির ওপর হামলা তার প্রমাণ। আল্লাহ যেন তাকে ফিরিয়ে দেন– এই দোয়া করি।

আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে বলে মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, যার পরিণতি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। দেশের মানুষ ভেবেছিল আওয়ামী লীগ এটা থেকে শিক্ষা নেবে। কিন্তু তারা তিন দফায় বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। এরপর তারা ’৯৬ সালে মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাতে তসবিহ নিয়ে তারা ক্ষমা চায়। ’৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা আবার ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে। এই তিনবারের ক্ষমতায় বাংলাদেশের এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ মারা যায়নি। এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে তাদের হাতে মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়নি। একটা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে নোয়াখালীতে একজন মাকে আওয়ামী লীগ বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছিল।

৭১ পূর্ব ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭১ এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল একবুক আশা আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। বাংলার মানুষ ভেবেছিল প্রিয় দেশটি সব ধরনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে দেশে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী জনগণের কথা রাখেনি।

জামায়াত আমির বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে সেনাবাহিনীর, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ থাকাকালেও রক্ষীবাহিনী গঠন হয়েছিল। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। মন্ত্রীর ছেলেরা ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে শত শত মানুষের লাশ মাঠেঘাটে পড়েছিল। লাশ দাপনের ব্যবস্থা ছিল না। তারা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে শ্মশানে পরিণত করেছিল। তারপর তাদের কার্যক্রমের ফল হিসেবে তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কোনো দলীয় বিজয় চাই না। চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নতুন বাংলাদেশের মোড়ক উন্মোচন হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জনগণই তা প্রতিরোধ করবে এবং নিঃশেষ করে দেবে।

নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা কমিশনের কাছে কোনো আনুকূল্য চাই না। কিন্তু কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। প্রশাসনের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। কালো টাকার বিনিময়ে মানুষ কেনার দিন শেষ।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা কোনো আনুকূল্য চাই না। কিন্তু কমিশন যদি কারও প্রতি সামান্য আনুকূল্যও দেখায়, আমরা তা বরদাস্ত করবো না। আমরা চাই আপনারা আপনাদের শপথের আলোকে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন উপহার দিন।

যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অতীতের সব বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হবে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে। যেই রাজনীতি হবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পক্ষে, যেই রাজনীতি হবে দুর্নীতির বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, মামলাবাজদের বিপক্ষে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শুধু আমাদের দলের বিজয় চাই না। আমরা চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের জন্য যারা বাধা দেবে, এই যুবকরা তাদের লাথি মেরে সরিয়ে দেবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই বিজয় দিবস শুধু স্মরণের নয়, নতুন শপথ নেওয়ার দিন। পুরোনো রাজনীতির কবর রচনা করে বাংলাদেশকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

তারেক রহমানের সরাসরি সাক্ষাৎ পেতে ‘রিল মেকিং’ প্রতিযোগিতা ঘোষণা বিএনপির

অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি ফেলে নতুন রাজনীতি শুরু করতে চাই : জামায়াত আমির

প্রকাশের সময় : ০২:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীতের বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে চেপে রেখে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চাই। আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল, আমরা সেদিকে আর ফিরে যেতে চাই না।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। মাত্র সাড়ে চার বছরের দুঃশাসন মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছিল। এরপর তাদের কার্যক্রমের পরিণতি হিসেবে দুনিয়া থেকে তারা বিদায় নিয়েছিলেন। কে সেদিন তাদের হত্যা করেছিল। যারা ৭১ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেই সৈনিকরা কেন সেদিন ক্ষেপে গিয়েছিল। এর উত্তর আওয়ামী লীগকে খুঁজতে হবে, জাতিকে নয়। কিন্তু অতীতের বস্তাপচা সব রাজনীতিকে আমরা পায়ের নিচে চেপে সমাপ্তি টানতে চাই। নতুন বাংলাদেশের নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী ও একটি দলকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা দেশকে ‘শ্মশান বাংলায়’ পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কোনো দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয়ের দ্বার খুলে দেবে। অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি বাংলাদেশকে সামনে নয়, পেছনে টেনেছে। এই রাজনীতি স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা সেই রাজনীতির সমাপ্তি টানতে চাই। নতুন বাংলাদেশের নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চাই– যে রাজনীতি হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তখন দেশের মানুষ একাট্টা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর একটি দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলে। বাকি মানুষকে বানানো হয় দাস। বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়, মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

তিনি রক্ষী বাহিনীর কথা উল্লেখ করে বলেন, রক্ষী বাহিনীর নামে জল্লাদ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। দেশজুড়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর ফল ছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ— যেখানে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ঢাকায় লাশ দাফন করেছিল। এটাই ছিল তথাকথিত সোনার বাংলার বাস্তব চিত্র।

আওয়ামী লীগের বারবার ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, তিন দফা ক্ষমতায় এসে তারা দেশকে দিয়েছে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু চেয়ারে বসেই ফিরেছিল পুরনো চেহারায়। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের নৃশংসতা– এসবই সেই ধারাবাহিকতার অংশ।

তিনি সুবর্ণচরের ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, একটি প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে একজন নারীর ওপর বর্বরতা চালানো হয়েছে। খুন, ধর্ষণ আর আয়নাঘরের রাজনীতি চালানোর কারণেই তাদের পালাতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে গিয়েও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ওসমান হাদির ওপর হামলা তার প্রমাণ। আল্লাহ যেন তাকে ফিরিয়ে দেন– এই দোয়া করি।

আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে বলে মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, যার পরিণতি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। দেশের মানুষ ভেবেছিল আওয়ামী লীগ এটা থেকে শিক্ষা নেবে। কিন্তু তারা তিন দফায় বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। এরপর তারা ’৯৬ সালে মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাতে তসবিহ নিয়ে তারা ক্ষমা চায়। ’৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা আবার ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে। এই তিনবারের ক্ষমতায় বাংলাদেশের এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ মারা যায়নি। এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে তাদের হাতে মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়নি। একটা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে নোয়াখালীতে একজন মাকে আওয়ামী লীগ বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছিল।

৭১ পূর্ব ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭১ এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল একবুক আশা আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। বাংলার মানুষ ভেবেছিল প্রিয় দেশটি সব ধরনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে দেশে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী জনগণের কথা রাখেনি।

জামায়াত আমির বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে সেনাবাহিনীর, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ থাকাকালেও রক্ষীবাহিনী গঠন হয়েছিল। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। মন্ত্রীর ছেলেরা ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে শত শত মানুষের লাশ মাঠেঘাটে পড়েছিল। লাশ দাপনের ব্যবস্থা ছিল না। তারা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে শ্মশানে পরিণত করেছিল। তারপর তাদের কার্যক্রমের ফল হিসেবে তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কোনো দলীয় বিজয় চাই না। চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নতুন বাংলাদেশের মোড়ক উন্মোচন হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জনগণই তা প্রতিরোধ করবে এবং নিঃশেষ করে দেবে।

নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা কমিশনের কাছে কোনো আনুকূল্য চাই না। কিন্তু কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। প্রশাসনের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। কালো টাকার বিনিময়ে মানুষ কেনার দিন শেষ।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা কোনো আনুকূল্য চাই না। কিন্তু কমিশন যদি কারও প্রতি সামান্য আনুকূল্যও দেখায়, আমরা তা বরদাস্ত করবো না। আমরা চাই আপনারা আপনাদের শপথের আলোকে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন উপহার দিন।

যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অতীতের সব বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হবে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে। যেই রাজনীতি হবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পক্ষে, যেই রাজনীতি হবে দুর্নীতির বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, মামলাবাজদের বিপক্ষে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শুধু আমাদের দলের বিজয় চাই না। আমরা চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের জন্য যারা বাধা দেবে, এই যুবকরা তাদের লাথি মেরে সরিয়ে দেবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই বিজয় দিবস শুধু স্মরণের নয়, নতুন শপথ নেওয়ার দিন। পুরোনো রাজনীতির কবর রচনা করে বাংলাদেশকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।