নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকার ঢাকা কলেজ-ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সংঘর্ষ নিরসনে এবার ‘শান্তি চুক্তি’ করা হয়েছে। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সংঘর্ষে না জড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। তবে শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা যোগ দেয়নি।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজের শহিদ আ ন ম নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুখোমুখি হয় দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার উত্তেজনা নয়, হাতে ছিল গোলাপ, মুখে ছিল বন্ধুত্বের স্লোগান। অনুষ্ঠান শেষে উভয় কলেজের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আর সংঘর্ষে না জড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।
জানা গেছে, নিউমার্কেট থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় এই শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানে সিটি কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেখানকার কেউই উপস্থিত হননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন অডিটরিয়ামে প্রবেশ করেন, তখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় ‘ঢাকা কলেজ-আইডিয়াল কলেজ ভাই ভাই, মোদের মধ্যে বিভেদ নাই’ এমন স্লোগান দিতেও দেখা যায়। শান্তি চুক্তিতে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কোনো সংঘর্ষ বা উত্তেজনায় না জড়ানোর অঙ্গীকার করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোবাচ্ছের হোসেন এবং নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহফুজুল হক। অনুষ্ঠানে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
ঢাকা কলেজের দ্বাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী ইস্রাফিল মোহিম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারবার মুখোমুখি অবস্থানে গেছে। আমাদের দুই কলেজের সহপাঠীদের এ মুখোমুখি অবস্থানকে সুসম্পর্কে উন্নতির জন্য দুই কলেজের শিক্ষকরা মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমরা এখন থেকে ভাই ভাই। আমরা কোনো ধরনের ঝগড়ায় না জড়িয়ে এখন থেকে পড়াশোনা করে দেশ গঠনে মিলেমিশে কাজ করবো।
আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক আহম্মেদ ফাহিম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দুঃসম্পর্ক আজ থেকে সুসম্পর্কে পরিণত হলো। কিছু ভুল ভ্রান্তি থেকে আমাদের মধ্যে ঝামেলা ছিল। এখন থেকে আমাদের এ মেলবন্ধন আজীবন থাকবে। যাতে আমারা আমাদের শিক্ষকদের মান উঁচু করতে পারি। আমাদের মধ্যে কম্পিটেশন থাকবে, তবে তা পড়াশোনা ও রেজাল্টের দিক দিয়ে।
আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হক বলেন, তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেতের মধ্যে মারামারির জন্য একে অন্যকে দায়ী করে। আসলে এর জন্য দায়ী মোবাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্রোল করে। যা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। তাই খারাপ দিক বাদ মোবাইল ফোনের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। খারাপভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আজকে দুই কলেজের মধ্যে যে মিলন হলো, সেটি যেন অব্যাহত থাকে।
এ সময় তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে আইডিয়াল কলেজের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা কীভাবে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে। পরে তারা আবার একসঙ্গে ত্রাণ দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে আবার বৈরি সম্পর্ক তৈরি হলো। সাম্প্রতি এ ঘটনাটি প্রতিনিয়ত ঘটছিল। যার কারণে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছিল। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। তাই নিউমার্কেট থানার ওসি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। আগামী দিনে আমাদের মধ্যে যেন আর কোনো বিরোধ না ঘটে সেই প্রত্যাশা রাখি। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে এখন যেহেতু বিরোধের অবসান ঘটেছে। তাই ওসি সাহেবকে মামলাটি নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মাহফুজুল হক বলেন, আমি নিউমার্কেট থানায় যোগদানের পর দেখেছি ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকদিন পর পর মারামারি হয়। কী কারণে মারামারি হয়, সেটা তারাও জানে না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, তারা নিজেরা সমঝোতা করতে রাজি। তাই আজকের এ আয়োজন। আমি আশা করি, এ মেলবন্ধন বজায় থাকবে।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরও আসাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো অনিবার্য কারণে তারা আসেনি। পরবর্তীতে তাদেরও আনা হবে। আবার উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















