Dhaka বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচার ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই : ডা. জাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বুধবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আজহার শফিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তার মন্তব্য, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত দলটির কার্যক্রম সচল হওয়া বা নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে মোটেও ভীত নয় গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিরা।

ডা. জাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জনগণকে নিতে হবে। গণহত্যা, লুটপাট, নির্যাতন ও সব ধরনের অপকর্মের জন্য পতিত আওয়ামী লীগকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয় হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘পতিতদের নিয়ে মোটেও ভীত নয় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীরা।’

তিনি বলেন, বিএনপি কখনোই কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সরকারি বা আদালতের সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী নয়। কে রাজনীতিতে থাকবে আর কে থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক একমাত্র জনগণ।

তিনি আরো বলেন, তবে, দেশে যারা গুম, এনকাউন্টার, আয়নাঘরের মতো ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ তৈরি করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা বিএনপির প্রধান লক্ষ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু একাত্তরের বিষয় নয়, গত ১৫ বছরে যারা ‘দিনের ভোট রাতে চুরি’ করেছে, তাদেরও অনুশোচনা করতে হবে। জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা করা বা না করার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে।

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারে এমন কোনো আশঙ্কা বিএনপি করে না মন্তব্য করে ডা. জাহিদ বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ এবং তারা ভীত বা সন্ত্রস্ত নয়।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যদি উনি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ হতেন, তবে মাঠেই রাজনীতি মোকাবিলা করতেন, ৫ আগস্ট উনি পালাতেন না। তার পালানো নিজের প্রতি করা অন্যায়ের কারণে মনের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের একটি সম্ভাবনা রয়েছে, আমরা চাই সেটা হোক। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সুযোগটা আসুক।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অ্যাসেম্বলিতে ১ অক্টোবরকে জাতীয় প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একটা সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। তবে এখন সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু আজও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সরকারি কর্মকর্তাদের বলা হচ্ছে, আপনাদের আর প্রয়োজন নেই। অথচ আমাদের দেশের প্রধান উপদেষ্টার বয়স কত? আমরা যখন কাউকে বলে দিই যে আপনার আর প্রয়োজন নেই, তখন তার মনোজগতে কি প্রভাব পড়ে, সেটা আমরা একবারও ভাবি না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পর সবার পাশাপাশি একজন সত্তর বছর বয়স্ক মানুষকেও চাপাচাপি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। অথচ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রিতে বলা হয়, তুমি একজন সিনিয়র পার্সন, তোমার টিকিট কাটার দরকার নেই। আমাদের দেশে কিন্তু এই প্র্যাকটিসটা নেই।

জাহিদ হোসেন বলেন, আজকের যারা তরুণ আছেন, তাদেরও কিন্তু বয়স বাড়ছে, তারাও একদিন বৃদ্ধ হবেন। আজ যারা তরুণ উপদেষ্টা রয়েছেন, আপনারা যেভাবে কথা বলেন, এই ভাষায় কথা বলা শক্তি কিন্তু কালকের দিনে নাও থাকতে পারে। সুতরাং তরুণ এবং বৃদ্ধ, এই দুই জেনারেশনের মধ্যে যদি সমন্বয় ঘটানো না যায়, তাহলে আমরা সার্ভাইব করতে পারবো না। যে জাতি তার উত্তরাধিকারকে সম্মান করে না, সে জাতি টিকে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, আমাদের ভাবতে হবে এই সমাজটা আমাদের সবার। এই ভাবনাটা যদি না আসে, তাহলে ইনক্লুসিভনেস তৈরি হবে না। আর তা না হলে সমাজে সাস্টেনেবিলিটি আসবে না। সমাজের প্রবীণ মানুষদের জন্য আলাদা উইন্ডো তৈরি করার জন্য একটা চিন্তা দরকার। তাদের জন্য সামান্য বাজেট রাখা কষ্টকর কোনো বিষয় নয়। প্রবীণরা যেন সমাজের বোঝা না হয়, সেই বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। তারা যেন সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাস করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফর বাংলাদেশ মোহাম্মদ মশিহুর রহমান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, আজহার শফিক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিচার ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই : ডা. জাহিদ

প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বুধবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আজহার শফিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তার মন্তব্য, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত দলটির কার্যক্রম সচল হওয়া বা নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে মোটেও ভীত নয় গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিরা।

ডা. জাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জনগণকে নিতে হবে। গণহত্যা, লুটপাট, নির্যাতন ও সব ধরনের অপকর্মের জন্য পতিত আওয়ামী লীগকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয় হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘পতিতদের নিয়ে মোটেও ভীত নয় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীরা।’

তিনি বলেন, বিএনপি কখনোই কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সরকারি বা আদালতের সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী নয়। কে রাজনীতিতে থাকবে আর কে থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক একমাত্র জনগণ।

তিনি আরো বলেন, তবে, দেশে যারা গুম, এনকাউন্টার, আয়নাঘরের মতো ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ তৈরি করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা বিএনপির প্রধান লক্ষ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু একাত্তরের বিষয় নয়, গত ১৫ বছরে যারা ‘দিনের ভোট রাতে চুরি’ করেছে, তাদেরও অনুশোচনা করতে হবে। জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা করা বা না করার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে।

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারে এমন কোনো আশঙ্কা বিএনপি করে না মন্তব্য করে ডা. জাহিদ বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ এবং তারা ভীত বা সন্ত্রস্ত নয়।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যদি উনি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ হতেন, তবে মাঠেই রাজনীতি মোকাবিলা করতেন, ৫ আগস্ট উনি পালাতেন না। তার পালানো নিজের প্রতি করা অন্যায়ের কারণে মনের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের একটি সম্ভাবনা রয়েছে, আমরা চাই সেটা হোক। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সুযোগটা আসুক।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অ্যাসেম্বলিতে ১ অক্টোবরকে জাতীয় প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একটা সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। তবে এখন সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু আজও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সরকারি কর্মকর্তাদের বলা হচ্ছে, আপনাদের আর প্রয়োজন নেই। অথচ আমাদের দেশের প্রধান উপদেষ্টার বয়স কত? আমরা যখন কাউকে বলে দিই যে আপনার আর প্রয়োজন নেই, তখন তার মনোজগতে কি প্রভাব পড়ে, সেটা আমরা একবারও ভাবি না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পর সবার পাশাপাশি একজন সত্তর বছর বয়স্ক মানুষকেও চাপাচাপি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। অথচ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রিতে বলা হয়, তুমি একজন সিনিয়র পার্সন, তোমার টিকিট কাটার দরকার নেই। আমাদের দেশে কিন্তু এই প্র্যাকটিসটা নেই।

জাহিদ হোসেন বলেন, আজকের যারা তরুণ আছেন, তাদেরও কিন্তু বয়স বাড়ছে, তারাও একদিন বৃদ্ধ হবেন। আজ যারা তরুণ উপদেষ্টা রয়েছেন, আপনারা যেভাবে কথা বলেন, এই ভাষায় কথা বলা শক্তি কিন্তু কালকের দিনে নাও থাকতে পারে। সুতরাং তরুণ এবং বৃদ্ধ, এই দুই জেনারেশনের মধ্যে যদি সমন্বয় ঘটানো না যায়, তাহলে আমরা সার্ভাইব করতে পারবো না। যে জাতি তার উত্তরাধিকারকে সম্মান করে না, সে জাতি টিকে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, আমাদের ভাবতে হবে এই সমাজটা আমাদের সবার। এই ভাবনাটা যদি না আসে, তাহলে ইনক্লুসিভনেস তৈরি হবে না। আর তা না হলে সমাজে সাস্টেনেবিলিটি আসবে না। সমাজের প্রবীণ মানুষদের জন্য আলাদা উইন্ডো তৈরি করার জন্য একটা চিন্তা দরকার। তাদের জন্য সামান্য বাজেট রাখা কষ্টকর কোনো বিষয় নয়। প্রবীণরা যেন সমাজের বোঝা না হয়, সেই বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। তারা যেন সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাস করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফর বাংলাদেশ মোহাম্মদ মশিহুর রহমান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, আজহার শফিক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।