Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী আমলের মতো নয়, এবার হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন : মির্জা ফখরুল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৮১ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের নির্বাচন আওয়ামী আমলের নির্বাচন নয়, এবার ভোট হবে নিরপেক্ষ। এই নির্বাচনে জয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা শীর্ষক কর্মসূচির ৫ম দিনের উদ্বোধনীতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের সুযোগ পাবে বিএনপি।

তারেক রহমান খুব শিগগির দেশে আসবেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। সেদিন গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে চায় বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে, সেটি চলতে থাকবে। সবকিছু কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি কোনো দিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না। বিএনপি এ দেশের জনগণের দল, মুক্তিযুদ্ধের দল। বিএনপিকে সাফল্য দেবে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী দর্শন, অন্য কিছু সফলতা দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ এসেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের সুযোগ এসেছে, যা বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন তারেক রহমান।

দেশকে পেছনে টেনে নিয়ে যাওয়ার শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লড়াই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে জয়যুক্ত করতে হবে। এই লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা আদায় করতে হবে। মানুষের মন জয় করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে, বিএনপির পক্ষে ভোট দেওয়াতে হবে।

আগামী নির্বাচনের জন্য কে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন, আর কে পেলেন না, তা নিয়ে এখন চিন্তার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জনগণকে বিএনপি কী দেবে, সেটি সামনে নিয়ে আসতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন একটি দল বলেছে, বিএনপি সংস্কার নিয়ে কাজ করে না। কিন্তু এই বিএনপিই সংস্কারের জন্ম দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে মুক্ত গণমাধ্যম সৃষ্টি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, খালেদা জিয়ার সময়ে নারীদের শিক্ষা, যুবকদের কর্মসংস্থান, অর্থনীতির আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির গত সাড়ে ১৫ বছরের লড়াই এখন শেষদিকে বলে উল্লেখ করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠন করাতে হবে। বিএনপি এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তেমনই কিছু পরিকল্পনা সামনে নিয়ে এসেছেন। জনগণের কাছে এসব পরিকল্পনা পৌঁছে দিলে তারা নিশ্চিতভাবে ধানের শীষে ভোট দেবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না, আরেকটা ফ্যাসিবাদ দেশের ওপর চেপে বসতে চাচ্ছে কি না, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে কি না—এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সেই শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির নতুন লড়াই বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার, অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন করে নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ সময় কে নমিনেশন পেল, কে পেল না এই নিয়ে চিন্তা না করে বিএনপিকে নির্বাচনে জয়ী করতে নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

‘এই লড়াই নির্বাচনে জয়ের লড়াই’

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন সংগ্রাম-লড়াই হচ্ছে—এই নির্বাচনে জয় লাভ করবার আমাদের সংগ্রাম। এই নির্বাচনে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে জয় লাভ করতে হবে। যাতে করে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই।

“ অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রচারণা হচ্ছে, হতে থাকবে। কিন্তু এই সবগুলোকে কাটিয়ে উঠে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বিএনপি কোনোদিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না।”

তিনি বলেন, “ বিএনপি হচ্ছে এই দেশের জনগণের দল, বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের সংগ্রামের দল; এই কথাগুলো সবসময় মাথার মধ্যে রাখবেন।

“আর অন্য কোনো কিছু আপনাদেরকে সাফল্য দেবে না। আপনাদেরকে সাফল্য দেবে আপনাদের মধ্যে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য এবং আপনাদের যে চেতনা সামনের দিকে যাওয়ার, জাতীয়তাবাদী দর্শনে আমরা দীক্ষিত হয়েছি, আমরা যে গণতন্ত্রের দর্শনে দীক্ষিত হয়েছি— সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার এই চেতনা।”

‘একাত্তর আমাদের অস্তিত্ব’

মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা কথা আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্ব; এ কথাটা খুব জোরেশোরে মনে রাখবেন।

“আজকে আমি পত্রিকায় দেখলাম, ১৯৭১ সালের প্রজন্ম নাকি নিকৃষ্টতম প্রজন্ম। কোন সাহসে এই কথা বলার দুঃসাহস দেখান তারা; ঔদ্ধত্য দেখান তারা?”

‘সেই অপশক্তি রুখতে হবে’

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের রুহুল কবির রিজভী সাহেব এখানে বলেছেন যে, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না? আরেক ফ্যাসিজম অন্যদিক থেকে আমাদের উপরে চেপে বসতে চাইছে কি না? আজকে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রিয় ধর্মকে ব্যবহার করে তারা আজকে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে কিনা? সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, আজকে নতুন সে লড়াই একদিকে আমাদের বাংলাদেশকে একটা রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানের মধ্যে দাঁড় করাবার লড়াই। আরেকদিকে হচ্ছে এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার লড়াই; এই দুটিকে নিয়েই আপনাদেরকে এগুতে হবে। আমরা সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি করি, আমরা সবসময় অগ্রবর্তী চিন্তা করি।

তাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আজকে এখানে যেসব আলোচনা হবে, শুধু শুনবেন আর নোট নিলেই হবে না। এগুলোকে জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে হবে যে—আমরা এই কাজগুলো করতে চাই। এটাই যদি আপনারা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই জনগণ আপনাদের দিকে আকৃষ্ট হবে, আপনার জনগণকে উইন ওভার করতে হবে।

মানুষের জীবনই হচ্ছে সংগ্রাম মন্তব্য করে তিনি বলেন, তেমনই একটা জাতিকে উপরে উঠতে তাকে সংগ্রাম করে উপরে উঠতে হয়। আমরা সেই কথা বারবার প্রমাণ করেছি; বারবার আমাদের জনগণ প্রাণ দিয়েছে, আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। এইবারের ছেলেরা যেটা প্রাণ দিয়েছে চব্বিশের জুলাই যুদ্ধে এবং তার আগে একাত্তর যে যুদ্ধ আমরা করেছি—এটাকে এক করে আমাদের সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা এই লড়াইয়ে জয়লাভ করবার শপথ গ্রহণ করি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করছেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নির্বাচনে জনগণকে হ্যাঁ না ভোট বোঝানো বড় চ্যালেঞ্জ : তথ্য সচিব

আওয়ামী আমলের মতো নয়, এবার হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের নির্বাচন আওয়ামী আমলের নির্বাচন নয়, এবার ভোট হবে নিরপেক্ষ। এই নির্বাচনে জয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা শীর্ষক কর্মসূচির ৫ম দিনের উদ্বোধনীতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের সুযোগ পাবে বিএনপি।

তারেক রহমান খুব শিগগির দেশে আসবেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। সেদিন গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে চায় বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে, সেটি চলতে থাকবে। সবকিছু কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি কোনো দিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না। বিএনপি এ দেশের জনগণের দল, মুক্তিযুদ্ধের দল। বিএনপিকে সাফল্য দেবে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী দর্শন, অন্য কিছু সফলতা দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ এসেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের সুযোগ এসেছে, যা বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন তারেক রহমান।

দেশকে পেছনে টেনে নিয়ে যাওয়ার শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লড়াই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে জয়যুক্ত করতে হবে। এই লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা আদায় করতে হবে। মানুষের মন জয় করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে, বিএনপির পক্ষে ভোট দেওয়াতে হবে।

আগামী নির্বাচনের জন্য কে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন, আর কে পেলেন না, তা নিয়ে এখন চিন্তার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জনগণকে বিএনপি কী দেবে, সেটি সামনে নিয়ে আসতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন একটি দল বলেছে, বিএনপি সংস্কার নিয়ে কাজ করে না। কিন্তু এই বিএনপিই সংস্কারের জন্ম দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে মুক্ত গণমাধ্যম সৃষ্টি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, খালেদা জিয়ার সময়ে নারীদের শিক্ষা, যুবকদের কর্মসংস্থান, অর্থনীতির আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির গত সাড়ে ১৫ বছরের লড়াই এখন শেষদিকে বলে উল্লেখ করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠন করাতে হবে। বিএনপি এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তেমনই কিছু পরিকল্পনা সামনে নিয়ে এসেছেন। জনগণের কাছে এসব পরিকল্পনা পৌঁছে দিলে তারা নিশ্চিতভাবে ধানের শীষে ভোট দেবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না, আরেকটা ফ্যাসিবাদ দেশের ওপর চেপে বসতে চাচ্ছে কি না, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে কি না—এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সেই শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির নতুন লড়াই বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার, অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন করে নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ সময় কে নমিনেশন পেল, কে পেল না এই নিয়ে চিন্তা না করে বিএনপিকে নির্বাচনে জয়ী করতে নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

‘এই লড়াই নির্বাচনে জয়ের লড়াই’

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন সংগ্রাম-লড়াই হচ্ছে—এই নির্বাচনে জয় লাভ করবার আমাদের সংগ্রাম। এই নির্বাচনে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে জয় লাভ করতে হবে। যাতে করে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই।

“ অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রচারণা হচ্ছে, হতে থাকবে। কিন্তু এই সবগুলোকে কাটিয়ে উঠে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বিএনপি কোনোদিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না।”

তিনি বলেন, “ বিএনপি হচ্ছে এই দেশের জনগণের দল, বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের সংগ্রামের দল; এই কথাগুলো সবসময় মাথার মধ্যে রাখবেন।

“আর অন্য কোনো কিছু আপনাদেরকে সাফল্য দেবে না। আপনাদেরকে সাফল্য দেবে আপনাদের মধ্যে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য এবং আপনাদের যে চেতনা সামনের দিকে যাওয়ার, জাতীয়তাবাদী দর্শনে আমরা দীক্ষিত হয়েছি, আমরা যে গণতন্ত্রের দর্শনে দীক্ষিত হয়েছি— সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার এই চেতনা।”

‘একাত্তর আমাদের অস্তিত্ব’

মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা কথা আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্ব; এ কথাটা খুব জোরেশোরে মনে রাখবেন।

“আজকে আমি পত্রিকায় দেখলাম, ১৯৭১ সালের প্রজন্ম নাকি নিকৃষ্টতম প্রজন্ম। কোন সাহসে এই কথা বলার দুঃসাহস দেখান তারা; ঔদ্ধত্য দেখান তারা?”

‘সেই অপশক্তি রুখতে হবে’

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের রুহুল কবির রিজভী সাহেব এখানে বলেছেন যে, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না? আরেক ফ্যাসিজম অন্যদিক থেকে আমাদের উপরে চেপে বসতে চাইছে কি না? আজকে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রিয় ধর্মকে ব্যবহার করে তারা আজকে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে কিনা? সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, আজকে নতুন সে লড়াই একদিকে আমাদের বাংলাদেশকে একটা রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানের মধ্যে দাঁড় করাবার লড়াই। আরেকদিকে হচ্ছে এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার লড়াই; এই দুটিকে নিয়েই আপনাদেরকে এগুতে হবে। আমরা সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি করি, আমরা সবসময় অগ্রবর্তী চিন্তা করি।

তাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আজকে এখানে যেসব আলোচনা হবে, শুধু শুনবেন আর নোট নিলেই হবে না। এগুলোকে জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে হবে যে—আমরা এই কাজগুলো করতে চাই। এটাই যদি আপনারা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই জনগণ আপনাদের দিকে আকৃষ্ট হবে, আপনার জনগণকে উইন ওভার করতে হবে।

মানুষের জীবনই হচ্ছে সংগ্রাম মন্তব্য করে তিনি বলেন, তেমনই একটা জাতিকে উপরে উঠতে তাকে সংগ্রাম করে উপরে উঠতে হয়। আমরা সেই কথা বারবার প্রমাণ করেছি; বারবার আমাদের জনগণ প্রাণ দিয়েছে, আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। এইবারের ছেলেরা যেটা প্রাণ দিয়েছে চব্বিশের জুলাই যুদ্ধে এবং তার আগে একাত্তর যে যুদ্ধ আমরা করেছি—এটাকে এক করে আমাদের সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা এই লড়াইয়ে জয়লাভ করবার শপথ গ্রহণ করি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করছেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।