Dhaka মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি থামছে না

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

কিশোরগঞ্জে টিকিট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। বারবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারো একই কাজে জড়াচ্ছেন এ চক্রের সদস্যরা। রেলওয়ের কিছু স্টাফও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন তৎপর থাকার দাবি করলেও যাত্রীরা স্বস্তি পাচ্ছেন না। তারা এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের দাবি করেন।

জানা যায়, রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি নিয়ে বহুবার অভিযান চালানো হলেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। অনেক কালোবাজারির গ্রেফতার, মামলা, কারাদণ্ড সবই হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে তারা আবার আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, স্টেশনের কিছু স্টাফও এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত।

১৬০ টাকার টিকিট বিক্রি ৩০০ টাকায়:

শনিবারের এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনের গ-২৮, গ-৩৭, গ-৪০ ও গ-৪২ নম্বর আসনের টিকিট কালোবাজারির কাছ থেকে যাত্রীরা কিনেছেন ৩০০ টাকায়, যার প্রকৃত মূল্য মাত্র ১৬০ টাকা।

কেউ পেয়েছেন প্রিন্ট কপি, কেউ পেয়েছেন অনলাইন কপি। কিন্তু সব টিকিটেই অন্য যাত্রীদের নাম, আংশিক এনআইডি ও ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, যাতে অনুসন্ধান করা কঠিন হয়।

এক টিকিট একাধিক জনের কাছে বিক্রি:

শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে একই আসন দুজন দাবি করার ঘটনা ঘটে। গাইটাল এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা মোবাইলে পাঠানো টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠে গ-৩৭ নম্বর আসনে বসেন। কিছুক্ষণ পর আরেক যাত্রী কাগুজে টিকিট হাতে এসে একই আসনের দাবি করেন। তর্কের পর রানা বাধ্য হয়ে আসন ছেড়ে দেন। পরে তিনি অন্যান্য আসনেও বসার চেষ্টা করলেও পারেননি। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েই ঢাকায় যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ চিত্র মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। কালোবাজারি চক্র একই টিকিট একাধিক জনের কাছে বিক্রি করায় যাত্রীদের এ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

পুরনো চক্রের নাম ফের আলোচনায়:

কিশোরগঞ্জের জিআরপি থানার রেকর্ড অনুযায়ী, সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রজ্জাক, তপন বর্মণ ও সৌরভ হোসেনসহ একাধিক কালোবাজারি আগেও টিকিটসহ গ্রেফতার হয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইফুল ইসলাম নামে এক কালোবাজারি ধরা পড়ে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আব্দুর রহমান, পারভেজ, বিপ্রজিৎ ও রেদোয়ান নামে চার বুকিং ক্লার্কের জড়িত থাকার কথা জানান। তারা নিজেদের আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেটে ৩০ টাকা লাভে কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করতেন। পরে যাত্রীরা তা আরও বেশি দামে কিনতেন।

অনলাইন চালুর পর কালোবাজারি বাড়ার দাবি

খরমপট্টি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সাধন দাস বলেন, আগে যখন শুধু কাউন্টার টিকিট ছিল, তখনও কালোবাজারি ছিল। এখন অনলাইন চালু হওয়ার পর ভেবেছিলাম বন্ধ হবে, কিন্তু এখন তো আরও বেড়েছে। টিকিট দেওয়া চালুর এক মিনিট পরেই দেখা যায় সব শেষ।

জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, গত বছরের কালোবাজারি মামলা আদালতে অভিযোগপত্রসহ দেওয়া হয়েছে। আমরা মাঝেমাঝে কালোবাজারিদের ধরতে পারি, কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করে। তবুও জিআরপি তৎপর আছে।

স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, তার জানা মতে এখন স্টাফদের কেউ কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত নন। যারা আগে অভিযুক্ত ছিলেন, তারা আর এখানে কর্মরত নন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত অনেকেই অনলাইনে টিকিট কিনে পরে না গিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। আবার কালোবাজারিরা অন্যদের এনআইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কেনে। ফলে একই টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কিশোরগঞ্জে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি থামছে না

প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

কিশোরগঞ্জে টিকিট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। বারবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারো একই কাজে জড়াচ্ছেন এ চক্রের সদস্যরা। রেলওয়ের কিছু স্টাফও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন তৎপর থাকার দাবি করলেও যাত্রীরা স্বস্তি পাচ্ছেন না। তারা এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের দাবি করেন।

জানা যায়, রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি নিয়ে বহুবার অভিযান চালানো হলেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। অনেক কালোবাজারির গ্রেফতার, মামলা, কারাদণ্ড সবই হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে তারা আবার আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, স্টেশনের কিছু স্টাফও এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত।

১৬০ টাকার টিকিট বিক্রি ৩০০ টাকায়:

শনিবারের এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনের গ-২৮, গ-৩৭, গ-৪০ ও গ-৪২ নম্বর আসনের টিকিট কালোবাজারির কাছ থেকে যাত্রীরা কিনেছেন ৩০০ টাকায়, যার প্রকৃত মূল্য মাত্র ১৬০ টাকা।

কেউ পেয়েছেন প্রিন্ট কপি, কেউ পেয়েছেন অনলাইন কপি। কিন্তু সব টিকিটেই অন্য যাত্রীদের নাম, আংশিক এনআইডি ও ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, যাতে অনুসন্ধান করা কঠিন হয়।

এক টিকিট একাধিক জনের কাছে বিক্রি:

শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে একই আসন দুজন দাবি করার ঘটনা ঘটে। গাইটাল এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা মোবাইলে পাঠানো টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠে গ-৩৭ নম্বর আসনে বসেন। কিছুক্ষণ পর আরেক যাত্রী কাগুজে টিকিট হাতে এসে একই আসনের দাবি করেন। তর্কের পর রানা বাধ্য হয়ে আসন ছেড়ে দেন। পরে তিনি অন্যান্য আসনেও বসার চেষ্টা করলেও পারেননি। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েই ঢাকায় যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ চিত্র মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। কালোবাজারি চক্র একই টিকিট একাধিক জনের কাছে বিক্রি করায় যাত্রীদের এ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

পুরনো চক্রের নাম ফের আলোচনায়:

কিশোরগঞ্জের জিআরপি থানার রেকর্ড অনুযায়ী, সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রজ্জাক, তপন বর্মণ ও সৌরভ হোসেনসহ একাধিক কালোবাজারি আগেও টিকিটসহ গ্রেফতার হয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইফুল ইসলাম নামে এক কালোবাজারি ধরা পড়ে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আব্দুর রহমান, পারভেজ, বিপ্রজিৎ ও রেদোয়ান নামে চার বুকিং ক্লার্কের জড়িত থাকার কথা জানান। তারা নিজেদের আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেটে ৩০ টাকা লাভে কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করতেন। পরে যাত্রীরা তা আরও বেশি দামে কিনতেন।

অনলাইন চালুর পর কালোবাজারি বাড়ার দাবি

খরমপট্টি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সাধন দাস বলেন, আগে যখন শুধু কাউন্টার টিকিট ছিল, তখনও কালোবাজারি ছিল। এখন অনলাইন চালু হওয়ার পর ভেবেছিলাম বন্ধ হবে, কিন্তু এখন তো আরও বেড়েছে। টিকিট দেওয়া চালুর এক মিনিট পরেই দেখা যায় সব শেষ।

জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, গত বছরের কালোবাজারি মামলা আদালতে অভিযোগপত্রসহ দেওয়া হয়েছে। আমরা মাঝেমাঝে কালোবাজারিদের ধরতে পারি, কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করে। তবুও জিআরপি তৎপর আছে।

স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, তার জানা মতে এখন স্টাফদের কেউ কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত নন। যারা আগে অভিযুক্ত ছিলেন, তারা আর এখানে কর্মরত নন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত অনেকেই অনলাইনে টিকিট কিনে পরে না গিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। আবার কালোবাজারিরা অন্যদের এনআইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কেনে। ফলে একই টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি হয়।