ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর-ভাঙ্গা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার অংশ গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। কোথাও পিচ উঠে গেছে, কোথাও রাস্তা দেবে গেছে, আবার কোথাও পানি জমে আছে হাঁটু পর্যন্ত। ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। প্রতিদিন এই পথে চলাচল করা হাজারো মানুষের জন্য এটি যেন মৃত্যুফাঁদ।
ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত এই অংশটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ত পথ। ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডা, নগরকান্দার কেশবনগর, তালমা, বাশাগাড়ি, মাশাউজান, শংকরপাশা, ভবুকদিয়া, পুকুরিয়া হামিরদী ও ভাঙ্গা উপজেলার নওয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার সড়কের চিত্র একই রকম। যানবাহনের চাকা গর্তে পড়লে তৈরি হয় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি, ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফরিদপুরের বাখুন্ডা সেতু এলাকায় ইট ফেলা হয়েছে। সেখানে গর্তে পানি জমে আছে, পাশ দিয়ে ধীরগতিতে চলছে বাস ও ট্রাক। একই অবস্থা পুরোটা সড়কজুড়ে। কোথাও বড় গর্ত আবার কোথাও ছোট ছোট গর্ত। বাস-ট্রাকগুলো চলাচল করে হেলেদুলে। মাঝে মাঝে এত বড় মহাসড়কেও একটি বাস বা ট্রাক গেলে পাশ দিয়ে আরেকটি যানকে দাঁড়িয়ে সাইড দিতে হয়।
নগরকান্দার তালমা বাজারের ব্যবসায়ী রফিক মোল্লা বলেন, প্রতিদিন কাদা আর ধুলোয় দোকানদারদের নাভিশ্বাস ওঠে। রাস্তা এমন হয়ে গেছে যে বৃষ্টি নামনে মনে হয় মাটির রাস্তা।এত ভাঙাচোরা একটা মহাসড়ক হতে পারে না।
শংকরপাশা গ্রামের স্কুলশিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, সকালে স্কুলে যেতে আধা ঘণ্টার রাস্তা এখন দেড় ঘণ্টা লাগে। শুরুতে অনেকে বাসচালকদের গালাগাল দিতো। এখন বুঝে গেছে তাদেরও আসলে কিছু করার নাই।
টেকেরহাট- ফরিদপুর পথে চলাচলকারী লোকাল বাস আল্লারদান পরিবহনের চালক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে স্টিয়ারিং ধরে রাখা দায় হয়ে যায়। কখনো মনে হয়, বাস উল্টে যাবে। কিন্তু বাধ্য হয়ে চালাতেই হয়। প্রতিদিন শুনি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। কাজ আর শেষ হয় না। মাঝে মাঝে দেখি রাস্তায় কাজ করতে। কিন্তু যে ভাঙা ভাঙছে ওই গতির কাজে হবে না। এখানে তার ১০ গুণ গতিতে কাজ করতে হবে।নইলে একপাশ দিয়ে ঠিক করবে আবার অন্যপাশ দিয়ে ভেঙে যাবে।
এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে গর্তগুলো আরও গভীর হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতু অংশ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। রাতে গাড়ি চালাতে চালকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়।
ফরিদপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা লায়লা বেগম বলেন, রাতে যখন গাড়ি আসে, তখন বোঝা যায় না কোথায় গর্ত, কোথায় রাস্তা। একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা। আর মোটরসাইকেল হলে তো কথাই নাই।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরি হলেও পরিস্থিতি দ্রুতই উন্নতি হবে বলে আশা করছি। টানা বর্ষণে রাস্তার ক্ষতি বেড়েছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইট-পাথর ফেলে গর্ত ভরাটের কাজও তড়িৎ গতিতে করা হচ্ছে।