Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেই কাজ শেষ নয়, বরং এটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গেই জুলাই সনদ গভীরভাবে জড়িত। এই সনদের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক অতি জরুরি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে। আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচন করে দেওয়া।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেইভাবে আমরা আগাবো, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করবো এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করবো। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমুল্য সম্পদ। এইগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এজন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি, যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যেই অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগযুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেভাবে আমরা এগোবো, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করবো এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করবো। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না, পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এ জন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যে অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান তারপরে এটাই মনে হয় সঠিকভাবে রচিত হলো। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে সারা জাতি শরিক হবে। যেই কলমে সই করা হবে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। যে যে কলম দিয়ে সই করবেন তার তার মুহূর্ত জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ কেউ ভুলতে পারবে না আপনাদের। এটা এমন একটা ঘটনা, আমরা যেহেতু ঘটনার ভেতরে আছি বলে অনুভব করতে পারছি না। বাইরে গিয়ে যদি দাঁড়াতে পারতাম তাহলে মনে হতো বিশাল একটা কাজ। মাসের পর মাস বৈঠক করে হয়তো মনে করেছেন এটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। এটা অসমাপ্ত থেকে যায় নাই। সন্তোষজনকভাবে আপনারা সমাপ্তিতে এনেছেন। আপনারা ভেবেচিন্তে নিয়ম-কানুন বের করেছেন, যাতে সবাই সনদে সই করতে পারেন। এটা জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ রয়ে গেলো। এ জন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই যে পরিশ্রম করেছেন তা জাতি হিসেবে সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি কথার কথা নয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সব পদক্ষেপ নেবে সরকার।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলে আমাদের কাজ একটা পরিণতিতে এলো। আর তা না হলে আপনারা সুন্দর একটা সনদ করলেন, আর আমরা একটা ভণ্ডুল মার্কা নির্বাচন করলাম, এই নির্বাচনের তো কোনো দরকার নেই। কাজেই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই যেন নির্বাচনটা হয়।’

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের দীর্ঘদিনের আলোচনার ফল হলো ‘জুলাই সনদ’। আপনারা অনেক ভেবে-চিন্তে মতামত দিয়ে জুলাই সনদকে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছেন। এর মাধ্যমে আপনারা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। হয়তো প্রক্রিয়ার ভেতরে থাকার কারণে এখনো বিষয়টির গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারছেন না।

বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেলের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নাশকতা মামলায় সাবেক এমপি কবিরুল কারাগারে

উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেই কাজ শেষ নয়, বরং এটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গেই জুলাই সনদ গভীরভাবে জড়িত। এই সনদের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক অতি জরুরি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে। আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচন করে দেওয়া।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেইভাবে আমরা আগাবো, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করবো এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করবো। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমুল্য সম্পদ। এইগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এজন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি, যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যেই অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগযুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেভাবে আমরা এগোবো, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করবো এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করবো। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না, পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এ জন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যে অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান তারপরে এটাই মনে হয় সঠিকভাবে রচিত হলো। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে সারা জাতি শরিক হবে। যেই কলমে সই করা হবে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। যে যে কলম দিয়ে সই করবেন তার তার মুহূর্ত জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ কেউ ভুলতে পারবে না আপনাদের। এটা এমন একটা ঘটনা, আমরা যেহেতু ঘটনার ভেতরে আছি বলে অনুভব করতে পারছি না। বাইরে গিয়ে যদি দাঁড়াতে পারতাম তাহলে মনে হতো বিশাল একটা কাজ। মাসের পর মাস বৈঠক করে হয়তো মনে করেছেন এটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। এটা অসমাপ্ত থেকে যায় নাই। সন্তোষজনকভাবে আপনারা সমাপ্তিতে এনেছেন। আপনারা ভেবেচিন্তে নিয়ম-কানুন বের করেছেন, যাতে সবাই সনদে সই করতে পারেন। এটা জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ রয়ে গেলো। এ জন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই যে পরিশ্রম করেছেন তা জাতি হিসেবে সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি কথার কথা নয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সব পদক্ষেপ নেবে সরকার।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলে আমাদের কাজ একটা পরিণতিতে এলো। আর তা না হলে আপনারা সুন্দর একটা সনদ করলেন, আর আমরা একটা ভণ্ডুল মার্কা নির্বাচন করলাম, এই নির্বাচনের তো কোনো দরকার নেই। কাজেই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই যেন নির্বাচনটা হয়।’

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের দীর্ঘদিনের আলোচনার ফল হলো ‘জুলাই সনদ’। আপনারা অনেক ভেবে-চিন্তে মতামত দিয়ে জুলাই সনদকে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছেন। এর মাধ্যমে আপনারা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। হয়তো প্রক্রিয়ার ভেতরে থাকার কারণে এখনো বিষয়টির গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারছেন না।

বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেলের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।