স্পোর্টস ডেস্ক :
প্রথম ম্যাচের মত এদিনও সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরি পেয়েছিল রতুরাজ গায়কোয়াড়ও। এই দুজনেরব্যাটে চড়ে সাড়ে তিনশো ছাড়ানো পুঁজি পেয়েছিলো ভারত। তবে রান তাড়ায় দারুণ জবাব দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এইডেন মার্করামের সেঞ্চুরির পর ঝড়ো ফিফটি করেন ডিওয়াইল্ড ব্রেভিস। পাশাপাশি কার্যকর আরও কয়েকটি ইনিংস বিশাল পুঁজি তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা।
বুধবার ( ৩ ডিসেম্বর) রায়পুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগে ব্যাট করে ভারত পায় ৩৫৮ রান। ৪ বল আগে ওই রান পেরিয়ে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফিরলো প্রোটিয়ারা।
এই দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমবার সাড়ে তিনশ বা এর বেশি রান তাড়ায় জিতল কেউ। আগের সর্বোচ্চ ৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভারত জিতেছিল সেই ২০০০ সালের মার্চে।
এবারের চেয়ে বেশি রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার জয় আছে দুটি।
ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয় এটি। ২০১৯ সালে মোহালিতে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াও জিতেছিল ৪ উইকেটে।
ভিরাট কোহলির টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, ভারতের জন্য কাজে এলো না কিছুই। রান তাড়ায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সুর বেঁধে দেন এইডেন মার্করাম। পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ম্যাথু ব্রিটস্কি ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
রাঁচিতে প্রথম ম্যাচে ৩৫০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নড়বড়ে শুরুর পর সম্ভাবনা জাগিয়েও ১৭ রানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার আর হতাশ হতে হলো না সফরকারীদের।
সেদিনের ৬৮১ রান ছাড়িয়ে এই দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হলো নতুন করে, ৭২০।
উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না কোনো সহায়তা। শিশিরের প্রভাবে ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ব্যাটিং আরও সহজ হয়ে আসে। ভারতের বোলিং ছিল একেবারেই সাধারণ মানের। ফিল্ডিংও ছিল বাজে। ৫৩ রানে মার্করামের ক্যাচ ফেলেন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ৯৮ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান মার্করাম।
ব্রিটস্কি করেন ৬৪ বলে ৬৮। ৫ ছক্কা ও এক চারে ৩৪ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান ব্রেভিস।
ম্যাচের প্রথম ভাগে রেকর্ড সমৃদ্ধ করা ৫৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে কোহলি ৭ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৯৩ বলে ১০২, ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৮৩ বলে ১০৫ রুতুরাজ।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। পঞ্চম ওভারে তারা হারায় কুইন্টন কি কককে। তবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মার্করাম। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার (৪৮ বলে ৪৬) সঙ্গে ১০১ ও তৃতীয় উইকেটে ব্রিটস্কির সঙ্গে ৭০ রানের জুটিতে দলকে কক্ষপথে রাখেন তিনি।
৮৮ বলে সেঞ্চুরি করেন মার্করাম। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে ২৫ ইনিংসে তার প্রথম সেঞ্চুরি এটি। এই সংস্করণে তার আগের তিন সেঞ্চুরির সবকটি ছিল চার নম্বরে নেমে।
মার্করামকে ফিরিয়ে ভারত শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরান হার্শিত রানা। তবে সেই স্বস্তি উবে যায় ব্রেভিসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। কুলদিপ ইয়াদাভকে ছক্কায় উড়িয়ে প্রথম ওয়ানডে ফিফটি করেন তিনি স্রেফ ৩৩ বলে। পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে ৬৮ বলে ৯২ রানের বিস্ফোরক জুটি ভাঙেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার।
ব্রিটস্কিও পারেননি কাজ শেষ করে আসতে। পরপর দুই ওভারে তার ও মার্কো ইয়ানসেনের বিদায়ের একটু পর টনি ডি জর্জি হ্যামস্ট্রিংয়ে টানা লাগায় মাঠ ছাড়লে ভারত শিবিরে জাগে কিছুটা আশা। তবে কর্বিন বশ ও কেশাভ মহারাজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের হতাশ করে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
শেষ ওভারে ৩ রানের প্রয়োজনে, প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর চার মেরে ম্যাচের ইতি টেনে দেন বশ। ৪টি চারে ১৫ বলে ২৯ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। দলের স্কোর ৬২ রান হতেই ফিরে যান দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (১৪) ও যশস্বী জয়সওয়াল (২২)। তবে এরপর তৃতীয় উইকেটে ম্যাচের চিত্রটাই বদলে দেন বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। প্রোটিয়া বোলারদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১৯৫ রানের দুর্দান্ত জুটি।
৮৩ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন রুতুরাজ। অন্যদিকে ৯৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ রানের ইনিংস আসে কোহলির ব্যাট থেকে। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮৪তম সেঞ্চুরি।
কোহলি ও রুতুরাজ ফেরার পর ইনিংসের শেষ অংশে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানচাকা সচল রাখেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ৪৩ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার সঙ্গে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা।
প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে মার্কো ইয়ানসেন সবচেয়ে সফল ৬৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। লুঙ্গি এনগিদি ও নন্দ্রে বার্গার পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
আগামী শনিবার শেষ ম্যাচে হবে সিরিজের ফয়সালা।
স্পোর্টস ডেস্ক 
























