নিজস্ব প্রতিবেদক :
দু-একদিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই একক প্রার্থীকে মনোনয়ন নিশ্চিতের কথা জানানো হবে। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে নেতাদের বার্তা দিয়েছে বিএনপি। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে সামনে আরও কঠিন সময় আসবে বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে বলেও নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শুনিয়েছেন ত্যাগের গল্প। এতে বৈঠকে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে দলের সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ছিলেন বেশ আবেগঘন।
তিনি দেশ, জাতি, দল ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। খালেদা জিয়া কিভাবে নিজের, নিজ পরিবারের সুখের কথা ভুলে গিয়ে শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন, কারাবরণ করে নিয়েছেন, তা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে তুলে ধরেন।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পাঁচ সাংগাঠনিক বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সঞ্চালনা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। এর আগে গত রবিবার দলের সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের পুরোটা সময় শুনশান নীরবতা ছিল। আমিসহ উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তার মা, পরিবারসহ যে বক্তব্য দিয়েছেন সত্যিই চোখে পানি ধরে রাখার মতো ছিল না। আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করেছি, নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। এবং তার নির্দেশে সবাই এক হয়ে কাজ করব।
তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন বলেও জানান আব্দুস সালাম।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কথাও উঠে আসে তারেক রহমানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, যে মা তার চল্লিশ বছরের বাড়ি হারিয়েছে, শেখ হাসিনা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, মা বুঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। সেই মায়ের সবকিছুর মূলেই ছিল এদেশের জনগণ। সবকিছুর মূলেই ছিল একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। ইচ্ছে করলেই তো মা এ ব্যাপারে আপোস করতে পারতেন। কিন্তু মা কোনো আপসে যাননি। তার লক্ষ্যই ছিল ঐক্যবদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতি গঠন করা। সেখানে কত ত্যাগ না স্বীকার করেছেন মা।
আওয়ামী লীগের সময়ে আন্দোলন ও সবশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য কত লোক শাহাদাত বরণ করেছে। কত লোক জেল খেটেছে, কত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা যদি আপোস করতেন তাহলে এতো কষ্ট মার করতে হতো না।
এ কথা বলার সময় তারেক রহমানের কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। তখন সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ মনোনয়নপ্রত্যাশীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
তারেক রহমান সভায় একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, দুই মায়ের মধ্যে এক সন্তানকে নিয়ে বিরোধ ছিল। বিচারক বলেছিলেন, সন্তানকে দুই ভাগ করে দেব। কিন্তু যিনি আসল মা, তিনি বলেছিলেন- না, সন্তানকে ভাগ করা যাবে না, আমি দূর থেকে দেখব। বিএনপিও আজ সেই সন্তানের মতো একে ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। একজন প্রার্থী মনোনয়ন পেলেও বাকিরা যেন সেই মায়ের মতো নির্লোভভাবে তাকে গ্রহণ করেন।
প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ধারাবাহিক বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশনা দেন কেউ যেন মনোনয়ন পাওয়ার পর মিছিল, মিষ্টি বা ফুল বিতরণ না করেন। এতে দলের ঐক্য নষ্ট হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন নয়, ঐক্যই এখন দলের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
বৈঠকে থাকা বিএনপি নেতারা জানান, ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে হামলা, মামলা, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাদ যাননি দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। ১/১১ কিংবা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় চাইলেও বিদেশে যেতে পারতেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু দেশ, গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করে এর পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছেন কারাবরণ, যেখানে বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছে, ভুগছেন চিকিৎসাবিহীন দীর্ঘ কারাবাসের যন্ত্রণা। গণতন্ত্রের স্বার্থে আপসহীন থাকায় সহ্য করতে হয়েছে নিজ পরিবারের ওপর নির্যাতনও। তার পরও তিনি মাথা নত করেননি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের দীর্ঘ এই লড়াই-সংগ্রামে বেগম জিয়া থেকে শুরু করে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, জনি, চৌধুরী আলমসহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দেশ, গণতন্ত্র ও দলের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকারের মানসিক প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় সবার জন্য বিদজ্জনক পরিস্থিতির সতর্কতাও দিয়েছেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুজন মা একটি শিশুকে দাবি করার গল্পও শোনান তারেক রহমান। এরপর বিচারের জন্য গেলে কাজী ওই শিশুকে ভাগ করে দুজনকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এতে প্রকৃত মা সন্তানকে ভাগ না করে অন্যজনকে দিয়ে দিতে বলেন। এতেই কাজি বুঝে যান ওই শিশুর প্রকৃত মা কে। তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও দলের জন্য, ধানের শীষের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
মেহেরপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য বজায় রাখতে বলেছেন। মনোনয়ন বড় করে না দেখে দলের স্বার্থ বড় করে দেখতে বলেছেন। দল যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে বলেছেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা আরো জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রতিটি আসনেই একাধিক যোগ্য প্রার্থী তিনি পেয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী করতে হবে একজনকে। এ জন্য অনেকে যোগ্য হলেও বাদ পড়বেন। কিন্তু এ জন্য যাতে দলের মধ্যে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব-বিভেদ তৈরি না হয়। সবার আগে দল ও দেশের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনো অদৃশ্য শক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ১/১১-র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তাই যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবাই লাভবান হবে। কিন্তু বিভেদের কারণে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানান, তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনি যেন মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ বা এ ধরনের কোনো কিছু না করেন। মনোনয়ন পেয়ে সবার আগে ছুটে যেতে হবে যিনি মনোনয়ন পাননি তাঁর কাছে। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। আবার যিনি মনোনয়নবঞ্চিত হবেন, তাঁকেও দলের কথা চিন্তা করে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে, তাহলে সবাইকেই তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী স্থানে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু দ্বন্দ্ব-বিভেদের কারণে যদি ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি আসে, তাহলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সভায় উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তারেক রহমানের ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনায় সম্মতি জানিয়ে সমস্বরে অঙ্গীকার করেন।
জানা যায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে সম্প্রতি তারেক রহমান দলের বাইরেও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন পেশাজীবী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রায় প্রতিটি আসনে তিনি একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপি একক মনোনয়ন দিতে চায়। এ জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়।
বরিশাল বিভাগ বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের ওপর ১৭ বছর অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। আমরা এর জবাব আগামী নির্বাচনে বিজয় উপহার দেওয়ার মাধ্যমে দিতে চাই। ধানের শীষের বিজয়ই হবে বড় প্রতিশোধ। তাই আমরা শপথ নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব।
রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। যদি ঐক্য ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।
খুলনা-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ঢাকা মেইলকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সবাই মিলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা খুলনা-৬ আসনের ৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ। দলের পক্ষ থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নেতাকর্মীদের ভিড় না করার নির্দেশনা থাকলে গত কয়েকদিনের বৈঠকের সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে দেখা দেয় কর্মীসমর্থকদের ভিড়। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তাজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন। কোনো কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী মতবিনিময়ের এই অনুষ্ঠানেও শোডাউন করেছেন কর্মী সমর্থকদের দিয়ে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সব আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হলো। কিছুদিনের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে একজনকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তফসিল ঘোষণার পরে দলের মনোনয়নবোর্ড চূড়ান্তভাবে প্রার্থী হিসেবে তাকে ঘোষণা করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















