কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকারের স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী (১৯৭৮-১৯৮২ মেয়াদ) ডা. ফজলুর করিমের ছেলে সদ্য সাবেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
দল পরিবর্তনের পরই বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন, তিনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন।’
তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনের আগের কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সদস্য ছিলেন। এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক দায়িত্বে ছিলেন।
অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন ফেসবুক লাইভে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, তিনি এই দেশের স্থিতিশীলতার প্রতীক। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এখন ঐক্যের সময়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য কিছুদিন আগে শোনা গেছে। উনি বলেছেন, দেশে আসবেন। তাহলে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা প্রতিটি বাঙালি ও বাংলাদেশি আপনারা অবশ্যই বিশ্বাস করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে আসবেন কিংবা চলে এসেছেন। আমি পাগলের প্রলাপ বকতে পারি, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা পাগলের প্রলাপ বকার মতো মহিলা না। এটা বাঙালি এবং বাংলাদেশি সকলেই জানেন। তাই প্রত্যেককে অনুরোধ করবো চিন্তা-চেতনা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে মন্তব্য করবেন। কে জানে আজকের এই বক্তব্য কাল আপনার ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে। তাই আসুন প্রতিহিংসা দূর করে দেশ ও সমাজ গঠনে একে অপরের পাশে থাকি।
ফয়জুল করিম মুবিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যতীত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ব্যতীত এদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, ইতিপূর্বেও না। এবং যখনই হয়েছে তখনই কেউই এদেশের মসনদে থাকতে পারেনি। এবং সবাইকে অনুরোধ করবো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী এবং সমর্থকবৃন্দ, যারা বসে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসবেন, তখন আপনি ভোকাল হবেন, না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে চলছে না। যে বা যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, দেশের পক্ষের শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে আছেন, তারা আজই কথা বলবেন।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল, ধর্মনিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। ৫ আগস্টের পর মানুষের যে স্বপ্ন ছিল, চেতনা ছিল, এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের নামে সম্পদ ভোগ করার চেষ্টা চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা চলছে। তাকে প্রতিহত করার জন্যই আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। শেখ হাসিনাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তবে কী পদ্ধতিতে কার মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন, এ প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।
তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করেছি দেশের জন্য, দলের জন্য নয়। এখন মনে করছি, দেশের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার প্রয়োজন।
এরপর ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করেন সাবেক এই বিএনপি নেতা।
আওয়ামী লীগের যোগ দেওয়ার পর থেকে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
এ নিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, আপনার দেশপ্রেম এবং সুন্দর মানসিকতাকে স্বাগত জানিয়ে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনার এই বক্তব্য দলকানাদের বিচলিত করলেও সাধারণ মানুষ এবং সব দেশ প্রেমিকগণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে তা সাদরে গ্রহণ করে নিবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আপনি আবারও প্রমাণ করলেন, কিশোরগঞ্জের মানুষ রাজনীতি করে দেশের জন্য। আপনার এই বক্তব্য তরুণদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
কিশোরগঞ্জ জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার শহীদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ফয়জুল করিম মবিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপক্ষে নানা রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ফ্যাসিবাদী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে নানা রকম কথা বলছেতে সে এও বলছে খুনী শেখ হাসিনা দেশে আসবে বা বাংলাদেশে এসে গেছে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রাজপথের একজন কর্মী হিসেবে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি খুনী হাসিনার অবস্থান কোথায় তা জানার জন্য মবিনকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিএনপিতে এখন মুবিনের কোনো পদ নেই। এছাড়া তার মাথাও ঠিক নেই। কাজেই তার আওয়ামী লীগে যোগদানেরও কোনো গুরুত্ব নেই।
যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ
অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন গত ৫ অক্টোবর তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, আমি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, শহীদ জিয়ার আদর্শ সততায় মুগ্ধ, তার আরেক আদর্শ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাসী একজন সাধারণ বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার নিজের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট গভীরভাবে বোঝার দূরদৃষ্টির অভাব, জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো নেতার আস্থাভাজন হওয়ার অপারগতা, অনেক সিনিয়র যোগ্য নেতাদের উপদেশ ধৈর্য অভাব থাকায়, আমি সুস্থ সজ্ঞানে ৫/১০/২০২৫ বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান প্রিয় মাতৃভূমিতে বিগত ১৭ বছরের মাঝে সবচেয়ে ভালো থাকাবস্থায় আমি কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপি সদস্য পদ হতে এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।
ফয়জুল করিম মুবিন আরও লেখেন, বিগত ২০০৩ -২০০৪ সালে ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত বিএনপি আমাকে নানা পদে যোগ্য মনে করেছে, তার জন্য বিএনপির সব সম্মানিত নেতৃবৃন্দর প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ত্যাগী কর্মীদের পাশে চলা মুহূর্ত চির স্মরণীয় থাকবে। উক্ত পদত্যাগ করায় কোনো নেতার কাছ থেকে চাপ বা বল প্রয়োগ নেই। আমার এই সিদ্ধান্তে আমার কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী মনে কষ্ট পেলে আমি করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। তরুণ নেতৃত্ব বেগবান হোক। আগামীতে যদি যথাযথ দলের নীতিনির্ধারক কখনো দলের প্রয়োজনে ডাকেন এবং আমার উপলব্ধিতে যথাযথ মনে হলে দলের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবো।
এরপর ৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলীর (এপিপি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন।