গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং কৃষি উৎপাদন, সার, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যদি কোনো অপরাধে জড়ায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে, চাইলেও কেউ আর তা প্রতিহত করতে পারবে না।
তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের ছড়ানো গুজবের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল অনেক সময় অনেক গুজব রটাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এটিও আপনাদের (সাংবাদিকদের) সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও যারা জামিনে মুক্তি পাচ্ছে তারা যদি অন্যায় করে তাদের সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুষ্কৃতকারীরা অনেক কিছু বলবে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দুষ্কৃতকারীরা যেন কার্যক্রম চালাতে না পারে, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন হবে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর। এটি করার জন্য প্রশাসন যেন সব ধরনের কাজ করে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফ্যাক্টর (বিষয়) রয়েছে। মূল ফ্যাক্টর হলো জনগণ। জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে অনেকে অনেক কিছু করার চেষ্টা করলেও কিছু করতে পারবে না। এছাড়া যেসব দল অংশ নেবে তাদেরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়িত্ব রয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন এক সাথে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।
নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ছিল। পাশাপাশি গাজীপুরের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কতগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে, জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে তখন সব অপপ্রচার ও চেষ্টা বিফলে যাবে। আরেকটি হলো- যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের একটা ভূমিকা ও নির্বাচন কমিশনের একটা ভূমিকা রয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টা থাকলে নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে না।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সবার সম্মিলিত চেষ্টা থাকলে নির্বাচনে কোন সমস্যা হবে না।
পার্শ্ববর্তী দেশ অনেক সময় গুজব ছড়ায় অভিযোগ করে উপদেষ্টা বলেন, সত্যি ঘটনাটা আপনারা তুলে ধরে যদি বলেন তারা মিথ্যা বলছে, তবে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়, যেটা আপনারা (সাংবাদিকরা) করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
মাদক, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করে উপদেষ্টা বলেন, সমাজে এগুলোর বিস্তার বেড়ে গেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে মতবিনিময় সভায় আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি ও মাদক। এ দুটিকে সমাজ থেকে কীভাবে দূর করতে পারি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মাদকের সমস্যা দূর করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদক গ্রামে-গঞ্জে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। সবার সহযোগিতা না থাকলে দিনদিন এটি বেড়েই যাবে। এজন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, গাজীপুর শিল্প এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক লোক রুটি-রোজগারের জন্য আসে। এদের অনেকেই এখানকার বাসিন্দা না। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। তাদের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। এখানে ঝুট ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বেশি। তারাও বিভিন্ন সময়ে অনেক সমস্যা করে থাকে। এখানে চাঁদাবাজও রয়ে গেছে, এদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সভায় এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, গাজীপুরে পুলিশ সংকট রয়েছে। এখানে সাড়ে ছয়শত অতিরিক্ত পুলিশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি সত্য ঘটনা তুলে ধরেন তাহলে সবাই বুঝবে পার্শ্ববর্তী দেশ যে গুজব রটাচ্ছে তা সঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার করার জন্য যেসব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনেরও একটা বড় ধরনের কাজ রয়ে গেছে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না।
মতবিনিময় সভাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং কৃষি উৎপাদন, সার, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদ হোসেন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেকসহ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। পরে তিনি গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি 






















