Dhaka সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত কখনো বন্ধু হতে পারে না : নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যতদিন ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে রাখবে, ততদিন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে না। ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে জুলাই গণহত্যাকে সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের এই অবস্থান পরিবর্তন না করলে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শীতলই থাকবে।

রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি উল্লেখ করেন, যেদিন জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়েছে, সেদিনই জাতীয় অনৈক্যের সূচনা হয়েছে। কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই সনদে স্বাক্ষর করে তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবে এখনও ঐক্যের সুযোগ আছে।’

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচন পেছাতে চায়।’ তার মতে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচিত হলে গণভোট নির্বাচনের দিন হলেও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘গণভোট নির্বাচনের আগে না পরে হবে, সেটা প্রধান সংকট নয়। তবে জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। প্রেসিডেন্ট যদি এতে স্বাক্ষর দেন, তা সংস্কারের কফিনে পেরেক মারা হবে।

তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে যদি কেউ না থাকে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। কোনো একটি দলের চাপে সরকার বারবার টেক্সট পরিবর্তন করেছে। বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়ায় যেভাবে ২৭০ দিন পর সংস্কার প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হওয়ার বিধান ছিল, আমরা সেটিকে সমর্থন করি। এর ব্যত্যয় হলে আদেশ সমর্থন করা হবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে কোনো ভয় থাকার কিছু নেই, অযথা বিতর্ক ও ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবকে ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ছবি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সংবিধানে থাকা সম্ভব নয়। বাস্তবায়ন আদেশে খসড়া-১ অনুযায়ী যেভাবে ছিল, যদি পরিবর্তন আনা হয়, এনসিপি তা সমর্থন নাও করতে পারে।

অনেকে আওয়ামী লীগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকে আওয়ামী লীগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন দলে প্রবেশ করে নির্বাচন ভন্ডুল করতে পারে। স্থিতিশীলতার স্বার্থে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। আর গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন বা তার আগে হলেও আমাদের আপত্তি নেই। তবে সব প্রশ্নকে ছাপিয়ে গণভোট আগে-পরে করা নিয়ে বাড়াবাড়ি সমর্থনযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ আদেশ অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকেই জারি করতে হবে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এটি হলে কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ এ বিষয়ে তার আইনগত দিক নেই। জনগণ তা মেনে নেবে না। সরকার আদেশ জারি করলে ও ধারাগুলো নিশ্চিত হয়েই আমরা স্বাক্ষর করবো।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাহিদ। তিনি বলেন, এনসিপি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাবে কিনা, তা এখনও ঠিক হয়নি।

অনেকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা রাষ্ট্রের সংস্কার চাই। আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের রূপরেখা দিয়েছে। কিন্তু অনেক দল এটি বুঝতে পারেনি। অনেকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। স্বাক্ষর করলো। যারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলন করলো, তাদের বাদ দিয়ে এভাবে স্বাক্ষর করা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

তিনি মনে করেন, স্বাক্ষেরর সময় চলে গেলেও সরকার চাইলে এখনও আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। গণভোট নির্বাচনের আগে-পরে করা নিয়ে জামায়াত ভুল রাজনীতি করছে। আবার বিএনপির কেউ কেউ এর বিপক্ষ বক্তব্য রাখছেন, সেটাও জটিলতা তৈরি করছে। সবাই একমত হলে নির্বাচনের দিন বা আগে পরেও গণভোট হতে পারে।

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, একদল সংস্কার আর আরেক দল নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়। সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নোট অব ডিসেন্ট থাকলে গণভোট লাগে না।

তিনি বলেন, মৌলিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংস্কারের পক্ষে যারা নেই, তাদের সঙ্গে আমরা নেই।

তিনি আরো বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো সনদের অনেক টেক্সটও পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত সরকার কোনও একটি দলের পক্ষে কাজ করায় এমনটি হচ্ছে।

নাহিদ অভিযোগ করেন, বিএনপি গণভোটের বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। দেশের সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে থাকলেও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ তিনি ফ্যাসিবাদের আইকন। বিগত সরকার এটি করতে বাধ্য করেছে। চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত জনগণ আর মানবে না।

এনসিপির এই নেতা বলেন, গণভোটে জনগণ হ্যাঁ বললে হ্যাঁ আর না বললে না। এটি তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তারা না বললে না হবে। বিএনপি বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে মানুষ ভালোভাবে নেয় না।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদকে বারবার সমর্থন দিয়েছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত। জুলাই নিয়ে অনুশোচনা থাকার শর্তেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে।’

নির্বাচনে এনসিপির প্রস্তুতি নিয়ে নাহিদ জানান, এখন পর্যন্ত এককভাবে প্রার্থী বাছাই চলমান। বিভিন্ন শাখা কমিটি হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

শাপলা প্রতীক প্রশ্নে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচন থেকে আমাদের দূরে রাখতেই কমিশন চেষ্টা করছে। যেটা করেছে, সেটা এক মাস আগে করতে পারতো। নতুন দল হিসেবে আমাদের প্রতি আরও আন্তরিক হতে পারতো।’

নির্বাচনের আগে ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন কিনা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জোট গঠনের বিষয়ে ৯টি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত নয়।’

জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এক জুলাই যোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন ও সংস্কারকে আলাদা কার্যক্রম হিসেবে দেখলে ঐক্যের জায়গাটা হচ্ছে সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের মৌলিক দাবি, যেমন- সংস্কার ও বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলা, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে একেবারে বের করে আনা, বৈদেশিক আধিপত্যবাদ থেকে বের করে আনা — এই দাবিগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি কেউ থাকলে আমাদের যদি ঐক্যবদ্ধ হতে হয় বা সমঝোতায় যেতে হয়, সেটি তখন আমরা বিবেচনায় রাখব। দরজা আমাদের খোলা আছে। কিন্তু এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ৩০০ আসনে ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবে, আমরা প্রার্থীর তালিকা এই মাসেই দিতে পারি।

এনসিপির এ নেতা বলেন, জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে তারা নির্বাচনকে পেছনোর অভিসন্ধি বা দুর্ভিসন্ধি আছে কিনা। এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এর কোনোটাই চাই না। আমরা চাই, যথাসময়ে নির্বাচন হবে এবং জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে। তাই এই দুইটি দলসহ সব দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় আসে। আমরা এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাহলে শুধু নির্বাচনে জয় নয়, বরং রাজনীতি থেকে তাদের হারিয়ে যেতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত কখনো বন্ধু হতে পারে না : নাহিদ ইসলাম

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যতদিন ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে রাখবে, ততদিন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে না। ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে জুলাই গণহত্যাকে সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের এই অবস্থান পরিবর্তন না করলে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শীতলই থাকবে।

রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি উল্লেখ করেন, যেদিন জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়েছে, সেদিনই জাতীয় অনৈক্যের সূচনা হয়েছে। কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই সনদে স্বাক্ষর করে তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবে এখনও ঐক্যের সুযোগ আছে।’

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচন পেছাতে চায়।’ তার মতে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচিত হলে গণভোট নির্বাচনের দিন হলেও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘গণভোট নির্বাচনের আগে না পরে হবে, সেটা প্রধান সংকট নয়। তবে জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। প্রেসিডেন্ট যদি এতে স্বাক্ষর দেন, তা সংস্কারের কফিনে পেরেক মারা হবে।

তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে যদি কেউ না থাকে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। কোনো একটি দলের চাপে সরকার বারবার টেক্সট পরিবর্তন করেছে। বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়ায় যেভাবে ২৭০ দিন পর সংস্কার প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হওয়ার বিধান ছিল, আমরা সেটিকে সমর্থন করি। এর ব্যত্যয় হলে আদেশ সমর্থন করা হবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে কোনো ভয় থাকার কিছু নেই, অযথা বিতর্ক ও ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবকে ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ছবি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সংবিধানে থাকা সম্ভব নয়। বাস্তবায়ন আদেশে খসড়া-১ অনুযায়ী যেভাবে ছিল, যদি পরিবর্তন আনা হয়, এনসিপি তা সমর্থন নাও করতে পারে।

অনেকে আওয়ামী লীগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকে আওয়ামী লীগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন দলে প্রবেশ করে নির্বাচন ভন্ডুল করতে পারে। স্থিতিশীলতার স্বার্থে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। আর গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন বা তার আগে হলেও আমাদের আপত্তি নেই। তবে সব প্রশ্নকে ছাপিয়ে গণভোট আগে-পরে করা নিয়ে বাড়াবাড়ি সমর্থনযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ আদেশ অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকেই জারি করতে হবে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এটি হলে কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ এ বিষয়ে তার আইনগত দিক নেই। জনগণ তা মেনে নেবে না। সরকার আদেশ জারি করলে ও ধারাগুলো নিশ্চিত হয়েই আমরা স্বাক্ষর করবো।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাহিদ। তিনি বলেন, এনসিপি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাবে কিনা, তা এখনও ঠিক হয়নি।

অনেকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা রাষ্ট্রের সংস্কার চাই। আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের রূপরেখা দিয়েছে। কিন্তু অনেক দল এটি বুঝতে পারেনি। অনেকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। স্বাক্ষর করলো। যারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলন করলো, তাদের বাদ দিয়ে এভাবে স্বাক্ষর করা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

তিনি মনে করেন, স্বাক্ষেরর সময় চলে গেলেও সরকার চাইলে এখনও আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। গণভোট নির্বাচনের আগে-পরে করা নিয়ে জামায়াত ভুল রাজনীতি করছে। আবার বিএনপির কেউ কেউ এর বিপক্ষ বক্তব্য রাখছেন, সেটাও জটিলতা তৈরি করছে। সবাই একমত হলে নির্বাচনের দিন বা আগে পরেও গণভোট হতে পারে।

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, একদল সংস্কার আর আরেক দল নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়। সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নোট অব ডিসেন্ট থাকলে গণভোট লাগে না।

তিনি বলেন, মৌলিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংস্কারের পক্ষে যারা নেই, তাদের সঙ্গে আমরা নেই।

তিনি আরো বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো সনদের অনেক টেক্সটও পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত সরকার কোনও একটি দলের পক্ষে কাজ করায় এমনটি হচ্ছে।

নাহিদ অভিযোগ করেন, বিএনপি গণভোটের বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। দেশের সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে থাকলেও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ তিনি ফ্যাসিবাদের আইকন। বিগত সরকার এটি করতে বাধ্য করেছে। চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত জনগণ আর মানবে না।

এনসিপির এই নেতা বলেন, গণভোটে জনগণ হ্যাঁ বললে হ্যাঁ আর না বললে না। এটি তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তারা না বললে না হবে। বিএনপি বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে মানুষ ভালোভাবে নেয় না।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদকে বারবার সমর্থন দিয়েছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত। জুলাই নিয়ে অনুশোচনা থাকার শর্তেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে।’

নির্বাচনে এনসিপির প্রস্তুতি নিয়ে নাহিদ জানান, এখন পর্যন্ত এককভাবে প্রার্থী বাছাই চলমান। বিভিন্ন শাখা কমিটি হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

শাপলা প্রতীক প্রশ্নে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচন থেকে আমাদের দূরে রাখতেই কমিশন চেষ্টা করছে। যেটা করেছে, সেটা এক মাস আগে করতে পারতো। নতুন দল হিসেবে আমাদের প্রতি আরও আন্তরিক হতে পারতো।’

নির্বাচনের আগে ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন কিনা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জোট গঠনের বিষয়ে ৯টি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত নয়।’

জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এক জুলাই যোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন ও সংস্কারকে আলাদা কার্যক্রম হিসেবে দেখলে ঐক্যের জায়গাটা হচ্ছে সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের মৌলিক দাবি, যেমন- সংস্কার ও বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলা, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে একেবারে বের করে আনা, বৈদেশিক আধিপত্যবাদ থেকে বের করে আনা — এই দাবিগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি কেউ থাকলে আমাদের যদি ঐক্যবদ্ধ হতে হয় বা সমঝোতায় যেতে হয়, সেটি তখন আমরা বিবেচনায় রাখব। দরজা আমাদের খোলা আছে। কিন্তু এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ৩০০ আসনে ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবে, আমরা প্রার্থীর তালিকা এই মাসেই দিতে পারি।

এনসিপির এ নেতা বলেন, জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে তারা নির্বাচনকে পেছনোর অভিসন্ধি বা দুর্ভিসন্ধি আছে কিনা। এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এর কোনোটাই চাই না। আমরা চাই, যথাসময়ে নির্বাচন হবে এবং জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে। তাই এই দুইটি দলসহ সব দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় আসে। আমরা এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাহলে শুধু নির্বাচনে জয় নয়, বরং রাজনীতি থেকে তাদের হারিয়ে যেতে হবে।