নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংখ্যানুপাতিক ভোট পদ্ধতির (পিআর) নামে কেউ কেউ নির্বাচন ‘ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র করছে’ অভিযোগ করে দেশের মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রূপকার ডেমাক্রেটিক লীগ-ডিএলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি আহ্বান করেন।
তিনি বলেন, কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নামে এই নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমি আহ্বান জানাব, এই ব্যাপারে সকলকে সর্তক থাকার। তবে নির্বাচন রুখতে যারা আসবে, তাদের জনগণই রুখে দেবে। জনগণ এখন নিজেদের ভোটাধিকার চায়, এত বছর ধরে তা থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। সুতরাং নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে লাভ নেই।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। জাতীয়ভাবে যারা সেইদিন ফ্যাস্টিসবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যদি অনৈক্য হয় তাহলে ফ্যাসিস্টরা সুযোগ পেয়ে যাবে। ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন করে শপথ নিতে হবে যে, ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনা বিচার হতে হবে। সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্য্ক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেটাও নিষিদ্ধ রাখতে হবে।
এয়ারপোর্টে আগুন লাগার ঘটনা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নাশকতার অংশ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাশের দেশে বসে শেখ হাসিনা এখনও দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্তৃক দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। সুতরাং বিমানবন্দরে আগুনের ঘটনা স্বাভাবিক নয়।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, এখনও সব জায়গায় তার (হাসিনার) প্রেতাত্মা সক্রিয়। তাই এ ঘটনাসহ সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে। তার মানে আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস- সে সময়ই হবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন রুখতে যারা আসবে, তাদেরকে জনগণ রুখে দেবে। জনগণ এখন নিজেদের ভোটাধিকার চায়, এত বছর যাবৎ তা থেকে বঞ্চিত ছিল। সুতরাং নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে লাভ নেই।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। ইনশাল্লাহ আমরা মনে করি, সেই নির্বাচন হবে।
এই নির্বাচন কেউ ‘রুখতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন আমান।
তিনি বলেন, যারা এই নির্বাচন বানচাল করতে যাবে, জনগণ তাদেরকে রুখে দেবে। আজকের স্মরণ সভায় আমরা এই শপথ নেব, আমরা সকলে এক হয়ে জাতীয় নির্বাচন করব, জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবে, নির্ভয়ে তার পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে। জনগণ তার পছন্দের একটি সরকার তৈরি করবে যারা একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠঅ করবো।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আমান উল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন, তারা গুম-খুন-হত্যায় জড়িত। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধই থাকবে। ফ্যাসিস্টদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। হাসিনা গুম-খুনে জড়িত। সুতরাং তার বিচারেরও কোনো বিকল্প নেই।
প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ছিলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন মনি। একজন আদর্শ রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে তিনি সকলের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। সব রাজনৈতিক দলের রাজপথের সক্রিয় কর্মীদের সঙ্গে তার হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। রাজনীতির বাইরে কোনো চিন্তা করেননি কোনোদিন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামেও রাজপথে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক মো. ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব খোকন চন্দ্র দাসের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা লায়ন মো. ফারুক রহমান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত এনডিপির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, মহাসচিব জামিল আহমেদ, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সহসভাপতি মাহবুব আলম, ডিএলের কেন্দ্রীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, সাবেক ছাত্রনেতা ইউনুস সোহাগ প্রমুখ।