রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, সামনে অত্যন্ত একটা বড় পরীক্ষা আছে আমাদের। সেটা হলো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা সবসময় বলছেন, কারও কোন অভিযোগ থাকবে না, এমন একটা আদর্শ নির্বাচন হতে হবে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রংপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সব কিছুর ভিত্তি হলো আইনশৃঙ্খলা। এটি ভালো না থাকলে কোন কিছুই অর্জন করা যাবে না। আমরা জানি এ নিয়ে খুব খারাপ সময় আমাদের গেছে। আশার কথা হলো পুলিশ শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থানটা সংহত করতে পেরেছে।’
যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যে প্রার্থীর হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তিনি কিন্তু সব সময় গণ্ডগোলের চেষ্টা করতে পারেন। সেটা মাথায় রেখেই আমি মনে করি যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিটিং করেছেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যথেষ্ট সজাগ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা সরকার গঠন হবে এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব তাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে পারবো।
তিনি বলেন, দুটো সেক্টরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। একটা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। বাইরের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি। ডাক্তার, নার্স এর সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে এই স্বল্প সময়ে সাড়ে ৩ হাজার নার্স ও ৩ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছর তা দেখা যাবে। আমরা কিছু প্রকল্প শুরু করেছি। আশা করছি, পরের সরকার তা ধরে রাখবে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় পরীক্ষা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সবকিছুর ভিত্তি আইনশৃঙ্খলা। শুরুতে সমস্যা থাকলেও এখন ভালো অবস্থা। পুলিশ গুছিয়ে উঠে নিজেরা সংহত হতে পেরেছে। সামনে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট। কেননা প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, সামনের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমরা চাই, ভালো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে।
আলু রপ্তানি প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, আলু রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। তবে এটা সহজ নয়। কেননা পৃথিবীতে দুই একটা দেশ নিয়মিত আলু আমদানি করে। তবে কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছু দেশ আলু আমদানি করে থাকে। তাছাড়া আমদানি করে না।
মানবসম্পদ রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশে গেলে অবশ্যই দক্ষ হিসেবে যেতে হবে। না হলে বেতন কম। আমাদের দেশের মানুষ দক্ষ হয়ে বিদেশে যায় না। যার কারণে কম বেতন পায়। বিদেশে অসংখ্য নার্সের পদ খালি রয়েছে। নার্সের মাধ্যমে বিদেশে গেলে ভালো বেতন পাওয়া সম্ভব। দক্ষ করে জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে দেশের জন্য ভালো। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।
রংপুর অঞ্চলে প্রাণিসম্পদের সম্ভাবনা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রংপুরে অনেক ছোট গরু মানে দেশি গরু পালন করা হয়। যে গরুর মাংস খুবই সুস্বাদু হয়। এই গরুর মাংসের বাজার ভালো। এই বিষেয় প্রাণিসম্পদ উদ্যোগ নিতে পারে। কেননা এসব গরুর মাংসের চাহিদা ঢাকাতেও বেশি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন— পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মারুফাত হুসাইন, সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু ছাইদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। এর আগে উত্তরাঞ্চলের অগ্রযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু রংপুর শিরোনামে একটা ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
এদিকে, চার দিনের সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রংপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। আজ বিকেলে রংপুর ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সফরের মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ওই দিন বিকেলে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
রংপুর জেলা প্রতিনিধি 



















