Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সারাদেশে চলছে ৫ হাজার সেতুর কাজ

  • বর্ণা তারানা
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৯২ জন দেখেছেন

পাঁচগাঁওয়ের সাদুল্যা সেতু

মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার হাসাইল সড়ক। এলজিইডির ব্যস্ত এই সড়কে প্রতিদিন ছোটবড় প্রায় ৩ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কের উপরে ৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি সেতু। একটির নাম রংমেহের সেতু, অন্যটি সাদুল্যা সেতু। রংমেহের তিনরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরও সেতু দুটি ভেঙেচুরে একাকার ছিল। রেলিং ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

গত নভেম্বরে সেতু দুটি মেরামত সিংহভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন অবাধে যান চলাচল করছে। শুধু মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলা নয়, সারাদেশের ৬১টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এরকম সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। সেই সাথে নতুন সেতু নির্মাণ কাজও চলছে। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। মানুষ হবে উপকৃত। এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেসের আওতায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সারাদেশের ৬১টি জেলায় প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেসের আওতায় রয়েছে দেশের ৪৬৬টি উপজেলা। এসব উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার সেতু ছোট বড় সংস্কার ও নতুন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সংস্কার করা হবে ৮৫ হাজার মিটার। যার মধ্যে ছোট সংস্কার (মাইনর মেইনটেনেন্স) ৬০ হাজার মিটার এবং বড় সংস্কার (মেজর মেইনটেনেন্স) ২৫ হাজার মিটার। পুনর্বাসন করা হবে ২৪ হাজার মিটার। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের সুবিধার্ধে প্রশস্ত করা হবে ৫ হাজার মিটার। প্রতিস্থাপন করা হবে ১০ হাজার মিটার এবং নতুন করে নির্মাণ করা হবে আরও ১০ হাজার মিটার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ জেলায় ৪১৮টি সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর বেশিরভাগই ছোট বড় (মাইনর ও মেজর মেইনটেনেন্স) সংস্কার কাজ।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সারাদেশেই আমাদের প্রকল্পের কাজ চলছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা কাজ করছে। তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আছে। মুখে মাস্ক পরে শ্রমিকরা কাজ করছে। তিনি জানান, মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প এলাকায় পৃথক বাথরুমের ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সেতু তৈরী বা সংস্কারের সময় পরিবেশ দূষণরোধে দিনে-রাতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আছে।

গত নভেম্বরে সরেজমিনে টঙ্গিবাড়ির রংমেহের ও সাদুল্যা সেতু পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শ্রমিকরা তাদের জন্য নির্ধারিত কমলা রঙের পোশক পরিধান করে কাজ করছে। রংমেহের সেতুতে কাজ করছিলেন তোফায়েল নামের একজন শ্রমিক। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেতু মেরামতের কাজ করি। স্বাস্থ্যবিধি বলতে এখন যে সব নিয়ম মানতে হয় তার সবই মেনে চলতে হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আছে। মুখের মাস্কও ঠিকাদার দিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা কর্মস্থলেই বাথরুমের ব্যবস্থা আছে। সেতুর ঢালেই দেখা গেল পুরুষ ও মহিলাদের জন্য টিন দিয়ে পৃথক বাথরুম নির্মাণ করা হয়েছে। পাশেই পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। সেখানে বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

ক্ষুদে ব্যবসায়ী করিম ব্যাপারীর বাড়ি রংমেহের সেতুর কাছেই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সেতুটি ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। সেতুতে এক সাথে দুটো গাড়ি পারতো না। ইজিবাইক চলার সময় যাত্রীরা আতঙ্কে থাকতো, না জানি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যানবাহন খুব সাবধানে পারাপার হতো। অনেক সময় একটা দুটা করে যানবাহন সেতুতে উঠতে গিয়ে পেছনে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হতো। সেতুটি মেরামতের পর যানবাহন অবাধে চলাচল করতে পারছে। এখন আর কোনো যানজট হয় না।

অন্যদিকে, একই সড়কে সাদুল্যা সেতুটিও ৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের। এটিও মাইনর মেইনটেনেন্স বা ছোট আকারে মেরামত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পুরাতন সেতুটি রেলিং ভেঙে গিয়েছিল। উপরের ঢালাই ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। টঙ্গিবাড়ি উপজেলা শহর থেকে পাঁচগাঁও এলাকাসহ পদ্মার নদীর পাড়ে যাওয়ার রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ছোট বড় যানবাহন চলাচল করে। এ রাস্তা দিয়ে ভারী ট্রাক, প্রাইভেট কার, মিনিবাস, টেম্পো, ইজিবাইক, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। সেতুটি মেরামতের পর এসব যান চলাচলে সুবিধা হয়েছে। তাতে আগের তুলনায় যাতায়াতের সময় অনেক কমেছে।

সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্প মুন্সিগঞ্জের ফিল্ড রেসিডেন্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মহসিন জামান বলেন, টঙ্গিবাড়ি উপজেলায় ৮টি সেতুর ছোট বড় সংস্কারের কাজ চলছে। তিনি বলেন, সংস্কার কাজের জন্য বিকল্প রাস্তার প্রয়োজন হয় না। এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য লোক নিয়োগ করা থাকে। পরিবেশ দূষণে প্রকল্প এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আছে বলে তিনি জানান।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সারাদেশে চলছে ৫ হাজার সেতুর কাজ

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২

মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার হাসাইল সড়ক। এলজিইডির ব্যস্ত এই সড়কে প্রতিদিন ছোটবড় প্রায় ৩ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কের উপরে ৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি সেতু। একটির নাম রংমেহের সেতু, অন্যটি সাদুল্যা সেতু। রংমেহের তিনরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরও সেতু দুটি ভেঙেচুরে একাকার ছিল। রেলিং ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

গত নভেম্বরে সেতু দুটি মেরামত সিংহভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন অবাধে যান চলাচল করছে। শুধু মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলা নয়, সারাদেশের ৬১টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এরকম সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। সেই সাথে নতুন সেতু নির্মাণ কাজও চলছে। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। মানুষ হবে উপকৃত। এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেসের আওতায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সারাদেশের ৬১টি জেলায় প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেসের আওতায় রয়েছে দেশের ৪৬৬টি উপজেলা। এসব উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার সেতু ছোট বড় সংস্কার ও নতুন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সংস্কার করা হবে ৮৫ হাজার মিটার। যার মধ্যে ছোট সংস্কার (মাইনর মেইনটেনেন্স) ৬০ হাজার মিটার এবং বড় সংস্কার (মেজর মেইনটেনেন্স) ২৫ হাজার মিটার। পুনর্বাসন করা হবে ২৪ হাজার মিটার। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের সুবিধার্ধে প্রশস্ত করা হবে ৫ হাজার মিটার। প্রতিস্থাপন করা হবে ১০ হাজার মিটার এবং নতুন করে নির্মাণ করা হবে আরও ১০ হাজার মিটার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ জেলায় ৪১৮টি সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর বেশিরভাগই ছোট বড় (মাইনর ও মেজর মেইনটেনেন্স) সংস্কার কাজ।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সারাদেশেই আমাদের প্রকল্পের কাজ চলছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা কাজ করছে। তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আছে। মুখে মাস্ক পরে শ্রমিকরা কাজ করছে। তিনি জানান, মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প এলাকায় পৃথক বাথরুমের ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সেতু তৈরী বা সংস্কারের সময় পরিবেশ দূষণরোধে দিনে-রাতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আছে।

গত নভেম্বরে সরেজমিনে টঙ্গিবাড়ির রংমেহের ও সাদুল্যা সেতু পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শ্রমিকরা তাদের জন্য নির্ধারিত কমলা রঙের পোশক পরিধান করে কাজ করছে। রংমেহের সেতুতে কাজ করছিলেন তোফায়েল নামের একজন শ্রমিক। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেতু মেরামতের কাজ করি। স্বাস্থ্যবিধি বলতে এখন যে সব নিয়ম মানতে হয় তার সবই মেনে চলতে হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আছে। মুখের মাস্কও ঠিকাদার দিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা কর্মস্থলেই বাথরুমের ব্যবস্থা আছে। সেতুর ঢালেই দেখা গেল পুরুষ ও মহিলাদের জন্য টিন দিয়ে পৃথক বাথরুম নির্মাণ করা হয়েছে। পাশেই পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। সেখানে বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

ক্ষুদে ব্যবসায়ী করিম ব্যাপারীর বাড়ি রংমেহের সেতুর কাছেই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সেতুটি ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। সেতুতে এক সাথে দুটো গাড়ি পারতো না। ইজিবাইক চলার সময় যাত্রীরা আতঙ্কে থাকতো, না জানি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যানবাহন খুব সাবধানে পারাপার হতো। অনেক সময় একটা দুটা করে যানবাহন সেতুতে উঠতে গিয়ে পেছনে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হতো। সেতুটি মেরামতের পর যানবাহন অবাধে চলাচল করতে পারছে। এখন আর কোনো যানজট হয় না।

অন্যদিকে, একই সড়কে সাদুল্যা সেতুটিও ৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের। এটিও মাইনর মেইনটেনেন্স বা ছোট আকারে মেরামত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পুরাতন সেতুটি রেলিং ভেঙে গিয়েছিল। উপরের ঢালাই ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। টঙ্গিবাড়ি উপজেলা শহর থেকে পাঁচগাঁও এলাকাসহ পদ্মার নদীর পাড়ে যাওয়ার রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ছোট বড় যানবাহন চলাচল করে। এ রাস্তা দিয়ে ভারী ট্রাক, প্রাইভেট কার, মিনিবাস, টেম্পো, ইজিবাইক, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। সেতুটি মেরামতের পর এসব যান চলাচলে সুবিধা হয়েছে। তাতে আগের তুলনায় যাতায়াতের সময় অনেক কমেছে।

সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্প মুন্সিগঞ্জের ফিল্ড রেসিডেন্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মহসিন জামান বলেন, টঙ্গিবাড়ি উপজেলায় ৮টি সেতুর ছোট বড় সংস্কারের কাজ চলছে। তিনি বলেন, সংস্কার কাজের জন্য বিকল্প রাস্তার প্রয়োজন হয় না। এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য লোক নিয়োগ করা থাকে। পরিবেশ দূষণে প্রকল্প এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আছে বলে তিনি জানান।