বরিশাল জেলা প্রতিনিধি :
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, পুলিশ তখন সেই দলের দালালি করে। এমনটা চলতে থাকলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে ছোট একটি অংশ সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতোই রাজনীতি করে যাচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে এদেরকে চিহ্নিত করে প্রতিহত না করলে আগামী নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখির পাশাপাশি দিনে দিনে ভোট কমে যাবে বিএনপির। আর এভাবে চলতে থাকলে ফ্যাসিস্টদের মতো তাদেরও পরিণতি হবে।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এবং প্রশাসনকে বলছি—নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য যার যেখানে যতটুকু অবদান রাখার সুযোগ আছে, দায়িত্ব আছে সেগুলো পালন করুন। জনাব তারেক রহমান আপনি বারবার বলেছেন, ৩১ দফার যে সংস্কার প্রস্তাব তার ওপর ঢেলে বাংলাদেশ সাজাবেন। সেই ঢেলে সাজানোর আগে আমরা দেখতে চাই আপনি আপনার দলকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। দলের ভেতর ক্রিমিনাল অ্যালিমেন্ট রেখে আপনি যে বাংলাদেশটা করতে চান, শহীদ জিয়া, বেগম জিয়ার সেই বাংলাদেশটা করতে পারবেন না।
এসময় তিনি বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের পদ ফিরিয়ে দেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে যাদের তারা প্রত্যেকে যার যার এলাকায় গুণ্ডা হিসেবে পরিচিতো। এটা নির্বাচনের আগে ভালো লক্ষণ নয়। এটা ৩১ দফা সংস্কারের ভাষা না।
ফুয়াদ বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাচ্ছি— দয়া করে আসুন আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পরের একটা সত্যিকারের বাংলাদেশ গড়ি, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ি। আপনি আমার বিরুদ্ধে মিছিল করেন, আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন, বক্তব্য দেন, আমার বিরুদ্ধে যুক্তিখণ্ডন করেন, এগুলো সবকিছু বৈধ। কিন্তু গায়ে হাত তুলবেন কেন? আপনি অবাঞ্ছিত করার চেষ্টা করবেন কেন? আপনি আমার নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন কেন? মারছেন কেন? আপনি প্রোগ্রামে আসা লোকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন কেন?
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘বাবুগঞ্জে ব্রিজ উদ্বোধনকালে বিএনপির কিছু ব্যক্তি আমাকেসহ আমার এবি পার্টির নেতাকর্মীদের পুলিশ প্রশাসনের সামনে লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি ছিল ফৌজদারি অপরাধ। যা পুলিশের সামনে ঘটায় তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতো। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থেকে শুধু ২/৩ বার বাঁশি বাজিয়েছে। নির্বাচনের আগেই পুলিশের এমন ভূমিকা। পরে তাদের ভূমিকা কেমন হবে? যখন যে দল আসে পুলিশ তখন সেই দলের দালালি করে। এমনটা চলতে থাকলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার দুই দিন আগে মুলাদী উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন এলজিডির সচিব, জেলার ডিসিসহ জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। সে অনুষ্ঠানও পণ্ড করে দিয়েছে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে ছোট একটি অংশ।’ বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করবে- তাই এই দলের নেতাকর্মীরা ছোট দলের সঙ্গে ভালো আচরণ করে তাদের সহযোগিতা করবে এবং যারা হামলা নির্যাতন করে তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।
ফুয়াদ আরও বলেন, ‘বরিশালের মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য যে চীনা কোম্পানি টেন্ডার পেয়েছে- তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে যোগাযোগের যে ভাষা ছিল তাতে চীনা কোম্পানি মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তবে কোনও দল বা ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলেননি।’
তিনি বলেন, ‘সেতু উদ্বোধন শেষে তাকে ঘুষি মারার চেষ্টা করা হয়েছে। হেনস্তা করা হয়েছে। গত দুই মাস ধরে তার ক্যাম্পেইনে নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনও সহযোগিতা করছে না।’ ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত ছিল তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ফুয়াদ।
দেশে এখন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ জানিয়ে ফুয়াদ বলেন, ‘এই প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে একটা ভালো নির্বাচন হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য যার যেখানে যতটুকু দায়িত্ব আছে তার সেই দায়িত্ব পালন করা উচিত। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটের পরিবেশ এনশিওর করা। এখনও অনেকে ভোটার হতে পারিনি।’ তাদের জন্য যাতে সময় বৃদ্ধি করা যায় তারও দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, মাছ আহরণ বন্ধ থাকাকালে জেলেদের জন্য বরাদ্দ গরু ইউএনও অফিস থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে, এমন চোরও আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরকম একটা সোনার বাংলাদেশে বাস করছি এখন!
তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করছি, আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করছি। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণটা অসীম না। যারা কাল কিলঘুষি খেয়েছে এরা কেউ রাস্তার ছেলে না।
বরিশাল জেলা প্রতিনিধি 
























