গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের জৈনাবাজার-কাওরাইদ আঞ্চলিক সড়কের মাটিকাটা নদীর ওপর নির্মিত চৌধুরী ঘাট এলাকার বেইলি সেতুর পাটাতন খুলে গেছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে এ ঘটনার পর সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের অন্তত দশ গ্রামের বহু মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা শনিবার সকালে ওই সেতু পরিদর্শন করেছেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, সেতুর পাটাতন ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট। অতিরিক্ত ওজনের মালবাহী যানবাহন পার হওয়ায় পাটাতন ধসে পড়ে। ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে চলাচল না করে, সেজন্য লাল পতাকা টানানো হয়েছে। যাত্রী ও যানবাহন চালকদের বিকল্প পথে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রায়হান আকন্দ বলেন, সেতুটি অন্তত ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। জৈনাবাজার, কাওরাইদ, বরমী, বলদীঘাট, গোলাঘাট, পাশের ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাইথল, ভালুকা উপজেলার উড়াহাটি এলাকার বাসিন্দারা এ সেতু ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাসহ হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে।
সেতুর পাটাতন ভেঙে পড়ায় এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
গফরগাঁও উপজেলার পাইথল থেকে পরিবার নিয়ে অটোরিকশাযোগে জৈনাবাজার যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে বেইলি সেতুতে ওঠার আগে কাওরাইদ চৌধুরীপাড় এলাকায় আটকা পড়েন তিনি।
তিনি বলছিলেন, কখন সেতু মেরামত হবে বলতে পারছেন না কেউ। পরিবার নিয়ে গরমের মধ্যে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হল।
ভালুকা উপজেলার উড়াহাটি এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে এসে আটকা পড়া চালক জব্বার মিয়া বলেন, এখানে এসে দেখি সেতু ভাঙা। বড় ট্রাক নিয়ে বিকল্প সড়কেও যেতে পারছি না। এমসি বাজার এলাকায় পণ্যের মালিক বারবার কল দিচ্ছেন। দ্রুত পৌঁছাতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।
কাওরাইদ কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, সেতুটি জরাজীর্ণ। শিগগিরই সেখানে সেতু নির্মাণ করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
শ্রীপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সেতুর পাটাতন ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট। অতিরিক্ত ওজনের মালবাহী যানবাহন পার হওয়ায় পাটাতন ধসে পড়ে। ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে চলাচল না করে, সেজন্য লাল পতাকা টানানো হয়েছে। যাত্রী ও যানবাহন চালকদের বিকল্প পথে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
শ্রীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদ আহমেদ বলেন, ‘সেতুটি স্টিল বিট দিয়ে তৈরি। এর উপাদানগুলো সহজে পাওয়া যায় না। যদি আমরা গাজীপুরে উপাদানগুলো পাই তাহলে আনুমানিক তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে। আর যদি গাজীপুর জেলা অফিসে না থাকে তাহলে কোন জেলায় আছে খোঁজ নিতে হবে। সেখান থেকে এনে তারপর কাজ করতে হবে। সেতু সংস্কারের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, সেতুটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনও যান সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারতেছে না।
ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্মাণ কাজ আটকে আছে বলে জানান এ প্রকৌশলী।