গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার টিঅ্যান্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি নিজ উদ্যোগে পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি হাঁটতে গিয়েছিলাম। হাঁটতে যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো, চলতে থাকি, যাই। কোন দিকে যাচ্ছি, তা ঠিক জানতাম না। একপর্যায়ে অটো পেয়েছিলাম, অটোতে উঠে মীরের বাজারে নামলাম। নামার পর মনে হলো জয়দেবপুর যাই। সিএনজিতে জয়দেবপুর পৌঁছালাম। এরপর মনে হলো এখন বাসে উঠি।
মুফতি মুহিবুল্লাহ বলেন, বাসে উঠে শ্যামলী বা অন্য কোনো জায়গায় নামলাম। এখান থেকে আরেকটি বাসে উঠেছিলাম এবং গাবতলী পৌঁছালাম। তারপর মনে হলো টিকিট কেটে পঞ্চগড় যাই। অনেক রাত পঞ্চগড়ে পৌঁছালাম। সেখানে হাঁটছিলাম, কোন দিকে যাচ্ছি জানতাম না।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ লাইনস পার হয়ে গিয়েছিলাম। হেঁটে গিয়ে একটি লোহার শিকল পেলাম। সেই শিকল নিয়ে এক জায়গায় প্রস্রাব করতে বসলাম। প্রস্রাবের সময় পায়জামা ও জামায় লাগল। জামা-পায়জামা খুলে ফেলার চেষ্টা করলেও ঠাণ্ডার কারণে পরতে পারলাম না। শুইয়ে পড়লাম এবং শিকল পায়ে দিলাম। কেন এটা করছিলাম, তার কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না, শুধু যা মাথায় আসছিল তাই করছিলাম।
এর আগে, গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিবুল্লাহ মিয়াজীকে (৬০) পঞ্চগড় সদর থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ ২৩ অক্টোবর সকালে তাকে একটি গাছের সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে এবং স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মুফতি মুহিবুল্লাহর আচরণ এবং পঞ্চগড়ে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৭টার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানাধীন হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন। খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লিখিত শিলমুন সিএনজির সামনের এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজে মুহিব্বুল্লাহকে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখা যায়। তার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি মেলেনি। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা যায়, তিনি ক্যামেরার আড়াল হয়ে যান এবং পরে সিরাজগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড়ে পৌঁছান।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন জানান, শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি; শুধু ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, খতিব নিজেই নিজের পায়ে শিকল বেঁধেছিলেন পুরো ঘটনাটি ছিল তার নিজের সাজানো নাটক।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, খতিব কর্তৃক উল্লিখিত হুমকির চিঠি সম্পর্কেও অনুসন্ধান চলছে এবং ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও ওই খতিবের নিখোঁজ বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, বিভিন্ন অ্যাংগেল থেকে নেওয়া চারটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ পাম্পের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পথরোধ করে তাকে অপহরণের যে দাবিটি করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এরকম কোনো ঘটনা দেখা যায়নি; বরং তাকে একাই দ্রুত গতিতে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, সামনের সেতুর ওপরে পুলিশের স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটছেন। অথচ এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে অপহরণ করা হয়।
পরিশেষে জুলকারনাইন সায়ের জানান, ৬টা ৫৪ মিনিটে এলাকা থেকে রওনা হয়ে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে। ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের জানান ‘তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে, আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি’।
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি 























