নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর রাত ৯টায় বিমানবন্দরে ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। দুবাই থেকে আসা ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট রাত ৯টা ৬ মিনিটে অবতরণ করার মাধ্যমে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনও নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে মন্ত্রণালয়।
গণমাধ্যম পাঠানো বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের উৎস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রী ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা ও ধৈর্য ধারণের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট রওয়ানা হয়। আগুন ছড়াতে থাকলে ইউনিটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পরে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে ৩৭ ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও নির্বাপণে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো সেকশনে সংঘটিত অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট এবং নৌবাহিনী।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক মো. আশিকউজ্জামান জানান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত আনুমানিক ১ হাজার আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। এসময় কর্তব্যরত অবস্থায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের দ্রুত সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো সেকশনে আগুনে উদ্ধার সহায়তায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য কাজ করছে।
বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে ফ্লাইট চালু হয়। চার মিনিট পর অবতরণ করে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট। উড্ডয়নের অপেক্ষায় আছে ইউএস-বাংলা, ইন্ডিগোসহ আরও কয়েকটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফ্লাইট বিপর্যয় হলেও বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা, আজ রাত ১০টা ২৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। আসার সময়ই শুনেছি যে বিমানবন্দরে আগুন লেগেছে। অথচ ফ্লাইট ডিলে হবে কি হবে না বা ফ্লাইট কখন ছাড়বে সেটা নিয়ে কোনো তথ্য এখানে বোর্ডে বা ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখাচ্ছে না। দেখালে সুবিধা হতো। এটা নিয়ে বিড়ম্বনায় আছি।
এর আগে এদিন দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথমে নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে আরও ইউনিট যোগ হয়ে এখন মোট ৩৭টি ইউনিটের ৭ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে, বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।