নিজস্ব প্রতিবেদক :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে রাজনীতিতে জড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, পর্যবেক্ষক সংস্থার রিপোর্ট হতে হবে স্বচ্ছ, অন্যথায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে আমরা সহযোগী হিসেবে পেতে চাই। তারা ভোটের অনিয়ম তুলে ধরবেন, কিন্তু রাজনীতিতে জড়াবেন না। পর্যবেক্ষকদের চোখ দুষ্টু হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে সিইসি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য একটাই—জাতিকে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া। অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না, বরং সামনে এগোতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সিইসি বলেন, জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি স্বীকার করেন, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের এজেন্ডা একটাই, একটি ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দেওয়া। একটি ভালো নির্বাচন আয়োজন আমাদের দায়িত্ব। ভালো নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে।
সিইসি বলেন, যারা নতুন পর্যবেক্ষক সংস্থা, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পর্যবেক্ষণের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা যেন রাজনীতি ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নির্বাচন কমিশনের সহযোগী। আমরা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পর্যবেক্ষকদের চোখ দিয়েই পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি দেখতে চাই। একইসঙ্গে সংস্থাগুলোর নিয়োগ করা মাঠকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বা প্রচারণায় যুক্ত না হন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সিইসি বলেন, জাতিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার যে ওয়াদা নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই মিলে এই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা আপনাদের চোখ দিয়েও এই ইলেকশনটা দেখতে চাই। কারণ আপনাদের চোখ যদি দুষ্ট হয়, প্রপার না হয়, আমাদের নির্বাচনের দেখাটাও কিন্তু সঠিক হবে না।
পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের চোখ দিয়েও আমরা এই নির্বাচনটাকে দেখতে চাই। কারণ আপনাদের চোখ যদি দুষ্ট হয়, প্রপার না হয়, আমাদের নির্বাচনের দেখাটাও সঠিক হবে না। আপনারা যাদেরকে ইউটিলাইজ করবেন ফিল্ডে, ওরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্বটা পালন না করে আমাদের কাছে ভুল মেসেজ আসবে। ওরা যদি ঠিকমতো পারফর্ম না করে, এজন্য এদেরকে গ্রুপ করা আপনাদের দায়িত্ব। এদেরকে প্রপার লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। অ্যাকাউন্টেবিলিটি সম্পর্কে আপনারা রিপোর্ট করবেন। ট্রান্সপারেন্ট ওয়েতে আমরা কাজ করব-কাজ হচ্ছে কিনা, নির্বাচনে আইন অনুযায়ী নির্বাচনটা কন্ডাক্ট হচ্ছে কিনা, আমাদের যে নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন অফিসার, পুলিশ অফিসার, রিটার্নিং অফিসার-এদের…
সিইসি বলেন, আপনাদের রিপোর্টিংয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি আগেই বলছি, আপনাদের দৃষ্টিতেই আমি নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি কোনো প্রসিডিউরাল ল্যাপস থাকে, এটা যদি আমরা রিফর্ম করতে চাই, আপনাদের রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। আপনারা তো সুপারিশ দেবেন যে এই কাজটা এভাবে হচ্ছে, এটা এভাবে করলে… ফাইনাল অ্যানালিটিক্যাল রিপোর্ট যখন দেবেন তখন বলবেন যে এভাবে করলে ভালো হতো। আপনাদের সুপারিশ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য পথচলার একটি দিকনির্দেশনা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশিরা খুব বেশি রাজনৈতিক সচেতন। এখন আপনাদের যাদেরকে এনগেজ করবেন তারা যদি ওখানে গিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে একদম ড্যামেজ হয়ে যাবে সবকিছু। সবকিছু দেখে আপনাদের যাদের নিয়োগ করবেন, প্লিজ চেক করবেন যে তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছে কিনা। কোনো রাজনীতির সঙ্গে কোনো লিংক, কোনো পার্টির সঙ্গে জড়িত এবং মিছিল-মিটিংয়ে গিয়েছে বা জড়িত আছে-এরকম কাউকে দয়া করে নিয়োগ দেবেন না। আপনাদের লোকজন যাতে কোনো দলীয় প্রচার-প্রচারণায় না যায়। তারা কোনো ভোটারকে যাতে না বলে-এই মার্কায় ভোট দিন, ওই মার্কায় ভোট দিন।
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে যে অনিয়ম হচ্ছে সেটা রিপোর্ট করা। আপনারা রিপোর্ট করবেন। এটা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব সবার-সুন্দর নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। আপনি যদি আমেরিকান কনটেক্সটে বাংলাদেশকে চিন্তা করেন বা ইউকে কনটেক্সটে চিন্তা করেন বা ইউরোপিয়ান কোনো কান্ট্রি কনটেক্সটে চিন্তা করে রিপোর্টিং শুরু করেন তাহলে কিন্তু সমস্যা আছে।
সিইসি আরও বলেন, সিসি ক্যামেরা হচ্ছে অবজারভার। আমার সিসি ক্যামেরা হচ্ছে আমার সাংবাদিক ভাই-বোনেরা। আশা করি সবাই মিলে আমরা একটা সুন্দর নির্বাচন দিতে পারব এবং আপনাদের সহযোগিতা এখানে খুবই ইম্পর্টেন্ট এবং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সংলাপে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনাররা অংশ নিয়েছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















